কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫ |
সময়োচিত
রিনপোচের* সাথে মদ্যপান করছিলেন এক সন্ন্যাসী। রিনপোচেকে নিজের করোটিতে পান করতে না দেখে বিস্ময় জাগে সন্ন্যাসীর – কারণ করোটিটি তাঁর পাশেই রাখা ছিল ও রিনপোচে পান করছিলেন পেতলের পাত্রে। সন্ন্যাসী অভ্যাসমত নিজের করোটিতে পান করছিলেন – যা তাঁদের সম্প্রদায়ে রীতি। সন্ন্যাসী তখন রিনপোচেকে তাঁর এই অদ্ভুত আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করেন। রিনপোচে উত্তরে তাঁর বিগত জন্মগুলির কথা বলতে থাকেন। সেই সকল জন্মে করোটিটি তাঁর কাছেই ছিল ও তাতে তিনি মদ্যপান করতেন। প্রতিটি জন্মে মৃত্যুর পর নতুন জন্মের আগে তিনি বিগত জন্মের বন্ধু ও শিষ্যস্থানীয়দের স্বপ্নাদেশ দিতেন পরবর্তী জন্ম বিষয়ে। এইভাবে নতুন শিশুটির শনাক্তকরণ হত ও তাঁর পরম্পরার ধারা বজায় থাকত। পূর্বাপর জন্মগুলিতে তিনি বুদ্ধের বাণীকে সম্যক হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন, যা তিনি এই জন্মে পারেননি। কুণ্ঠা ও অনুতাপে তাই তিনি নিজের করোটিতে মদ্যপান করেন না।
সন্ন্যাসীর মাথায় এক বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি নিজের করোটিটি রিনপোচের দিকে এগিয়ে দেন। এরপর নিজে রিনপোচের করোটিতে মদ্যপান শুরু করেন। এই ব্যবস্থা রিনপোচেরও মনোমত হয়। দুই বন্ধুর হাস্য ও হৃদয়-বিনিময় ক্রমশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। রিনপোচে বলে ওঠেন, ‘তোমার বড় করুণা আমার ওপর’। উত্তরে সন্ন্যাসী বলেন, ‘করুণা তোমারও তো আমার ওপর কিছু কম নয়!’
গ্যাংটকের এক বাড়ির ছাদে বসে মদ্যপান করছিলেন তাঁরা। ক্রমশ দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা তাঁদের পেছনে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত। যদিও তাপমাত্রা তখনও হিমাঙ্কের কিছু ওপরে ছিল।
*‘রিনপোচে’
একটি তিব্বতী সাম্মানিক উপাধি
স্বাগত। 'সময়োচিত' ভালো লেগেছে। মদ্যপানের আবহ ও দুজনের আন্তঃসম্পর্ক, গল্পের বাঁক-ঝুরোগল্পের মেজাজ ধরে রেখেছে।
উত্তরমুছুনফুলেল শুভেচ্ছা।
ঝুরোগল্পের উপস্থাপনার মধ্যে কাল ও দেশহীন সত্ত্বার কথা বলতে চেয়েছি। ঠিক বলতে চাইনি, বলা ভালো চেয়েছি পাঠক হৃদয়ে তা ফুটে উঠুক। আপনাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
মুছুনদারুন! 🌻
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
মুছুনআচ্ছা বেশ তোর ভালো লেগেছে বুঝলাম বোন!
মুছুন