কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬


শব্দের মৃত্যু

ঠাস করে শব্দ হলো। শব্দের আওয়াজ কি ঠাস?

তার কি গুলি লেগেছে? কোথাও তো ব্যথা অনুভূত হচ্ছে না!

সেদিন একজনের ফেসবুক পোস্টে পড়ল যে তার স্কুলগামী মেয়ে একদিন ঘোড়ার ফার্মে গিয়ে ঘোড়াকে হত্যা করবার পদ্ধতি দেখে ভেজিটারিয়ান হয়ে গেছে। ফার্মে এক লোক ঠোঁট গোল করে একধরনের শিস দেয়। টগবগ ঘোড়াটা শিসের নিপুণ ধ্বনি শুনে লোকটার দিকে তাকায়। তখনই লোকটা ঘোড়ার কপাল লক্ষ্য করে গুলি করে।

এই গল্প শুনে সে শিউরে উঠেছিল। পরে অবশ্য তার বন্ধু নন্দন বলেছে এতেই নাকি  ঘোড়াটা সবচেয়ে কম যন্ত্রণা পায়। মাথায় গুলি লাগার সাথে সাথে ঘোড়াটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যায়।

ঠাস শব্দ হবার সাথে মনে হলো তবে কি তার মাথায় গুলি লেগেছে? কোনো যন্ত্রণা নেই বলে সে কি ক্রমশ: মরে যাচ্ছে? মা’র সাথে শেষবার একটু কথা বলবে? স্টোর  রুমটায় যাবার প্যাসেজে তার একটা টিয়া পাখি আছে সেটাকে খাবার দেয়া দরকার। নিজ হাতে ওকে খাওয়ায় সে। মরে গেলে পাখিটাকে খাওয়াবে কে? নাকি পাখিটাকে জানালা গলে মুক্ত করে দেবে?

বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। আরাম লাগছে এই চেনা শক্ত বিছানাটা। মাথার পেছনে জানালাটা খোলা, বুঝতে পারছে। পর্দা উড়িয়ে অল্প বাতাস লাগছে, বাতাসটা শান্তিপুর। শান্তি শান্তি লাগছে। গতকাল বইমেলা থেকে বেশ কিছু বই কিনেছিল। কোথায় রেখেছে! বালিশের একপাশে থাকার কথা নতুন ঘ্রাণের বইগুলোর। মুশতাক আহমেদের ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ বইটার পাতা ওল্টানোই হলো না।

এখন কি সন্ধ্যা? মাথায় কি সন্ধ্যার বাতাসের দোলা? চিন্তাটাকে ঘুড়ির মতো গোত্তা খাওয়াল। নিজেই চিন্তাটার সুতো ছেড়ে দিচ্ছে। মুহূর্তে চিন্তারাম দারোগাবাবু পেটের কাছে বুট ঘষে সটান থামল। স্যালুট করে জানাল খিদে উঁকি দিচ্ছে। মারা যাবার আগে খিদে পায় কারো?

রান্নাঘরে কি খাবার আছে কোনো মুখরোচক? অন্যসময় তার রান্নার খুঁটিনাটি মনে থাকে। রান্নাটা তার কাছে সঙ্গমের মতো মনোযোগ দাবী করে। এক লেখক বলেছেন,  রান্না ও সঙ্গমে পূর্ণ মন দিতে হয়। লেবুপাতা মিশিয়ে ছোটমাছ রান্না করার ধোঁয়া ওড়ানো দৃশ্য, টাটকা রান্নার গরম ঘ্রাণ তিরতির করে খেলে যায়।

চারপাশে কোনো ঘড়ি নেই। সে বুঝতে পারছে না এখন সকাল নাকি সন্ধ্যা! তার স্ত্রী তাকে হাতঘড়ি কিনে দিয়েছিল। সময় তাকে হাতে বেঁধে রাখবে সে মানতে পারেনি। ঘড়িটা ফেলে দিয়েছে। তার কষ্ট হচ্ছে না কেন কোথাও? কষ্ট হচ্ছে না তারপরও তার মাথায় তাহলে মৃত্যু কথা উড়ে এলো কেন? স্ত্রীকে ডাকবে?

আলো আঁধারি ঘরের মাঝে সে একটা খসখস শব্দ শুনতে পেল।

চোখের পাতায় যে আবেশ লেগেছিল সেটা কেটে যাচ্ছে। সেই যে ঠাস করে শব্দের উৎপত্তি স্থল, সেখানে আবছায়া দেখা যাচ্ছে একজন হালকা ফ্রক-মূর্তি। বালিকা।  

এবার সে পরিস্কার অনুভব করল তার মেয়েটা দাঁড়িয়ে, ওর হাতে খেলনা পিস্তল, বাবার দিকেই তাক করা…


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন