কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

০৫ অমিতাভ প্রহরাজ

লেখাজ অফ ওয়াসেপুর
অমিতাভ প্রহরাজ



ইজমিক ওয়ান / লেখা সৃষ্টিফিকেশান ও মিষ্টি ফিকেশান-

কবিতার বাবুর্চি থাকে, পাচক থাকে, রাঁধুনি থাকে, শেফ থাকে, ময়রাও থাকে। কলমাক্রান্ত একটি মানুষই বিষ্ণুর নানা রূপের মতো কখনো বাবুর্চি, কখনো শেফ, কখনো ময়রা, এরকম নানা অবতারে যাতায়াত করে আর লেখার মধ্যে নানান প্রকৃতি ঢোকে। ঘটনাচক্রে দেখা যায় এই নানা অবতারের মধ্যে কোনো একটি অবতার নেতা হয়ে বিচরণ করে। লেখাও সেরকম কখনো সিজলার, কখনো আলু পোস্ত, কখনো কাটলেট হয়ে ওঠে। ইদানীং, ইদানীং নয় এই প্রবণতার সূত্রপাত আশির জয় গোস্বামীর হাত ধরে (সত্তরের নয়), ময়রা অবতার একচ্ছত্রাধিপতি হয়ে উঠেছে। প্রথমে যা ছিল শেষ পাতের জিনিস, ক্রমে ক্রমে সেই মিষ্টি ভাত-ডালেরও জায়গা কেড়ে নিয়েছে। ভালো কবিতা মানেই মিষ্টি কবিতা এই ফর্মূলাতে না পৌঁছলেও, মিষ্টি কবিতা মানেই ভালো কবিতা এই হাইপথেসিস, ল হয়ে গেছে। লেখায় মিষ্টত্ব প্রদান "লিরিকাল" ইত্যাদি গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিক শব্দের ব্লাউজ-পেটিকোট পরালেও এখন নির্লজ্জ ভাবে উলঙ্গ হয়ে গেছে। বাংলা ভাষায় লেখাকে মিষ্টি করে তোলা একটা নেশার মতো। এই নেশা মধ্যযুগের এ্যালকেমিস্টদের মতো। বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে মিশিয়ে দেখার মতোই এখানে একরকম শব্দের সাথে আরেকরকম মিশিয়ে একটা চিনিভাব গড়ে উঠছে কিনা দেখা, কোরেক্সের চেয়েও মারাত্মক। 'নরম' এর সাথে 'রমণী', 'দ্রাঘিমা শেখানো'', ''নির্জন বেহালাবাদক'' এই প্রবণতা প্রকটভাবে দেখায়।

বলা হতে পারে লেখা মিষ্টি হলে ক্ষতি কি?? ক্ষতি হচ্ছে অন্যভাবে। স্বাদের মতো একটা লেখার তো গন্ধ, স্পর্শ, আওয়াজ, রূপ এইসবও আছে। এবার এই মিষ্টি করার নেশা এমনভাবে গিলে খাচ্ছে একটা লেখাকে, যে লেখা মানেই লেখার স্বাদ, এরকম বিপজ্জনক গোঁড়ামি গেঁড়ে বসছে। বক্তব্য কবিতার নেই, কোনোকালে ছিলও না। কিন্তু স্বাদ ছাড়া বাকি প্রাণধর্মগুলোতো ছিল। আজ আমরা লেখার গন্ধ ভুলতে বসেছি। চলনটাই এমন হয়ে যাচ্ছে যে প্রবল কবিটি পার্কার দাঁতে করে ভাবছে, ভাবছে... সামনে ফাঁকা কাগজ... হঠাৎ পাশের নিমফুল গাছ (নিমগাছ তো নিমফুল গাছও) থেকে টুপুস করে খসে পড়লো "তোমার গভীর ফুল"... ব্যাস ভাবনার বাথটাব থেকে ন্যাংটো মনের ইউরেকা বলে দৌড়... আবার 'মিথ' লেখার আগে ব্রেক... মিথকে নতুন করলে একটা জম্পেশ ব্যাপার হয় বটে, কিন্তু কি যেন একটা মিসিং, খচখচ খচখচ... হঠাত, আরে নতুনকে নবীন করা হয় যদি!!... "নবীন মিথ", কি কিউট, কি কিঊট... এবার একটি গাছের পাতা, বটপাতা, কুলেখাড়া পাতা হলে চলে?? "পাইনপাতা" হতেই হবে, আর তোমাকে জানালা পরিয়ে দিলে তার থেকে মিষ্টি কিছু হয়??!!!

মুশকিলটা কোথায় হয়, কারোর লেখা পড়ে আমি তাঁর হার্ট আর ব্রেনের সাথের জমাটি আড্ডা মেরে সময় খুন করতে চাই... তার জন্য চাই ওই দুটির মর্ম অবধি প্রবেশের অনুমতি আর দিলখোলা আপ্যায়ন... এগুলো তে হয় কি, ওই মিষ্টত্ব নির্মাণের ফলে, হৃদয় ও মেধা, দুই বান্দায় চা বিস্কুট খাইয়ে বাইরের ঘর থেকে বাই বলে দেয়... আর আমি একটা কবিতার শেষে একটা মিষ্টি গুড-বাই চুষতে চুষতে বাড়ি ফিরি।



ইজমিক টু / বিষয়-

কবিতার বিষয় অনেকটা গায়কের গায়কীর মতো... তুমি বলে কোনোদিন বোঝাতে পারবে না, যে অমুক গায়কীটা এইরকম, প্রথমে চড়ায়, তারপর খাদে, ইত্যাদি, ইত্যাদি... একে ট্যাঞ্জিবল করা অসম্ভব... একমাত্র উপায়ে যা তুমি বোঝাতে পারো সেটা হলো ওই গায়কীটাকে ভেঙিয়ে বা নকল করে... তাতেও পুরোটা বোঝাতে পারবেনা, এইটুকু বলতে পারবে যে 'বিষয়টা হলো অনেকটা এইরকম'... কবিতার বিষয় একটা কবিতা শুরু করার সময় শুরু হয় আর শেষ হলে নিরালম্ব বায়ূভূত হয়ে মিশে যায়... যা পড়ে থাকে তা হলো একটা বিষয় ঘটার রেশ...... মুশকিল হলো, আমরা ভাবি যে আমরা কবিতা লিখি, বা অনেকে আবার দিব্যদৃষ্টি চিবিয়ে বলেন 'কবিতা হয়ে যায়', কারোর কারোর আবার 'কবিতা পায়' (তাদের জন্যই সুলভ সংস্করণ বেরোয় কবিতার), বেসিক্যালি কবিতা তো এই মহাবিশ্বের বাইরের কোন জীব নয়... মহাবিশ্ব এক অফুরন্ত ঘটনা সম্ভার... চেতন, অবচেতন, অতিচেতন, অধিচেতন, সমস্ত রকমভাবে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে সম্প্রসারিত চেতনার দ্বারা যে নাগালমূলক বিশ্ব, তাতে নিরন্তর ঘটমান ঘটনা পরম্পরার কিছু কিছু বিশেষ অংশই তুলে আনি কবিতা রূপে... কবিতা আর কিছু নয়, ওই যে সর্বোচ্চ চেতনার নাগালমূলক বিশ্বের লক্ষ কোটি ঘটনার মধ্যে কয়েকটি... ফলে আমার মনে হয় চতুর্দিকে কবিতার স্রোত ঘটে চলেছে যার মধ্যে আমরা ডুবে আছি, একজন কবির কাজ এই ক্রমাগত ঘটে চলা কবিতগুলির মধ্যে নিজের কবিতাটি খুঁজে নেওয়া... কবিতাটি আছেই, বা বলা ভালো ঘটছেই, কবি শুধু তাকে খুঁজে পাচ্ছেন... ওই শূন্য থেকে কবিতা তৈরী করা জাদুকরের ডিম আনার মতোই ফক্কিকারি... আর গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে কবির 'নিজের' কবিতা খুঁজে পাওয়া... আমার সামনে ঘটে চলা যে ঘটনা কবিতা নয় , সেটা তোমার কাছে কবিতা হতেই পারে... তাই 'সামনে ঘুমায় ছোটবোন' এর মতো অতি সাধারণ ঘটনার মধ্যেই ভাস্কর তার কবিতা খুঁজে পেয়ে যান... আর এই 'নিজে'টা আসে কোত্থেকে? 'নিজের ভাষা' থেকে... ওইজন্যই নিজের ভাষাটি খুঁজে পাওয়া সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান রিকোয়ারমেন্ট...

Unlike · · Unfollow Post · Share · 21 hours ago near Calcutta

Seen by 52

Arjun Bandyopadhyay এটা সম্পূর্ণই Amitava Praharajএর মনে হওয়া। আমার নিজের এরমটা কখনোই মনে হয় না। চারপাশে কবিতার স্রোত বয়ে যাচ্ছে? কবিতা হয়েই আছে চারপাশে? আচ্ছা? ভারি মজা তো!! তাহলে কবিতার উপাদান কাকে বলে?

15 hours ago · unlike · 1

Arjun Bandyopadhyay আমি কখনোই আমার চারপাশে কবিতা ছড়িয়ে আছে—এরকমটা দেখতে পাইনা। ছড়িয়ে আছে কবিতার উপাদান, matter.যাকে আমি সংবেদনে পাই। এ তো ইন্দ্রিয় উপাত্ত। কবিতা নয়। আত্মা যেমন স্বরূপতঃ নিষ্ক্রিয়, নির্গুণ, চৈতন্যহীন; ভাবলে অবাক লাগে, চৈতন্য আত্মার আগন্তুক ধর্ম। তেমনি, সংবেদনে পাওয়া ইন্দ্রিয় উপাত্ত কবিতার অপরিহার্য উপাদানের অন্যতম মাত্র। এর বিন্যাস চাই। চৈতন্য চাই। আমার বুদ্ধি, জ্ঞান, বোধশক্তি সেই উপাদানে আকার বা form দেয়।

15 hours ago · unlike · 2

Amitava Praharaj অর্জুন, কবিতা ঘটে চলে, নিজের কবিতা খুঁজে নিতে হয়, উপাদান লাগে যখন সেই কবিতাটিকে আমি ট্যাঞ্জিবল করছি... পাঠযোগ্য করছি... একটা ঘটনাকে তো নিয়ে খাতার পাতায় বা স্ক্রিনে বসানো যায়না... তাকে পুনর্গঠন করা হয়, কেউ মানে-ওয়ালা শব্দ দিয়ে, কেউ ধ্বনি দিয়ে, কেউ চিত্রকল্প দিয়ে, আরো কত কি... উপাদান আসে তখন... এটা সংবেদন নয়, এটা বেদন... সংবেদন কখন ঘটে গেছে তুই কি করে জানবি?? তুই সংবেদনের পর সংবেদনশীল ও সংবেদনের আগে সংবেদনপ্রবন হয়ে পড়বি মাত্র...

15 hours ago · Like · 2

Arjun Bandyopadhyay কবিতার tangible করা অসম্ভব। কবিতা non verbal medium.

15 hours ago · Like · 1

Amitava Praharaj তাহলে খাতার পাতায় যেটা লিখেছিস ওটা কি?যেটাকে দেখা যাচ্ছে, ছোঁয়া যাচ্ছে... কবিতার ফোটোগ্রাফ?? তা বললে সেই কবিতার ফোটোগ্রাফ বানানোর জন্য উপাদান লাগে... কবিতা তো intangible সবাই জানে... এবং intangible বলেই তো তাকে উপাদান দিয়ে ক্রিয়েট করা যায়না...

15 hours ago · Like · 1

Amitava Praharaj বলছো নন ভার্বাল, ইনট্যাঞ্জিবল জিনিস... আবার বলছো উপাদান দিয়ে বানাবে... কি করে সম্ভব??কয়েকটা ট্যাঞ্জিবল জিনিস দিয়ে ইনট্যাঞ্জিবল জিনিস বানানো??? এটা তো ফ্যালাসি...

14 hours ago · Like · 2

Amitava Praharaj আর যদি জিনিসগুলি ইনট্যাঞ্জিবল হয়, তাহলে তা উপাদান হয় কি করে????

14 hours ago · Like · 2

Amitava Praharaj ট্যাঞ্জিবল টু ইনট্যাঞ্জিবল যদি কোনভাবে ঘটেও তাতে তার মাঝখানে বাধ্যতামূলকভাবে একটা ফেনোমেনন থাকবেই... বস্তু আলোর গতিবেগের বর্গ গতিতে ছুটে শক্তি হয়ে যাচ্ছে... ইনট্যাঞ্জিবল শক্তি যে, তার সাথে তার অস্তিত্বের অংশ হয়ে ওই 'ছুটে চলা'র মতো ঘটনা লেগে আছে... ওকে আলাদা করা অসম্ভব...

14 hours ago · Like · 1

Amitava Praharaj এ তো উপনিষদের কথা, যে বস্তু তুমি দেখছো, তা বস্তু নয়, বস্তুর অস্তিত্বের প্রক্রিয়া মাত্র...

14 hours ago · Like · 1

Amitava Praharaj প্রসঙ্গতঃ আমার নিজেরই করা কমেন্ট একটা কোট করছি (ওঃ নিজে নিজের কোটেশান দিচ্ছি, এতো যে সে হনু নয়, মহা হনুম্যান)... "এইসব লেখাগুলো রিদমিক তো, একটা দৌড়ের মতো... একটা সঠিক দৌড় যেমন সঠিক জায়গায় শেষ হয় আর সঠিক ঘামেরা জন্মায় তারপর, যেন সদ্য অতীত হওয়া গতিবেগ ফোঁটা ফোঁটা জমে উঠছে, আর আগামীকালের গতিবেগ ঈর্ষাতুর চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে... এই লেখায় সেই ব্যাপারটি অপূর্ব ভাবে ঘটেছে... কবিতাটা পড়া শেষ হলে কবিতার ঘাম জমে মনে... এমনই সজল সে ঘাম যে এর পরের কবিতাটি, মানে যেকিনা না-লেখা, এই ঘটে যাওয়া কবিতার প্রতি ঈর্ষা রেখে শুরু হয়...... এর থেকে ভালো কি পেতে পারে এই আমাদের মতো লেখালোকেরা???"





ইজমিক-থ্রি / লেখা আপকে হ্যায় কৌন-

(প্রথমে ঝগড়াঝাটি/তারপর দাঁতকপাটি/ডাল-ভাত-শব্দভাতে)

এরপর, এক যে ছিল অর্জুন আর এক যে ছিল প্রশ্ন....

Arjun Bandyopadhyay খাতার পাতায় যেটা লিখছি তা শব্দ (word) । সেটা মাধ্যম। হরিপ্রসাদ যখন বাঁশি বাজান তখন কি বাজান? স্বরলিপিই তো বাজান। এক বা বিবিধ স্বরের সমষ্টি হল সেই সুর যা তুমি আমি শুনছি। সেই সুর কি স্পর্শযোগ্য? Tangible? না, যেটা বলেছি সেটা উপনিষদের কথা নয়, ওটা বৌদ্ধ দর্শনের কথা

অর্জুন, স্বরলিপি আর সুরের যে পার্থক্যের কথা তুই বলছিস, সেটার সমানুপাতে শব্দ আর কবিতার পার্থক্য আসেনা, আসে ধ্বনি বা আওয়াজ আর শব্দের পার্থক্য... শব্দের মূল উৎস ধ্বনি... আসলে ভাষা নিয়ে একটা প্রবল ভুল মিথের জন্ম হয় একটা আমাদের একটা বেসিক শেখানোর ত্রুটি থেকে... আমাদেরকে শেখানো হয় প্রথমে বর্ণমালা, তারপর এক একটা বর্ণ দিয়ে বানানো বহুবর্ণের শব্দ... তারপর বিভিন্ন শব্দ দিয়ে একটি বাক্য... এবার মজার ঘটনা হলো, উৎপত্তির দিক দিয়ে প্রথম জন্ম নেয় বাক্য... নোট ইট ডাউন, এখনো মনুষ্যেতর প্রাণীরা যখন কম্যুনিকেশন করে... হাতি, বাঘ, হনুমান, সিংহ ... ওরা বাক্য দিয়ে কম্যুনিকেশন করে... এবার স্টেপ বাই স্টেপ একটা জায়গায় আসি... বাক্য কি বস্তু? উল্কা? ইঁদুরের কলদাঁত? উটের আলজিভ? জিরাফের হানিমুন? ব্ল্যাক হোল কে রেপ? যেকোন গজগোবিন্দ হোক কি মাধবীলতা, এখানে এসে জলহস্তী টু জলজিরা টাইপের লিমিট যার মধ্যে এনিথিং এর বাড়ি, ভেবে ফেলবার থ্রেট দেবে... কিন্তু না, বাক্য বলতে এ্যান্থ্রোপলজিস্ট এবং লিঙ্গুইস্টরা ক্লিয়ারলি একটা জিনিস বলে দিয়েছেন, একটি কম্যুনিকেশন ইউনিট যার মধ্যে মিনিমাম একটি ক্রিয়া, একটি সাবজেক্ট ও একটি অবজেক্ট আছে... হরিণের পাল চরছে, সেই হালুমহুলুম ভালোবাসার বোঁটকা গন্ধ এলো হাওয়ায়, একটা কাকর হরিণ ডাকলো, "ওই কামড়ুটে (ধরে নিলাম কাকর হরিণ কামড়ুটে জাতীয় শব্দ করে বাঘ ডিনোট করে) কাছে এসেছে"... এই ডাক এলো মদ্দা কাকর হরিণ থেকে মাদী কাকর হরিণের দিকে... এই কমপ্লিট ইউনিটটি একটি বাক্য যার মধ্যে একটি ক্রিয়াবাচক শব্দ (সাউন্ড) 'এসেছে' , একটা সাবজেক্ট সাউন্ড (কামড়ুটে) আর একটি অবজেক্ট সাউন্ড (যা সাইলেন্ট বা উহ্য কারন অভ্যেস বা নিয়মের থেকে সেটা জানা)... এই সাউন্ড ইউনিটগুলিকে বলে ফোনিম (phoneme)... আদিম মানুষের কম্যুনিকেশান ছিল এই ফোনিম একত্র করে তৈরী বাক্য... যা কুকুর, বিড়াল, ডলফিনেরও পদ্ধতি... এই ফোনিম এর উৎপত্তি এক একটি ক্রিয়া বা ঘটনার যে ফোনেটিক্স বা সাদা বাংলায় আওয়াজ, তাকে নকল করে... হোমো পিথেকানথ্রোপাস অবধি ফোনিম চলছে... হোমো ইরেক্টাসে এসে ঘটলো এক লীলাবতী টাইপের ঘটনা... ঠিক যেমন একটা পুচকে বাচ্চা ছিপি আর শিশি নাড়াচাড়া করতে করতে আচমকা শিশিতে ছিপি লাগিয়ে ফেলে, ফেলে বিস্তর অবাক হয়ে যায়, ফের বহু কসরৎ করে খুলে ফেলে, ফের লাগায়, তখন তার কাছে খোলা বা বন্ধের কনসেপ্টই ক্রিয়েট হয়নি... একইরকম ভাবে মানুষের জিভ বা লিঙ্গুয়া (lingua) ফোনিম নাড়াচাড়া করতে করতে,হঠাৎ আরেক ধরণের ইউনিট বানিয়ে ফেলে যাকে বলে মরফিম (morpheme)... মন দিয়ে শোন, এই মরফিম তৈরী করাই হয়েছে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা... কারন এখনো অবধি একটি ঘটনা থেকে উদ্ভূত শব্দের (সাউন্ড) মতো শব্দ করে ঘটনাটি বোঝানো বা কম্যুনিকেট করা হচ্ছিল... কিন্তু মরফিম তৈরী হওয়ার পর, (যা জিভ নাড়তে নাড়তে তৈরী করে ফেলেছে কতগুলি ফোনিম দিয়ে) এই প্রথম এলো এমন একটি ফোনেটিক্স যা ঘটনা থেকে উদ্ভূত শব্দের মতো নয়... বুঝতে পারলি কি ঘটলো? মানুষ অজান্তে নিজের ইতিহাসে এ্যাবস্ট্রাকশান ঢুকিয়ে ফেললো... এই মরফিম হচ্ছে আমাদের শব্দ বা ওয়ার্ড তার আপন বাবা..(খিস্তি দিচ্ছিস, পুরো মহাভারত খুলে বসেছি, বুঝতে পারছি, কিন্তু এটার কারন একটা চালু মিথকে ভাঙা)... বিবর্তনের স্তরে মানুষ হলো প্রথম প্রাণী যারা ফোনিম ও মরফিম, এই ডাবল লেয়ার প্যাটার্নিং দিয়ে কম্যুনিকেট করতে শুরু করলো... ফলে মানুষের মধ্যে কম্যুনিকেশানে এই প্রথম একটা জিনিস ভাঙা সম্ভব হলো যা আগে ভাঙা সম্ভব বলে ভাবাই যায়নি... সেটা হলো কনটেক্সট... প্রাণী বাক্য আর মানুষ বাক্যের মধ্যে প্রধানতম পার্থক্য একটা কনটেক্সট এর আওতায়, আর আরেকটা কনটেক্সট এর বাইরে, ফলে মানুষের কাছে ভাষা আছে, প্রাণীদের ভাষা নেই... মূল কথায় ফিরি, সৃষ্টির দিক থেকে দেখতে গেলে দেখবো (ধ্বনি, উদ্ভূত)>বাক্য>শব্দ>বর্ণ>বর্ণের উচ্চারণ (ধ্বনি, আরোপিত)... আর শেখার সময় আমরা শিখি সম্পূর্ণ উল্টো... ফলে একটা নিজস্ব উৎকট দর্শন তৈরী করে ফেলি যে ভার্বাল আর নন ভার্বাল কম্যুনিকাশান, শ্রুত ও অশ্রুত... বেসিক্যালি নন ভার্বাল কম্যুনিকেশান বলে কোন বস্তুর অস্তিত্বই নেই... মহাপণ্ডিত বার্নেটের মতে "verbal communication is a condition for human existence"... এবারে ধীরে ধীরে গুটিয়ে দেখি কি দাঁড়ালো... যে ধ্বনিকে চিনে আমরা শব্দ বা বাক্যর ধ্বন্যাত্মক রূপটিকে আইডেন্টিফাই করি, সেটা আরোপিত ধ্বনি... সেটা বেসিক্যালি উচ্চারণ (ওই ঋক বেদের শুরুতেই, বেদকে শ্রুতি বা অপৌরুষেয় বলার আগেই, প্রথম কন্ডিশান হচ্ছে, তোমার প্রয়োজন বৈখরী বা স্পষ্ট উচ্চারণের ক্ষমতা)... কিন্তু সেই আরোপিত ধ্বনির একটি অংশ কিন্তু উদ্ভূত ধ্বনি যা হার্ডকোর নাছোড়বান্দার মতো ভেতরে ঢুকে থেকে গেছে... এবং যেমন এক একটি বেশ্যার সাথে লেগে থাকে এক একটি বেবফাই-কাহিনী, একই রকম সেই ফোনিম এর টুকরোগুলোর সঙ্গেও, এক একটি ফোনিম সঙ্গে লেপটে আছে এক একটি ঘটনা... ফলে শব্দ কেন, কোন উচ্চারণই ঘটনা বহির্ভূত নয়... তুই উচ্চারণ করছিস 'র', এর ভেতরে হয়তো ঢুকে আছে জলপ্রপাতের ধারে সিংহ ডাকলে যে শব্দ (সাউন্ড) শোনা যায় তার টুকরো... তাই ভার্বাল কম্যুনিকেশানের বাইরে তুই যেতেই পারিস না আর ঘটনার ক্যাঁক থেকে টুঁটি ছাড়াতে পারিস না... যে প্রবল মিথটির কথা বলছিলাম, সেটা হলো অনেকের বিশ্বাস ধ্বনিগত দিক দিয়ে সেই ধ্বনি যে বস্তুকে রেফার করে, তার গুণ লেগে থাকে... মানে, যদি বলি মহিষ, এই মহিষ আওয়াজটার মধ্যে মহিষ বস্তুটির কোনো ধ্বন্যাত্মক গুণ, ধরা যাক মহিষের হেঁচকি, বা মহিষের প্রতি মহিষীর শীৎকার ঢুকে আছে, এবং এই ধারণা থেকেই আমরা শব্দ থেকে মানের চামড়া খুলে নিতে পারলেও, তার ঘরানার চামড়া ছাড়াতে পারিনা... ঠিকই, যে মহিষ শব্দটিকে ভাঙতে ভাঙতে গেলে একসময় একটি ক্রিয়াভিত্তিক উচ্চারণে পৌঁছব (যেকোন ভাষার ক্রিয়াভিত্তিক ফান্ডা তাই বলে, হরিচরণবাবুও তাই বলে গেছেন)... কিন্তু সেই উচ্চারণের মধ্যে যে ঘটনা ঢুকে আছে তার সাথে মহিষের কোনও সম্পর্কই নেই হয়তো... হয়তো তার মধ্যে লুকিয়ে আছে মানুষের প্রথম পাথর বাজানোর মতো ঘটনা ও তার আওয়াজের টুকরো...

বড় বেশি হয়ে গেল বোধহয়... সরি, এ্যাকচুয়ালি এই জায়গাটা না ক্লিয়ার করলে ভবিষ্যৎ সাহিত্যের মূল দুই স্তম্ভ বোধবিজ্ঞান বা কগনিটিভ সায়েন্স আর ভাষাদখলের (ল্যাংগুয়েজ এ্যাকুইজিশান) গল্প বলতে পারবো না... বলতো পারবোনা ওয়ার্ডনেট বা মানুষের মাকড়শাগিরির গল্প... সে অন্য এপিসোডে হবে... থ্যাংকস অর্জুন, তোর জন্য এই জায়গাটা লিখে উঠতে পারলাম অবশেষে...

Amitava Praharaj এইবার পুরো জিনিসটাকে যদি কনসেপচুয়ালি দেখিস "অমর পাঁঠার মতো দাঁড়িয়ে থাকা গঙ্গা" খুব উদ্ভট বা দুরের লাগবেনা... বেসিক্যালি তুই সুপার্ব ঘটকালি করার ভঙ্গিতে বিগলিত... এক ঘটনা সাথে আরেক ঘটনার রাজযোটক খুঁজছিস... বেনারসের উৎকট গন্ধময় বোকা পাঁঠার সমবেত গন্ধ দিয়ে বলা ব্যা-এ্য-এ্য তোকে সেই রাজযোটক টুপ

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন