কবিতার কালিমাটি ১১৬ |
চাঁদ
কল্পনা চাঁদে
যাবে ভেবেছিল
একদিন উঠোনে
বসে চাঁদের গল্প শোনাচ্ছিল ছেলেকে
সুভাষগ্রাম
থেকে তার চাঁদ কতদূর মেপে দেখেনি কোনোদিন
রোজ সূর্য ওঠার
আগে ছুটতে ছুটতে লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ে সে
ছ’টা বাড়ির
কাজ সেরে ফিরে আসে যখন
স্টেশনে নেমেই আবার চাঁদ
দেখতে পায়
আর দেখে রাস্তার
কম আলোয় কারা যেন
চাঁদ নিয়ে লোফালুফি
করে প্রতিনিয়ত
সোনারপুরের
বিবেকবাবু একদিন তার হাত ধরে বলেছিল –
চাঁদে নিয়ে
গিয়ে চাঁদের বাড়িতে চাঁদ দেখাবে তাকে
রাত্রিবেলা
কল্পনা ছেলেকে জাপটে ধরে শুয়ে থাকে –
জানলা দিয়ে চাঁদ উঁকি
মেরে পাহারা দেয়
সেই কবে থেকে
সে ডাল-সম্বরার ধোঁয়া চাঁদে পাঠাতো রোজ
সেই কবে থেকে
চোখ উপচে-ওঠা জল
জমিয়ে রেখেছে শুধুমাত্র
চাঁদেরই জন্য।
খেলার বয়স
কেউ ডেকেছিল
রাতে, ঘুমঘোরে জ্বালানির মতো
সোনাঝুরি দুলে
ওঠে তার নীচে একদা কিশোরী
সাইকেল বাহনটি
রেখে হেলান দিয়েছে সুখে
অল্পঘোরে তাকিয়েছি
ঠিক যেন অচেনা প্রহরী
সে ছিল বাদামগাছ
ছুঁয়ে-দেখা তৃণাবৃত ঘাসও
শুশ্রূষায় পাশাপাশি
কাচে-ঢাকা রুগ্ন ছবি দুটি
বালিশে ফোঁপানি-শব্দ
বুকফাটা হা হা দিনকাল
চতুর্দিকে কাশফুল
অরণ্যপুষ্প আরও কত কী!
তুমিও শুয়েছ
ঘাসে ঘাসের শরীরে মাথা রেখে
যৌবনমদ খেয়েছো
প্রাণোচ্ছল কারিগর তুমি
আশঙ্কার কথা
কিছু জানো কি বিষাদের মতন?
মাঝিমাল্লা
নেই শুধু একলা ভেসেছে নৌকা-ডিঙি।
পাঁচিল
একটা সবুজ কাঠের
দরজা ভেঙে ঢুকে পড়লে তুমি
তোমার নিজেরই
ঘর
লাফিয়ে জুতোসুদ্ধ
বিছানায় উঠে
শালপাতায় ভাত খেতে চাইলে
গায়ের জামা
খুলতে খুলতে গেঞ্জি খুলতে খুলতে
কুয়াশার মতো
অহংকার নামিয়ে আনলে বিছানায় –
প্রায়-অন্ধ
আলমারি থেকে পুরনো দিনগুলিও বেরিয়ে এলো
তুমি জুতোর
ফিতে খুলতে খুলতে ভুলে গেলে
বিছানার পাশে
জুতোর পাশে তোমার জন্য
এক সৌখিন জেলখানাও সেজে উঠল দ্রুত
তুমি ঘুমোবার
আগে প্রতিদিন স্তব্ধ রাত্রির
সীমান্ত দেশের
পাঁচিল ভেঙে তছনছ করে দিতে চাইছো।
দুর্দান্ত লেখা। মন ছুঁয়ে গেল।
উত্তরমুছুন