কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

সমীর রায়চৌধুরী

চন্দ্রমুখী হোমিও


বন্ধুমহলে সোমেনের পরিচয় ডাক্তারবাবু। সারাক্ষণ হোমিওপ্যাথির বই নিয়ে পড়াশোনা করে। আর হোমিওপ্যাথি ওষুধের নামের মধ্যে আশ্চর্য সব ঝুরোগল্প লুকিয়ে আছে। আজ সকালেই সোমেন আমার কাছে যখন এসেছিল, কথায় কথায় সোমেনকে এই ব্যাপারটা নিয়ে উস্‌কে দিলাম। যে যে-লাইনে আছে, তার প্রাণের কথায় সেখানেই যাদুবাস্তবতা।

--আচ্ছা সোমেন, মানুষের যত অসুখ হয়, তার পরিত্যক্ত বা বর্জন থেকে নিয়ে কোনো ওষুধ আছে কি? এই ধরো যেমন মল পুঁজ থুতু এসব নিয়ে ওষুধ?
সোমেনের মুখ মুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

--হ্যাঁ, আছে তো! যেমন যক্ষা রোগীর পুঁজ থেকে একটা ওষুধ আছে, নাম টিউবারকুলিয়াম। --তা দিয়ে কী হয়? কোন্‌ রোগ সারে?
--এই ধরুন মানুষের পছন্দ, পছন্দও তো একটা রোগ! ধরুন কোনো একজন মানুষের স্ত্রী বেড়াল পুষতে পছন্দ করে, কিন্তু তার স্বামী পছন্দ করে না। কিংবা ধরুন তার উল্টোটাও হতে পারে, স্বামী পছন্দ করে, কিন্তু তার স্ত্রী পছন্দ করে না।
--অর্থাৎ তুমি বলতে চাও, আখ্যানের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে পারে যক্ষা রোগীর পুঁজ!
--হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে। যেমন ঘরে তোলা পুঁজি আর ফেলে দেওয়া পুঁজ।
--হোমিওপ্যাথি তো জানে ইকোনমি। অতএব প্রয়োজন শুধু মিলিয়ন ডোজ।
--যেমন যে বেড়াল পছন্দ করে, মিলিয়ন ডোজ পড়লে তার পছন্দ বদলে যাবে। সে তখন হয়তো বেড়ালের জায়গায় কুকুর পুষতে চাইবে।
--ধরো যদি শরৎচন্দ্রকে খাইয়ে দেওয়া যেত মিলিয়ন ডোজ, কিংবা যদি মিলিয়ন ডোজ খাইয়ে দেওয়া হতো দেবদাসকে, তাহলে কী হতো? কিছুটা ভাবতে সময় নিল সোমেন। তারপর বলল -–আমার মনে হয়, তাহলে দেবদাস আর পারুর বাড়িতে যেত না। কষ্ট করে তাকে রক্তবমিও করতে হতো না। আসলে রক্তবমি করার নাটকীয়তার প্রয়োজনই হতো না।
--তাই! আর দেবদাস তাহলে কার নায়ক হতো? সোমেন আবার কিছুটা ভাবতে সময় নিল। তারপর ডাক্তারবাবুর মতো গম্ভীর গলায় বলল –

-তখন দেবদাস হতো শুধুই চন্দ্রমুখীর...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন