কবিতার কালিমাটি ১১৬ |
আত্মকথন
(১)
আজকাল
গন্তব্যে পৌঁছেও
নামতে
ইচ্ছে করে না; মনে
হয়
বসে থাকি আসনে, অনন্ত
কাল
ধরে, আর চলতে থাকুক
যান।
বাড়তে থাকুক গতি,
পাহাড়,
নদী, আকাশ পেরিয়ে
পৃথিবীর
টান পিছনে ফেলে,
চলতে
থাকি অসীমের দিকে।
আমার
কোথাও নামতে ইচ্ছে
করে
না। আমার হৃদয় বহু
পুরাতন,
সেখানে শত জন্মের
স্মৃতিদের
নিঃসঙ্গ কারাবাস;
অশান্ত,
যাযাবর হৃদয় আমার,
আমার
কোনো ঘর নেই।
(২)
জানালাটা
বন্ধ করে দাও তাড়াতাড়ি, বৃষ্টির
ছাঁট
আসছে, ভিজিয়ে দেবে
সবকিছু
– আসবাবপত্র, পর্দা, কার্পেট আর
তোমাকে;
ঝোড়ো বাতাস মুখে
চোখে
ঝাপটা দেবে, এলোমেলো হয়ে যাবে
পরিপাটি
চুল, বাতাসে দেয়ালে
টাঙানো
ছবিটা, পেন্ডুলামের মতো দুলতে
থাকবে
ভীষণ জোরে, এমনকি
পড়ে
গিয়ে ভেঙ্গেও যেতে পারে; তখন মেঝেতে
কাচের
ভাঙ্গা টুকরোগুলি
অনেকদূর
পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে; পায়ে বিঁধে
হয়তো
তোমায় রক্তাক্ত করবে।
এখন
দৃশ্যপটে প্রাচীনতার ছায়া, শিকড়গুলি
অক্টোপাসের
শুঁড়ের মতো
এগোয়
নিঃশব্দে। জীবাশ্মের জন্ম নেয়ার বুঝি
বেশী
দেরী নেই আর। জানালাটা
খোলাই
থাক আজ! অনেকদিনের বন্ধ ঘরে বড়
বেশী
গুমোট এখন; বাতাস আসুক,
না
হয় সবকিছু তছনছ হয়ে যাক, সমূলে উৎপাটিত
হোক
প্রাচীন শিকড়গুলি; বৃষ্টি আসুক
নিঃসংকোচে,
ভিজিয়ে দিক সব আসবাবপত্র, পর্দা,
কার্পেট,
যাবতীয় আর সবকিছু।
প্লাবিত
হোক সব উষর ভুমি, প্লাবিত হোক এই উষর
আমি।
বৃষ্টিতে ভিজিনি আমি
বহুকাল।
বৃষ্টি ভিজিয়ে দিক আমার ভিতর বাহির।
(৩)
মাথাটা
এলিয়ে দিয়ে চোখ
বুজলাম;
দুলতে দুলতে এগোচ্ছি, বিশেষ কোনো
যানে
নাকি কারুর কাঁধে চড়ে?
বোঝা
ভার। মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠের দরোজা সব খুলে
যাচ্ছে
একে একে; স্মৃতি, স্বপ্ন,
কল্পনা
সবকিছু মিলেমিশে একাকার। দুলছি, দুলছি,
দুলতে
দুলতে এগোচ্ছি; পথের শেষে
অন্য
পথ জেগে ওঠে, অথবা পুরনো কোনো পথ।
হেসে
ডাক দেয় সেই বালিকা যে
আমার
পিতামহী হবে কোনো কালে; সেইসব অদেখা
স্মৃতি
আজো পরিব্যপ্ত আমার মনে।
সাম্পানের
গলুই-এ ব’সে আছে কে এই তরুণী? কাঁচা
সোনার
মতো গায়ের রঙ তার, কোলে
ঘুমন্ত
শিশু, কন্ঠে ঝোলে দীঘল সীতাহার। বালিকার
প্রথম
প্রেম এখন শরীরে আমার; ভেসে
আসে
রাতের বাতাসে প্রণয়ে ব্যর্থ তরুণীর ব্যথাতুর
দীর্ঘশ্বাস,
আর থেকে থেকে কুহকের
ডাক;
বুকের গভীরে বাজে বিষাদের করুণ সুর, ছড় টেনে
কেঁদে
চলে দূর সমুদ্রের সেই অদেখা গাঙচিল;
স্বপ্নে
এসে স্বপ্নেই নিহত হল সে। আমি কি এগিয়ে
যাচ্ছি
নাকি ফিরে চলেছি অস্তিত্বের
প্রারম্ভ
কালে? তবে আবারো কি যাত্রা শুরু শূন্য থেকে?
তবে আবারো কি যাত্রা শুরু শূন্য থেকে? দারুণ!
উত্তরমুছুন@নামহীন, অনেক ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনবাহ! সুন্দর। দ্বিতীয় আর তৃতীয়টা বিশেষ করে।
উত্তরমুছুনঅপূর্ব
উত্তরমুছুন