কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

০৪ উল্কা

অ্যাক্যুরিয়াম
উল্কা



(১)

ঘরের মধ্যে বাড়ি! ওদের জন্য এটাই যথার্থ ব্যঞ্জনা হতে পারে। ওরা মানে আপনাদের তিন ফুট বাই দু’ফুট অ্যাক্যুরিয়ামের একজোড়া সিন্ডারেলা, একটা গোল্ডী, বেশ কয়েকটা মলি, চারটে বিল্লোরানি, আর একটা সার্কবয়। এদের বাড়িতে ফার্নিচার বলতে একটা মাস্তুল ভাঙা জাহাজ আর প্লাস্টার অফ প্যারিসের লাল নীল চালওয়ালা কালো অট্টালিকা। সঠিক ক্যাটেগরিতে নিলামে চড়লে ঠিক কীরকম দাম পাওয়া যায় বা ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে তাদের একদিন বয়েস বারার আগেই, সে সব বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এ সত্ত্বেও ফিস্‌ফাস্‌ বার্তা দেওয়া নেওয়ায় দিন থেকে রাত হয়ে যায় এই মীন রাশিদের। নিঃসন্দেহে আপনার আমার ভাগ্য ঠিক করবার ওরা কেউ নয়। তাই কয়েক মগ জলে বেশ সামলে ফেলা যায়। মগের রঙ যাচাইয়েরও হ্যাপা থাকে না!


(২)

অ্যাক্যুরিয়াম থেকে আপনার শয্যাটি দেখা যায় ফুলস্কেপ সাদা পাতার মতো। রাত বাড়লেই সেই পাতায় ফুটে ওঠে নানান জ্যামিতিক চিত্র। কখনও ত্রিভুজের ভিতর একটি উল্লম্ব সরলরেখা ৭০-৯০ ডিগ্রি কোণে আবার কখনও আয়তক্ষেত্রের কোণ ছাপিয়ে যাওয়া কর্ণ। অঙ্কদেশের উত্তেজিত স্টেপ জাম্প করা গুন ভাগ! একজোড়া সিন্ডারেলা, একটা গোল্ডী, বেশ কয়েকটা মলি, চারটে বিল্লোরানি, আর একটা সার্কবয় অবাক হয়ে এক চোখ মেলে দেখে। ওরা জানে, ঠিক এরপরই আলো নিভে যাবে। ওদের ভেসে থাকতে হবে চোখ কান খোলা রেখে।

(৩)

আপনারা বেড়াল পোষেন না! ওরা বেয়াদপ! ডেটিং-এর নামে মেটিং কল। বছর বছর গণ্ডা গণ্ডা! তাই মা ষষ্ঠীর দোহাই দিয়ে বেড়াল ও আপনাদের পচ্ছন্দ মিলে কাটাকাটি করে হাতে থাকে হয় অথবা নয়। এত কিছুতেও অ্যাক্যুরিয়ামবাসীদের সংখ্যা বাড়েনি বরং পেট ফেঁপে একজোড়া থেকে একটা হয়েছে গোল্ডী। পরিবেশ বদলেছে কিন্তু মীন রাশিদের চূড়ান্ত পরিবেশনা রয়েছে অমলিন। ঠেকনা দিতে ট্রান্সপারেন্ট প্যাকেটে চড়ে এসেছে একটা ফাইটার। কিন্তু ঠেকনা তো দূর, অন্য পরিবেশে অনিমন্ত্রিত অতিথির মতো মান বাঁচাতে সে গিয়ে ঢুকল অট্টালিকায়। দরজা দিয়ে বেরিয়ে রইল কালচে নীল আভা জড়ানো পাখনা। পাত্তা পেল না কারুর থেকে। গোল্ডী গিয়ে ঢুসো মারল ফাইটারকে। বেচারা আরও সিঁধিয়ে গেল ভিতরে।

এখানে জোড়া থাকলেও সংখ্যা বাড়ে না। কারণ এই অ্যাক্যুরিয়ামের প্রত্যেকেই পুরুষ এবং প্রত্যেকেই অজ্ঞানে বা সজ্ঞানে... থাক গে...

(৪)

“শিশে কে ঘর-ও মে দেখো তো, পাত্থর দিলবালে বসতে হে...” গানটা যেন ওদের প্রতি আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। একটা গবেষণা হতেই পারে, কাচের ঘরের কলজে! তবে ওদের তাতে বয়েই যায়, শুধু অ্যাক্যুরিয়ামের দিকে এগোলেই মনে হবে, আবহের গানটা হঠাৎ বদলে গেল! “অ্যা দিলে নাদান... আরজু কেয়া হে জুস্তুজু কেয়া হে!” পটকায় হাওয়ার চাপ কমিয়ে জলের পেট থেকে ভুস্‌ করে উঠে পড়বে ওপরে। ভাবে, ওই বুঝি কেঁচো এলো, যত খুশি তত গেলো! সে গুড়ে বালি বুঝতে সময় লেগে যায় বেশ অনেকটা। তখন কাচের দেওয়ালের ওপারে খাবি খেতে খেতে ওরা চার অক্ষর দু অক্ষর দেয় কিনা কে জানে! দিলেও ক্ষতি নেই অ্যাক্যুরিয়ামের পাম্পটা সর্বদা সচল...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন