কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অচিন্ত্য দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫


তিন অঙ্কের গল্প

 

(১)  

জগাই লস্করের পেটে বড় ব্যথা। ছেলে নেতাই নিয়ে গেল হাসপাতালে। পেটে পাথর হয়েছে, অপারেশন লাগবে। সরকারি দাতব্য হাসপাতাল হলেও কিছু খরচখরচা তো লাগলো। নেতাইএর বউ তো রেগে আগুন। নিজেদের পেট চলে না, বাপের পেট কেটে পাথর বার করা হচ্ছে! তা জগাই কিন্তু সেরে উঠল। হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিল কিন্তু এবার অন্য সমস্যা। নেতাইএর বউ ঘরে আনতে দেবে না। বলে – আরে কত লোক হাসপাতালে জীবনভর থেকে যায় – বেশ খাওয়াদাওয়া পাচ্ছে, ও বুড়োকে এখন আনতে হবে না। মাস পড়ুক, মাইনে পাও, তারপরে। ঘরে চাল বাড়ন্ত, সে খবর রাখো? নেতাই মিনমিনে স্বভাবের, বাপকে কবে আনবে মনস্থির করতেই হপ্তা দুয়েক লেগে গেল।

জগাই পথ চেয়ে থাকে। কেউ তো আসছে না! কী হলো, ওরা কি আর তাকে ঘরে নেবে না?  হাসপাতালের একটা পুরনো হলঘরের মতো জায়গায় আরও কিছু বাড়ি-না-ফিরতে-পারা নিঃসম্বল লোকের সঙ্গে সেও আছে কোনোরকমে।  ভালো লাগে না। মন ছটফট করে, ওরে নেতাই তুইও ত্যাগ করলি বাপ!

তা নেতাই এসেছিল। কিন্তু সারা হাসপাতাল খুঁজেও জগাইকে পেল না। কেউ কেউ বলল, ও বুড়ো তো কবে চলে গেছে। নিজেই।

(২)  

নেতাইএর বয়স সত্তর পার হলো। বউ আর নেই, ছেলে আছে। ছেলে আবার পীরিত করে বিয়ে করেছে। তার বউ ইস্কুলে ঝাড়াপোঁছার কাজ করে। রোজ নটা-পাঁচটা। নেতাইএর ভালো লাগে না। আজকালকার মেয়েগুলো সব বাহিরমুখো। নতুন শিক্ষে পাচ্ছে, এদের চরিত্তির ঠিক থাকে না, আগেকার ঘরের বউরা বরং ভালো ছিল।

একদিন হঠাৎ নেতাইএর বুকে ব্যথা উঠল। হাসপাতাল। বাইপাস না কি এক কাটাছেঁড়া করতে হবে। সরকারি দাতব্য চিকিৎসে, বাকি যা খরচখরচা ছেলে-ছেলেবৌ দিল। দুহপ্তায় নেতাই ভালো হয়ে উঠল। ডাক্তার ছুটি দিয়ে দিল। নেতাইএর চিন্তা শুরু হলো এবার। ভয় মেশানো চিন্তা। বাড়িতে নেবে তো ওরা? বিশেষ করে ছেলেবৌকে বিশ্বাস নেই। যদি বলে, বুড়ো হাসপাতালেই থাক! নেতাই শুনেছে ছুটি হয়ে গেলেও অনেক লোক হাসপাতালের আনকে-কানাচে পড়ে আছে। কেউ ফিরিয়ে নিয়ে যায় নি। কী হবে? আজ বিকেলে যদি ওরা না নিতে আসে, তাহলে…

(৩)  

বিকেলে কিন্তু ওরা এলো। ছেলে-বৌ সব গুছিয়ে ট্যাক্সি ডেকে নেতাইকে তুলল। নেতাই এর আগে সেই বিয়ের সময় একবার যা ট্যাক্সি চড়েছিল। বাড়িতে এনে তারা নেতাইকে বিছানায় শুইয়ে দিল। নেতাই নিজের হাতে চিমটি কেটে দেখল স্বপন দেখছে না তো… এরা তাকে সত্যি সত্যি বাড়ি নিয়ে এসেছো তো…

বাড়িতে আনল বটে, তবে নেতাইএর আর ঘরে মন নেই। মাঝে মাঝেই কোথায় সে চলে যায়, লোকে বলে মাথাটা গেছে। কেউ কেউ দেখেছে হাসপাতালের আশেপাশে নেতাই পাগলের মতো ঘুরে বেড়ায়। ঠেলাওলা, রিকসাওলা, পানের দোকান, বাসএর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন – যাকে সামনে পায় তাকেই জিগেস করে – বাবাকে দেখেছ ভাই, এইতো হাসপাতালে ছিল, কোথায় যে গেল, এইতো আমি নিতে এসেছি…

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন