কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

শ্রাবণী দাশগুপ্ত

বড়কাকিমার পুঁটুলি


নৈহাটি থেকে গুরগাঁও -– দূরত্ব নেহাত ‘কম নয়’ বলে শান্ত্বনুর যাওয়া হলো না। অঝোর বর্ষা, স্যান্ডাকের জুতো, রোজকার কলেজ-বাড়ি, শুঁড়িখানার মাতালের টানে সাহিত্যসংসদ, লেখালেখি। তার মা বলল, তমসাও বলল “যাও, না যাওয়াটা খারাপ দেখায়। বড্ড টান ছিল তোমার ওপরে।” বাইরে লম্বা বুনোঘাসের মাথায় টুসটুসে বৃষ্টিফোঁটা। বৃষ্টি এখন থেমেছে। দিন পনের আগে শমীক ফোন করেছিল, “আসতে পারলে ভালো হতো বড়দা, তোমাদের তো ছুটির অভাব থাকে না!” তা অবশ্য, শমীক বহুজাতিক সংস্থার উচ্চ-আধিকারিক। হয় না, হলো না কত কিছুই! ছায়ারঙের মেঘপর্দা। স্যাঁতানো গন্ধে বুনোভাপ। বড়কা’র বিয়ের সময় সে ক্লাস-টু। বাগানের পাঁচিলে একটা মা-বাঁদর এসে বসত। তিনবছর পরে বাঁদরছানা বড়কাকিমার শাড়ির বুকের কাছে গোলাপী...। একটুখানিই দেখেছিল সে। “ও শানু, ভাই দুধ খাচ্ছে...পরে আসিস?” সে লম্বা এক দৌড়। পেছনের বাগানে বড়বড় ডাঁসা কাশীর পেয়ারা। সেই গাছের নিচে তেড়ে হিসি করেছিল শান্ত্বনু। এই ক’দিন সবাই হবিষ্যি না খেলেও নিরামিষ। রিম্পি রোজ ঘ্যানঘ্যান করছে, “ও ঠাম্মা, আরো কদ্দিন?” তমসাকে বলছিলেন শান্ত্বনুর মা,“...তোমার শ্বশুরের সঙ্গেই আগে গৌরীর সম্বন্ধ এনেছিল ওর মেজমামা। দেখাশোনা... তা পনের বছরের তফাৎ বলে আমার শাশুড়ি অরাজী। ওনার আগের ফোটো দেখেছ তো; কী রূপবান ছিলেন! বাড়ির মধ্যে বটঠাকুরপোই কুচ্ছিত।” গুমোরে মেঘ ডাকল। “বড়কাকিমাও তো ওয়াহিদার মতো –- ফোটো দেখেছি মা। কী সুন্দর!” “ওই! রঙ তেমন নাঃ।” শান্ত্বনুর মা ধবলা, বেঁটে, ল্যাপচা-মুখ। বড়কাকিমার পা সে দেখেছিল, একদিন। কচুপাতা গোছ, গোড়ালি। উঁচু হয়ে কাপড় মেলছিল। সে দোতলার বারান্দায়। তখন তার মাধ্যমিকের ছুটি। আজ সন্ধ্যেবেলায় কমলদা’র বাড়িতে মিটিং –- পুজোসংখ্যা সংক্রান্ত। ইচ্ছে করছে না। সাদাকালোয় সেজপিসি, মা, বড়কাকিমা, ছোটকা, বড়পিসি, ১৯৬৯। পাছবাগানে বড় বড় সাবানের গোল্লা উড়ছে, ভাসছে, বড় হচ্ছে, ফাটছে। বৃষ্টির ধোঁয়ায় ঝাপসা বড়কাকিমার সবুজ-শাড়ি, হলদে-পাড়। গোল্লাগুলো ঘরে ঢুকছে। এক, দুই, তিন, চার পাঁচ...। আসছেই। “তোকে দিলুম যে শানু, খুলে দ্যাখ্‌না!” একখানা কালো খোঁপা, একজোড়া বকফুল, তাসের জোড়ায় রুইতনের সাহেব-বিবি, লালসুতোর গোলাপে তার বাবার নাম সেলানো রুমাল। পাঁচ নম্বর পুঁটুলিতে...? শান্ত্বনু ছোঁওয়ার আগেই উড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির মধ্যে। জলছাপ ঘরের মেঝেয়।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন