কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

অচিন্ত্য দাস

লুডো


বিকেল আর সন্ধ্যের ফাঁকটাতে পাঁচ বছরের খোকন তার সাত বছরের দিদির হাত ধরে পার্ক থেকে খেলাধুলো সেরে বাড়ি আসে। এসেই দুজন চলে যায় দোতলায়, বড়দাদুর ঘরে। মেঝেতে বসে লুডো খেলা শুরু হয়।

- আমি লাল নেবো, দিদি রোজ লাল নেয়!

- ল্যাল নে নে নে... বো –- ভাইকে ভেঙিয়ে দিদি বলল -- নে লাল নে, তুই ঠিক হারবি।

খোকন চাল দিল। পুট। এবার দিদি। ছক্কা ছক্কা পাঁচ –- দুটো ঘুঁটি বেরিয়ে গেল, এগিয়েও গেল খানিকটা। খোকনের পড়ল তিন। দিদির পড়ল ছক্কা চার। খোকন অস্থির হয়ে উঠছে, তার চারটে ঘুঁটিই ঘরে। দিদির আর একটা ছক্কা পড়তেই, খোকন রেগেমেগে সব তছনছ করে দিল। বড়দাদু খোকনকে কোলে নিয়ে বললেন, এটা কী হলো, ছক্কা পড়েনি তো কী হয়েছে...

- হেরে যাচ্ছি যে।... খোকনের কান্না এসে গেল।

- হারলে তো হারলে, তাতে কী, কালকে তো আবার খেলা হবে। বড়দাদুর কথায় চোখ মুছে খোকন বলল, সাপলুডো খেলব। সাপলুডোতে কিন্তু দেখা গেল, খোকন দিদিকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছে। খোকন আশি-নব্বই এর লাইনে, আর দিদি বারবার সাপের মুখে পড়ে একেবারে নিচে। দিদির মেজাজ গরম, খোকন গুনতে একটা ভুল করেছে, ব্যাস, দিদি এক চাঁটা মারল তাকে। খোকন জোর করে ঘুঁটিটা একশ পার করে দিয়ে বলল, আমি জিতেছি।

বড়দাদু খেলা বন্ধ করে দিয়ে বললেন –- লুডো খেলা শেখোনি তোমরা। ছক্কা না পড়লে বা ঘুঁটি কেটে গেলে কাঁদবে না। সব সময় মজা করে খেলবে। আজকে হারলে কী, কাল তো জিত হতে পারে... চলো এবার আমিও খেলব...

খেলা অবশ্য আর হলো না। নিচে থেকে ‘ঝঙ্কার’ উঠল। ছোটবৌ, মানে খোকনের মা’র গলা। -- রোজ রোজ ভর সন্ধ্যেবেলা লুডো খেলা! একটু শিক্ষেটিক্ষে তো দিতে পারে, ঘরভর্তি বই...

বড়দাদু খোকনের বাবার জ্যাঠামশায়। আশ্রিত মানুষ। জমানো টাকা নেই, তাই নির্ভরও করতে হয়। শুনে তো যেতেই হবে! খোকনরা হাওয়া বুঝে ততক্ষণ নিচে চলে গেছে।

বড়দাদু বিড়বিড় করে বলছিলেন –- শিক্ষের তুমি কী বোঝ, ছোটবৌমা! লুডোর বোর্ডটা বইয়ের তাকে রেখে নিশ্বাস ফেলে বললেন –- এটার মধ্যে জীবনের যা শিক্ষে আছে, তা ঘর‌ভর্তি বই-এ পাওয়া যায় না, সেটা বোঝ কি...




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন