কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫


লতাগুল্ম

নিরাময় ডিমের পোচ বানাতে ভালোবাসে। অমলেট বস্তুটা ওর পোষায় না। কুসুম ফেটে গেলে আর ডিম কী? কুসুম ফাটা ডিম আর ল্যাঙটের বুক পকেট সমান!  যেদিন কালো প্যানের সাদা ধার বরাবর ফাটাতে গিয়ে ডিমের কুসুম ফেটে যায় সেই দিনটাকেই অপয়া লাগে নিরাময়ের। যে দিন মন খারাপ থাকে, নিরাময়ের ভাষাটা কেমন আবছা হয়ে যায়। ভালো করে কথা বলতে পারে না। শব্দগুলো ডিমের ফাটা কুসুমের মত। ছত্রখান হয়ে গেছে। আর জুড়বে না। মন ভালো নেই। ভাষা ভালো নেই। 

উৎপলা কি বলবে? একটা ডিমও গোটা রাখতে পারে না নিরাময়? উৎপলা কত   ভালো রান্না করে! নিরাময় কোনরকম ম্যানেজ করে নেয়। সে শেফ নয়, পেট ভরাতে হবে বলে রান্না করে। উৎপলা অন্য জায়গায় থাকে। নিরাময় আলাদা থাকে। উৎপলাই তো একসময় স্কাইপে নিরাময়কে রান্না করতে শিখিয়েছে! এখন আর শেখাতে হয় না। একটা কাম চালাও রান্না সে করে নিতে পারে। উৎপলার গলা, ওর কথা, বাড়ি জুড়ে শুনতে পায় নিরাময়। আলমারির যেদিকে উৎপলার জামাকাপড় থাকে সেদিকটা খোলে না যাতে উৎপলার গন্ধ না ভেসে আসে! বছরে মেরেকেটে এক সপ্তাহ এসে থাকে উৎপলা! সে না থাকলেও তার জামাগুলো থাকে, থাকে তার বইগুলো, সারাবছর থাকে। যেদিন নিরাময়ের ভাষা ভালো থাকে না, সেই দিনগুলোয় উৎপলার কথা সে বেশি শুনতে পায়

আজ প্যানে ফেলার সময় ডিমের কুসুম ফাটেনি। অথচ অ্যানটি-ক্লাইম্যাক্স হল খেতে গিয়ে। ডিমের সাদা অংশ শেষ হতে হতে ভাতও শেষ হয়ে গেল। তারপর যেই চামচ দিয়ে কুসুমটা তুলে মুখে দিতে যাবে, চামচের কোণা লেগে ভেঙে  গেল কুসুম। সাদা প্লেটে লাল হলুদ কুসুম গড়াতে লাগলো রক্তের নদী হয়ে। ভাষা ভালো নেই। রক্ত পড়ছে। বাক্য তৈরী করতে পারছে না! 

উৎপলা ফ্রিজ খুলে দেখলো, কতদিনের পেঁয়াজ পড়ে ক্রিসপারে। অন্তত একমাস আগের। পিঁয়াজের শিকড় গজিয়ে ক্রিসপার থেকে বেৱিয়ে পড়েছে। ভাষা ভালো নেই। শব্দ পচে শিকড় গজিয়ে গেছে। ঠান্ডা ফ্রিজের দরজা ঠেলে লতিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করছে। কিছু বলতে চাইছে বেমক্কা। ফাঁকা বাড়িতে সুপ্রকাশ্য শব্দ খুঁজে ফিরছে পিঁয়াজপচা গন্ধ। উৎপলা জানে ভাষা ভালো নেই। মন ভালো নেই তার। নিরাময় আসবে না আর। 

    

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন