কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মানিক বৈরাগী

 

কবিতার কালিমাটি ১১৫


আত্মদর্শন

 

অবহেলা ঈর্ষা নেহায়েত করুণাও খুব ভালো লাগে

শব্দ ত্রয়ীর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া প্রেরণার উৎস-আবেগে

মনে পড়ে শেখ সাদি'র কথা--

 

আজ যারা জন্মান্ধ, জ্বরা-জড়, খ্যাতির মোহান্ধ

আমায় দেখে ক্ষমতান্ধ হয়ে শীৎকার ছুঁড়ছো উপহাসের

তোমাদেরও পূর্ব-প্রজন্ম এমনি করে ছুঁড়েছে শরবিদ্ধ তীর

মাদ - মাগী - মাদুলি'র প্রলোভনে টলেনি যার মন

মৃত্যুভয়ে নত করিনি শির!

 

ডগডগে পান করে হেমলক পীর সক্রেটিস

আমি জানি কি আমার চাওয়া - সাধনা

কিসে আমার সুখ; কোথায় তাড়না - প্রেরণা

কলবের আরশিতে জিকির চলে নীতি-নৈতিকতার

জ্বলন যাতনায় দীপ জ্বেলে সত্যরে করি সাধনা

রুমি- খৈয়ামের প্রেমে যার দেহ-মন মাস্কানা।

 

তোমরা যারা খাই খাই করো বাঁচার তাগিদে

কলবে আর রিপুতে লড়াই করি মরণের পর বাঁচতে।

 

শোধন

 

পুষ্পিত অন্ধকার

উজ্জ্বল উচ্ছল  উৎসবের বিজয় কেতন

আমাকে আর টানে না

শুধু শবযাত্রা দেখি, বিষাদের চোখে।

 

নীলাম্বরী সড়কে প্রস্ফুটিত  রক্তজবার মতো

তুমি দাঁড়িয়ে থেকো, উন্নয়নের শাদা অন্ধকারে

 

সন্ধ্যার সোড়িয়ামের ভুতুড়ে আলোয়

আমি

ল্যাম্পপোস্ট

হবো।

 

বিষাদের ভিড় যদি দাও ভালোবাসা

সহজেই দ্রবিভুত হবো নুনজলে।

 

অতঃপর

পুষ্পিতঅন্ধকার থেকে ধবধবে শাদা রজনীগন্ধার সুভাষ ছড়াবেই।

 

প্রাপ্তবয়স্ক কবিতা

 

তোমাকে অধ্যয়ন করতে করতে

আর বই পড়া হয়নি আমার

 

এখন আমি অশিক্ষিত ক্ষেত

এই উপমাও আমার অর্জন

 

জলৌকা ভরা নদী তুমি স্বাদু জলে ভরা কচুরি পানা

অশ্রু কণা স্বচ্ছ হলেও লোনা জলে ঝর্ণাধারা

 

আমার আছে শিব চুড়া তপ্ত খাড়া ধার

মৃত অগ্নি গুহায় তপ্ত লাভা হয় না বাহির

 

তবুও তোমার পূর্ব রূপের বড়াই যায় না

যেনে রাখো সখি,মেরু দন্ড ভাঙ্গা হলে ও

সুচের মতো বুরিং যোগ্য শিব দন্ড খাড়া।

 

বন্ধুরা এখন তোমার চাহিদা পত্রের খবর পাঠ করে আমার কাছে।

তাহাদের নৈশায়োজনে সরবরাহ যোগানের তালিকায় প্রথম ধাপে রাখে তোমায়,

বাঈজী তকমায়

 

ফড়িয়া পুঁজির ফটিক পতিরা সহি আরাবি কায়দা মেনে, তোমাকে ঘিরে মুতা বিয়া সারে

মুমিন মুসলমান মানতেই হবে।

শরিয়তী মৌলভি মধুলোভি ইমাম কাজীর অভাব নাই দেশে।

তবুও তুমি ক্লান্ত শ্রান্ত দেহের অবসরে,আমায় ভাবো, গপ্প করো জনে জনে।

 

তুমি তো তথাকথিত জেন্ডারবাদী সোচ্ছার, রাজপথে শ্লোগান মুখর

বাৎস্যায়নের বাজারে মার্কিনি কনডমের এখন চাহিদা বেশি।

এ-সব প্রগতি না দুর্গতি, নির্নয় ন জনি

 

মনে করো, এতে আমি প্রীত হই কৃত হই

কিছুই হইনা আমি, ভাবিও না ওসব জেনে।

 

জমি জমা বন্ধক রেখেছি যাপিত জীবনের তরে

বিবেক প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছি নৈতিকতার ঘরে।

 

ইবনুন নূর-এর নূরের সরাইখানা ও আমরা

রাজনীতি-বিধুরেরা ধরিত্রীকে ত্রিধায় ভাগ করে নাম দিয়েছে; প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্ব। আর আর্থ-রাজনীতিক দর্শন খণ্ডন করেছে দুনিয়ার জল ও জমিন; সুদীর্ঘ সরল রেখার মতো আইল টেনে টেনে। কিংবা ক্যাকটাসময় কাঁটাতার এঁকে দিয়েছে বিবিধ বিভাজন রেখা; 'রাষ্ট্র' নাম  দিয়ে দুনিয়াকে অবারিত কেটে ছিঁড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে চলেছে একদল আলখাল্লাধারী কালপ্রিট। রাষ্ট্র চিরদিন এদের হাতেই রক্তাক্ত হয়; সম্ভ্রম হারায়।

মানুষই মানুষকে রাষ্ট্রকাঠামোর যাঁতাকলে ফেলে শ্রেণীতে বিদ্ধ করে। মানুষের ইতিহাস মূলত শাসন-শোষণ ও পীড়নের ইতিহাস। মানুষই মানুষ কে পীড়ন -শোষণ করে, করে এসেছে অনেকদিন। এভাবে একদিন আকাশ থেকে নেমে এসেছে ধর্ম;  কর্ম ফেলে বুদ্ধিজীবীরা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেছে বাদ-মতবাদ, নীতি-ভিতি, পদ্ধতি-দুর্গতি প্রভৃতি সমাচার।

নির্বোধ মানুষেরা মর্মবাদ ব্যতিরেকে ধর্ম আর মতবাদেই মেতে থাকে হরহামেশা। আর সন্তুরুপী শয়তানের দল জলৌকার মত চুষে নিতে থাকে  রক্ত অবিরত; নিত্য ছড়িয়ে রাখে ক্লেদ ও ক্লেশের আবেশ। পরস্পরের যুগপৎ প্রভুত্ববোধে প্রাণ হারাতে থাকে নিরীহ মানুষ! এই যখন অবস্থা! আকাশ ফুঁড়ে তখন উদয় হল এক আশ্চর্য জ্যোতিষ্কের। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি নেমে এলেন শ্মশ্রুমণ্ডিত দরবেশ বেশে তার পোশাকি নাম দার্শনিক কার্ল মার্ক্স। তার লিখিত 'ডাস-ক্যাপিটাল' ও কতিপয় মানবীয় ইশতেহার তীব্র আলোড়ন তুলেছিল, জর্মন থেকে গোটা দিগন্তে! মানুষে মানুষে বিভেদ ও শাসিতের প্রতি শাসকের শোষণের প্রতিবাদই ছিল তার লেখার প্রতিপাদ্য।

খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই তার এই কল্পনা ও পরিকল্পনা মানব মস্তিষ্কে ঘাই মারে। তার তীব্র ঢেউ এই বঙ্গেও এসে আচড়ে পড়েছিল, তখন বিংশ্ শতকের ক্রান্তিলগ্ন। চিরদিন শোষিত বাঙালীরা তার এই ফতোয়া বা ইশতেহার সহজেই গ্রহণ করে, অঙ্গে ও বহিরঙ্গে ধারণ করে দিওয়ানা প্রায় হতে লাগল। মানুষের প্রতি মানুষের শোষণ-বঞ্চনা আর নয়। মানুষ মানুষকেই শ্রেণীহীন ভালোবাসবে মন্ত্রে কোমল কঠিন, কণ্টকাকীর্ণ স্বপ্নমুখর জীবনের ব্রত নিয়ে মানুষে মানুষে শ্রেণীহীন ভালোবাসার বেদনা যাপনের নির্মোহ এক মানুষের নাম মুফিদুল আলম বা  ইবনুন নূর। যার চিন্তা-চেতনায় ও অবয়বে কার্ল মার্কসের অক্ষরের আলো বিকিরিত হতো। সেই আলোয়  আমরা ক'জন তার সাথে তর্ক-বিতর্কে নূরের সুরা পান করতাম।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন