কালিমাটি
অনলাইন / ১০১
এবছর বিগত মার্চ মাসে সবার কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, সন্দেহ ও আশা-নিরাশার নিরসন ঘটিয়ে দুটি আন্তর্জাতিক বইমেলা সম্পন্ন হলো দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশে – কলিকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং অমর একুশে বইমেলা। এর আগে শেষ বইমেলা হয়েছিল ২০২০ সালে। বইমেলা শেষ হবার ঠিক এক-দেড় মাস পরেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতোই ভারত ও বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়েছিল অতিমারিতে। স্বাভাবিক কারণেই তাই প্রায় সারা বিশ্ব একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছিল, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মৃত্যুমিছিলে ভারাক্রান্ত হয়েছিল মানুষের জীবন ও যাপন। এই দুঃসহ কালবেলায় তাই অন্যান্য অনেক কিছুর মতোই বইমেলা আয়োজন করার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। একদিকে প্রকৃত পাঠক-পাঠিকারা যেমন নিয়মিত পড়ার আনন্দ এবং জ্ঞানচর্চার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, অন্যদিকে তেমনি যাঁরা বই প্রকাশ করেন এবং বিপণন করেন, তাঁরা মুখোমুখি হয়েছিলেন চরম আর্থিক দুর্দশার। এবং শুধুমাত্র তাঁরাই নন, বরং বিশ্ব জুড়ে অধিকাংশ মানুষই এই আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন। ২০২১ সালে তাই বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখতে হয়েছিল। এরই পাশাপাশি প্রবাহিত সময়ের কারণে সংক্রমণের ভয়াবহতা হ্রাস পাবার ফলে অনেকেরই মনে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, ২০২২-এ বইমেলা কি হবে? না কি হবে না? কিন্তু শেষপর্যন্ত তা হলো, তবে প্রতি বছরের মতো নির্ধারিত সময়ে নয়, বরং কিছুটা পরে। বিগত দু’বছরের বুভুক্ষু পাঠক-পাঠিকারা তাঁদের চাহিদা, প্রত্যাশা, সাধ ও সাধ্যানুযায়ী সংগ্রহ করার সুযোগ পেলেন হাজার হাজার বইয়ের ভিড় থেকে প্রার্থিত বইয়ের সম্ভার। সেইসঙ্গে পুনর্মিলিত হলেন পরিচিত মানুষজনের সঙ্গে এবং সদ্য পরিচয়ের সূত্রে সম্পর্কিত হলেন আরও বিভিন্ন মানুষজনের সঙ্গে। আর মেলার তাৎপর্য তো এই মেলামেশার মধ্যেই নিহিত থাকে।
এবছর বিগত মার্চ মাসে আরও একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল গত ১৬ই মার্চ তারিখে (১লা চৈত্র)। দিনটি ছিল ১৯৩৮ সালে প্রয়াত তৎকালীন যুগের স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও সম্পাদক রায়বাহাদুর জলধর সেনের ১৬৩তম জন্মদিবস। ‘জলধর সেন স্মৃতিরক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কলকাতার বালীগঞ্জের বাসভবনে। জলধর সেনের ১৬১তম জন্মদিবসও আয়োজিত হয়েছিল ২০২০ সালের ১৬ই মার্চ এই বাসভবনেই। করোনার কারণে ২০২১ সালে অনুষ্ঠান স্থগিত রাখতে হয়েছিল। প্রথম অনুষ্ঠানের মতোই এবছরের অনুষ্ঠানেও জলধর সেনের ওপর বক্তব্য রেখেছেন বিশিষ্ট জলধর বিশেষজ্ঞরা। প্রথম ও দ্বিতীয় বছরের দুটি আলোচনা সভাতেই অত্যন্ত মননশীল বক্তব্য রেখেছেন ড. বারিদবরণ ঘোষ। এবছর আরও একজন বিশিষ্ট জলধর বিশেষজ্ঞ ড. সুবিমল মিশ্রও বক্তব্য রেখেছেন। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ড. অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ দত্ত এবং পৌলমী মালিক। পৌলমী বিশ্বভারতীতে জলধর সেনের ওপর গবেষণা কাজে এখন নিমগ্ন আছেন। সম্পাদক জলধর সেন তাঁর সম্পাদিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রবীণ ও নবীন লেখক-লেখিকাদের সারাজীবন সমাদর করেছেন। সম্ভাবনাময় লেখক-লেখিকাদের উৎসাহ ও প্রেরণা যুগিয়েছেন। জলধর সেন স্মৃতিরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকেও বর্তমানে যাঁরা সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পকলা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তাঁদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়েছে। বিশেষত বিগত দুটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ে বাসভবনের বৈঠকখানায়, যেখানে একসময় শরৎচন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, জলধর সেন, নরেন্দ্র দেব, রাধারানী দেবী, কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এবং বাংলা সাহিত্য জগতের ও রাজনীতি জগতের অসংখ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বগণ। আসলে এই বাসভবন তো তীর্থক্ষেত্র আমাদের সবার কাছে!
বাংলা নতুন বছরের সূচনায় সবাইকে জানাই আমাদের শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের
ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com
/ kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
9835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে
যোগাযোগ :Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar
Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন