কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫ |
কাঁকড়ার ঝাঁক
রাত হয়ে গেল এখনও গৌরীকে ফোনে পাচ্ছে না শঙ্কর। কী ঘটেছে জানাতে ওর ভাইয়ের নম্বরেও কল করে। কিন্তু প্রতিবারই, আউট অফ কভারেজ এরিয়া। বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা পকেটে রাখে সে। বিভ্রান্ত হয়ে সাগরের দিকে তাকায়।
ভোর-ভোর সে আর গৌরী নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছিল। উত্তাল সাগরের জলে বোঝাপড়া চলে
তাদের। ধীরে ধীরে নৌকা
থামায় চরে। সুন্দরী গরান কেয়া গাছের ঝোপে হারিয়ে যেতে চায় মন।
‘শঙ্কর, কাঁকড়া ধরি চল’।
পা কেমন ডুবে যাচ্ছে তাদের নরম কাদা মাটির ভেতর।
নানান রকম পোকামাকড়। কিসে যেন কামড় দিল পায়ে।
রক্ত ঝরছে।
চারধারে অসংখ্য গর্ত। ‘এই গর্তগুলো সব কাঁকড়ার’।
শঙ্কর একটা লম্বা লোহার রড ঢুকিয়ে দিল গর্তের ভেতর,
তারপর এক টানে বের করে আনলো কাঁকড়া। গৌরী কাঁকড়ার দাঁড়াগুলোকে বিশেষভাবে বেঁধে
পলিথিন প্যাকেটে রাখতে থাকল।
শঙ্কর শুকনো ডালপালা জোগাড় করে দেশলাই কাঠি জ্বেলে
দেয়। সেই দাউ-দাউ আগুনে কাঁকড়াগুলোকে ফেলে দিল। নুন-মশলা-তেল ছাড়াই কাঁকড়া-পোড়া
খুব তৃপ্তি করে খেতে থাকল দুজনে।
সাগরপারে তাদের নৌকাটা দুলে উঠছে। সুন্দরবনের মধুসংগ্রহকারীর দল গভীর অরণ্যের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। গৌরী শঙ্করের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়োতে থাকে সাগরপারের দিকে। এবার ঘরে ফেরার পালা। সুন্দরী গাছের ডালে পিঁপড়ের বাসায় ধাক্কা খায় সে। পিঁপড়ের কামড় খেয়ে গৌরী আরও জোরে ছুটতে থাকে। হঠাৎ গামছা-ঢাকা মুখ কয়েকটা লোক ঘিরে ধরে তাকে। কে এরা? সমাজবিরোধী? গৌরীর হাত-পা-মুখ একে একে বেঁধে ফেলে তারা। তাকে তুলে নিয়ে নৌকায় উঠে পড়ে, ভেসে যায় তারা নিমেষের মধ্যে। হতভম্ব শঙ্কর।
সূর্যাস্তের আলোয় ভাসছে কমলা রঙের জল, আছড়ে পড়ছে ঢেউ।
চিন্তায় চিন্তায় শঙ্কর আবারও ফোন করে গৌরীকে। অবুঝ
প্রত্যাশায় চোখ তুলে তাকায় সে সাগরের দিকে।
ভালো লাগল!
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন