কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

কাজল সেন

হ্রস্বদীর্ঘ


বাবাই তো তখন অনেক ছোট! খুবই ছোট। বাবাইকে নিয়ে তখন কোনো ভবিষ্যৎবাণী করা কি আর চলে? করাটা কি ঠিক? কিন্তু তিনি করেছিলেন। তিনি, মানে নিবারণবাবু। সম্পর্কে বাবাইয়ের কেমন যেন দাদু হন। বলেছিলেন –- ‘বুঝলে সুনির্মল! তোমার ছেলে কিন্তু একদিন খুব বড় হবে। খুব বড়। দেখে নিও। এই আমি বললাম’। কথাবার্তা রাতের খাবার খেতে খেতে হচ্ছিল। সুনির্মলের খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। কথাটা তিনি শুনলেন। একটু হাসলেন। এক ঢোঁক জল খেলেন। তারপর ‘আমি উঠছি’ বলে উঠে গেলেন।

রুটিটা দুধের মধ্যে চটকাতে চটকাতে বাবাইও কথাটা শুনেছিল। সে হাঁ করে দেখছিল নিবারণদাদুর দুটো চওড়া ঠোঁট। এইমাত্র ওর ফাঁক দিয়েই তো বেরিয়ে এসেছিল, একদিন তার খুব বড় হবার কথা। সে আন্দাজ করার চেষ্টা করছিল, কতটা বড় সে হতে পারবে! ঠিক কতটা বড় হলে, খুব বড় হয়েছে বলা যাবে!

তারপর থেকেই বাবাই লাগাতার ভেবেছে তার বড় হবার কথা। কীভাবে ঠিকঠাক বড় হওয়া যায়! এবং একদিন বলতে ঠিক কোন্‌দিন বোঝায়! পাশের ফ্ল্যাটের পল্টু তার সঙ্গেই পড়ত। একদিন বাবাই সুযোগ মতো পল্টুর পাশে দাঁড়িয়ে মেপেও নিয়েছিল, পল্টু তার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার ছোট। আবার এভাবেই একদিন ক্লাসের মনিটর উৎপলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, উৎপল কয়েক সেন্টিমিটার বড়। বাবাই ঠিক বুঝে উঠতে পারত না, এখনও পারে না, এই বড় হবার মাপকাঠিটা আসলে কী! তার স্ত্রী সুমিতা তাকে প্রায়ই ঠেস দিয়ে বলে –- ‘তুমি কী বলো তো! এখনও পর্যন্ত তুমি কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজারই থেকে গেলে! এ জি এম আর কবে হবে? আর দেখ মিঃ সায়গলকে, তোমার সাথেই জয়েন করেছিল, এখন কোম্পানির সিনিয়র এ জি এম’। বিয়ের আগে করবীর সাথে খুব মাখামাখি ছিল বাবাইয়ের। সেই করবীও তাকে প্রায়ই বলতো –- ‘বি. টেকের পর এম. বি. এ করেই তোমার পাঠশালা শেষ? তুমি বোঝ না কেন, আজকাল ফরেন ডিগ্রি না থাকলে জীবনে উন্নতি করা যায় না, জীবনে বড় হওয়া যায় না!

নিবারণদাদু সেই কবেই বেমালুম উবে গেছেন এই দুনিয়া থেকে। বাবা সুনির্মলও ইতিমধ্যে নিজের বয়স যথেষ্ট বাড়িয়ে নিয়েছেন। বাবাইয়ের ইদানীং খুব আক্ষেপ হয়, দাদু বেঁচে থাকলে অন্তত যাচাই করে নেওয়া যেত, সে এখনও পর্যন্ত ঠিক কতটা বড় হয়েছে এবং আর কতটাই বা বাকি আছে! বাবা এসব ব্যাপারে একেবারেই উৎসাহী নন। তিনি নিজের দুই হাঁটু নিয়েই ব্যস্ত। আসলে বাত। বড় বজ্জাত!

তবু বাবাই প্রায়ই স্বপ্ন দেখে, সে একদিন সত্যি সত্যিই বড় হবে। খুব বড়। কিন্তু ঠিক কতটা বড়? কিছুতেই যেন আন্দাজ করা যায় না। বাবাইয়ের মনে হয়, দাদু যদি বাবার থেকে বয়সে ছোট হতেন, তাহলে হয়তো এখনও বেঁচে থাকতেন। আর যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে বড় হবার সঠিক সুলুকসন্ধানও দিতে পারতেন। কিন্তু কী আর করা যায়! বাবার থেকে বয়সে বড় হয়েই সব গন্ডগোল হয়ে গেল যে!

2 কমেন্টস্:

  1. ভাল লাগল কাজল সেনের গল্প
    দীপঙ্কর বসু

    উত্তরমুছুন
  2. Kajol Bhai, bah! bah!! bah!!! Khub i bhalo laaglo. "Ki bhaabey thikthaak boroh howa jaay,---- boroh hobaar maapkaathi ta ki?"

    উত্তরমুছুন