কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

মলয় রায়চৌধুরী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬


নৃত্যরূপ

জীমূতবাহন, বাঘ-লাফের ক্ষিপ্রতায়, গাড়ির দরোজা খুলে বেরোলো, যেন আগে থেকে ভেবে রেখেছিল কী হলে কী করবে। দুহাতে নিজের লাল টিশার্ট খুলে  ফেলে দিয়ে, ফেডেড জিনস কোমর থেকে নামিয়ে দিলো, জীমূতবাহন সাহা। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, জ্যোতি বসু আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখোশ পরে, কদমছাঁট চুলের যে তিনজন যুবক ওকে ঘিরে ধরেছিল, ওকে উলঙ্গ দেখে ভ্যাবাচাকা খাবার মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে, জীমূতবাহন, পিচ রাস্তায় দুহাত পেছনে ভর দিয়ে  চিৎ, দুজনকে লক্ষ্য করে লাথি চালালো। তারা ছিটকে যেতেই, সামনে লাফ  দিয়ে, দাঁড়িয়ে ঘুষি কষালো তৃতীয় যুবকের মুখে। হেটো ধুতি-পরা তিনজনের কেউই আশা করেনি এইভাবে একজন উলঙ্গ যুবকের হাতে আচমকা মার খাবে। কারণ, অনুমান করা যায়, ওরা গাড়িলুঠের অভিজ্ঞতায় উলঙ্গ মানুষের প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি কখনও। জীমূতবাহনই চালাচ্ছিল গাড়ি আর তখনই গাছের আড়াল থেকে মুখোশ-পরা তিন যুবক, হেটো ধুতি আর ময়লাটে শার্টে, কাছের কোনো গ্রামের সম্ভবত, বেরিয়ে এসে ওদের গাড়ির সামনে রুখে দাঁড়ায়।  আরেকটু হলেই চাপা পড়তো লোকগুলো, কিন্তু গাড়ি থামার সময়েই এমনভাবে সরে দাঁড়ালো যে জীমূতবাহন বুঝতে পারলো, লোকগুলো এই উপায়ে সকালের  দিকে প্রায়ই গাড়ি লুঠ করে-করে আত্মবিশ্বাসী। তিনজনের চেহারা প্রায় একইরকম। প্যাঁদানিটা তাদের মগজে জোরে জোরে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল মনে হয়, কারণ তারা মূলত ফাঁকা মস্তিষ্কের গেঁয়ো ছোকরার দল।

জিন্সপ্যান্ট গোড়ালি থেকে ওপরে টেনে তুলে, টিশার্ট থেকে ধুলো ঝেড়ে জীমূতবাহন ড্রাইভারের সিটে এসে বসল। অন্য বন্ধুরাও যে যার জায়গায় বসার পর গাড়ি স্টার্ট দিলো জীমূতবাহন। ওর ঘন কালো চুল সমসাময়িক ফ্যাশনে কাটা, আর তা ওর মুখের আকর্ষণীয় প্রতিসাম্য গড়ে তুলেছে। ওর  সোজা, ভাস্কর্যযুক্ত কাঁধ দেখে লোকে সাঁতারু বলে ভুল করে।

জীমূতবাহনের  দুই বন্ধুও নেমে পড়েছিল গাড়ি থেকে, লোহার রড, হকিস্টিক আর ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে, মারামারি বা আত্মরক্ষার জন্য। বন্ধু শ্যামসুন্দর বা স্যামি, যে ক্রিকেট ব্যাট হাতে গাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, রাস্তায় পড়ে থাকা মোবাইল আর খসে-পড়া মুখোশগুলো, যা আক্রমণকারীরা ফেলে গেছে, তুলে নিলো। বুঝলি, শ্যামসুন্দরের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে, বলল জীমূতবাহন, তোর গায়ের জোর অন্যের দুর্বলতা থেকে উদ্ভূত স্রেফ একটা দুর্ঘটনা। লড়াইয়ের মাঝখানে নাচবি, নিজের রক্তে নাচবি, তুই যখন পুরোপুরি ফ্রি থাকিস তখন নাচবি।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন