কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অঞ্জন সেনগুপ্ত

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

 

রূটম্যান




 

(২)  

 

পার হয়ে যায় গাড়ি -পার হয় গরু

 

একটা ফোন আসার পর থেকেই হরি ফুলবাড়ির নির্দিষ্ট জায়গা থেকে একটা লেজার টর্চের সরু আলো ফেলে গাড়িগুলোকে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। হরিদের ভাষায় বাক্সগুলো ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে গেলে হরিরা এগিয়ে যায় প্রথম গাড়িটির কাছে। এই বড় গাড়িতে দুটো কেবিন। প্রথমটি ড্রাইভার ও খালাসির জন্য। আর দ্বিতীয়টিতে থাকে মালিক পক্ষের কেউ। সে রাস্তার খরচ মেটায়। অর্থাৎ সুদূর বিহার থেকে বাংলায় ঢুকলেই রাস্তায় পয়সা ছড়াতে হয়। ঠিক যেন মৃত মানুষের জন্য খই ছড়ানোর মতো। বিভিন্ন জায়গায় সবাই যেন হাত পেতেই রয়েছে। আর এই সব হাতে কিছু গুঁজে দেওয়াই হল মালিকের খাস লোকের কাজ। অর্থাৎ যত ঝুট ঝামেলা সামলানোর দায়িত্ব তার।

হরিরা এগিয়ে গেলে দ্বিতীয় কেবিন থেকে মোটা টাকার বান্ডিল সমেত অন্ধকার কেবিন থেকে শুধু একটা হাত বাইরে বেরিয়ে আসে। হরি বান্ডিলটা নিয়ে বলে-কিতনে হ্যাঁয়?

-চালিশ।লোকটির মুখ দেখা যায় না।

-অর দো লাগেগা। হরি বলে।

-কিঁউ। তুমহারা আদমিনে বাতায়া এক এক গাড়িকে লিয়ে দশ। দো গাড়িকে লিয়ে কুল মিলাকে বিশ হুয়া না! ফির দো কিসকে লিয়ে ভাই? লোকটির মুখ গামছায় ঢাকা রয়েছে। তাই হরি বা হরেন কেউই চেষ্টা করেও তার মুখ দেখতে পায় না।

-ইয়ে হামারা লিয়ে নহি মাঙ্গতা। ইয়ে তো নাকা চেকিংমে ইনফরমারকে দেনে পড়েগা।

লোকটি চারটে পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে বলল- অব চলে?

-হাঁ যাইয়ে। হরি আর হরেন এবার নিজেদের টাট্টুর পিঠে উঠে বসে।

এমনটা অবশ্য রোজ হয় না। মাসে বড় জোর দুতিনবার। আসলে সবটাই নির্ভর করছে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বা গো-হাটা থেকে সংগ্রহ করা অবলাদের সংখ্যার উপর। সামান্য পাঠিয়ে তো আর বেশি লাভ হবে না। পুলিশ-বিএস এফ অফিসার এবং রুটম্যানদের দিয়ে থুয়ে হাতে যা থাকে তা আপাত দৃষ্টিতে মন্দ না হলেও লাভটা আর একটু বেশি হওয়া উচিত। ইদানীং সকলেরই খাঁই ভীষণ  বেড়ে গেছে। আবার সবাইকে সন্তুষ্ট না করেও উপায় নেই। মালদহ আর মুর্শিদাবাদের বাইরে বিহার থেকে শিলিগুড়ি হয়ে ফুলবাড়ির রুটটি নিয়ন্ত্রণ করে বিহার। ভাগ্যিস গোপালগঞ্জের সরফরাজকে অসম পুলিশ আটক করেছিল, তা না হলে এতদিন ধরে ঐ তো ছিল কিংপিন। একাই লুটেপুটে খাচ্ছিল। ও জেলে থাকায় তবেই না এই নতুন গ্যাং তৈ্রি হল। চাপ দাড়িতে বার কয়েক হাত বুলোতে বুলোতে মহঃ ইয়াকুব এই কথাগুলো ভাবছিল। দুটো বড় পাঞ্জাব ভর্তি করে এবার যা গিয়েছিল তেমন যদি মাসে অন্তত একটা করেও হয় তাহলে কিষানগঞ্জে তার সম্পত্তির পরিমাণ যা হবে তাতে দুপুরুষ পায়ের উপর পা দিয়ে খেতে পারবে। আসলে পদ্মাপারের হাটে এক একটি অবলা ষাট থেকে মাত্র এক লাখেই আটকে থাকে। আরো একটু চড়া হলে মধু ভান্ডটা বরং আরো একটু পূর্ণ হতো।

তবে এবার বিবিকে নিয়ে হজটা সেরে আসতেই হবে, দেখা যাক খোদার দোয়া  পাওয়া যায় কিনা। হঠাৎ ইয়াকুবের মনে পড়ে আজ তো তার শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা। একটা নামী হোটেলে কুমারসাবের আসার কথা। উনি খবর পাঠিয়েছেন। লোকটা বহুত হারামি আছে। শালা এক্কেবারে মক্ষিচুষ। কোন এক সময় উত্তরের করিডরে কাজ করত বটে । আর তার সুবাদেই এখনও মধু খেতে চাইছে। অল্পে আবার হারামিটার চলে না। পুরো পাঁচলাখ চেয়েছে। অথচ এখন আর খুব একটা উপকারে লাগে না। শালা বড়ই লালচি আছে। ইয়াকুব একবার ভেবেছিল যে এবার থেকে আর অপাত্রে কিছুই দেবে না। পরে মনে হল এই ধরণের লালচিরা উপকারের থেকে চট করে অপকারটা করতে পারে। এই করিডরের বর্তমান কমাডান্টের কান ভারী করতেই পারে! মনে মনে গজ গজ করতে করতে ইয়াকুব গোসল করতে চলে যায়।

প্রায় এক বছর ধরে রুটম্যানের কাজ করছে হরি আর হরেন। সবাই বুঝতে  পারছে এদের আর্থিক অবস্থার ক্রমশই উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে যে হচ্ছে তা কেউ জানে না। এমনকি এদের জিজ্ঞাসা করলে এমনভাবে পাঁচমিশালি সবজির মতো করে বলে যে ঠিক বোঝাও যায় না। তবে হরি যে এবার নিজেদের বাড়িতে দেয়াল তুলে উপরে টিন দিল তা কারোর নজর এড়ায়নি। আর সামনের বাড়ির মালতীর জানলার পর্দা যে প্রায় সময়ই একটু ফাঁক হয়ে থাকে তা হরি আড় চোখে দিব্বি বুঝতে পারে।

মালতী আর যমুনা দুজনেই একই গার্লস স্কুলে পড়ে। ক্লাস নাইনে। তবে দুজনেই ফেল্টু। তাই ভাবটাও বেশি। আবার দুজনেই হরি-হরের পাড়ার মেয়ে। দীর্ঘদিন থেকেই ওদের চেনা পরিচয়। পারিবারিক যাতায়াত তো রয়েছেই। গ্রামে এমনটা হয়েই থাকে। হরেনের অবস্থা আগাগোড়াই হরিদের থেকে কিছুটা ভালো। তাই হরেন বাড়ির দিকে নজর না দিয়ে বরং এর মধ্যেই দুবিঘা দুফসলি জমি কিনে ফেলেছে। আর এতে ওর বাবা এতটা খুশি হয়েছে যে প্রায় জনে জনে ডেকে হরেনের কীর্তির কথা অনেককেই বলেও দিয়েছে। দুবার মাধ্যমিক ফেল করা ছেলে যে হঠাৎ করে এতটা বৈষয়িক হয়ে উঠবে তা কোনদিন কল্পনাতেও ছিল না হরেনের বাবার। তার মানে হরেনের যে ইনকামটা বেশ ভালোই তা হরেন নিজের মুখে না বললেও ওর বাবা দিব্বি বুঝতে পারে। কিন্তু গ্রামের সবার মতো সেও বেশ ধন্দেই রয়েছে ওর কাজের ব্যাপারে। আগে যতবারই জানতে চেয়েছে ততবারই কী একটা যেন ইংরেজী কথা বলেছে যা কারোর মাথাতেই  ঠিকঠাক ঢোকেনি। তারপরে আর জানার জন্য বেশি চাপও দেয়নি। ঘরে টাকা এলেই হল। তাছাড়া ও তো আর টাকা ওড়াচ্ছে না। বরং বাড়িতে একটা গাড়ি কিনে এনেছে। আবার জমিও কিনেছে। হোক না জমিটা একটু নাবাল। দুফসলি ফলন হয়েও বর্ষার জলে জমিতে মাছও খলবল করে। এ তো পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো। তাই হরেনের লেখাপড়া তেমনটা নাই বা হল। এখন আর কোন ক্ষোভ নেই। মোদ্দা কথা ছেলের সংসারে মতি এসেছে। উঠতি বয়সের ছেলেদের তো পাড়ায় পাড়ায় দেখছে। তাড়ি গাঁজায় চোখ লাল করে বাপের হোটেলে খাচ্ছে আর মাঠে-ঘাটে পড়ে থাকছে। সে ব্যাপারে হরেন একেবারে খাঁটি সোনা। রোজ না হলেও মাঝে মাঝে রাতে কাজের ধান্দায় ওর বন্ধু দক্ষিণ পাড়ার হরির সাথে বেরিয়ে যায়। কিন্তু কখন যে বাড়ি ফেরে তা ও নিজেও জানে না। আসলে কাজটা যে বেশ দায়িত্বপূর্ণ তা অবশ্য একদিন জিজ্ঞাসা করায় ওর মাকে বলেছিল হরেন। এরপর মা আর বিশেষ কিছু জানতেও চায়নি। পরে অবশ্য স্ত্রীর মুখেই শুনেছিল হরেনের বাবা।

আজ হরি-হর দুজনেই যে ফন্দিটা এঁটেছে তাতে অবশ্যই মত রয়েছে মিতালী-যমুনার। অর্থাৎ আজ শনিবারের মাত্র চারটা ক্লাস করেই ওরা দুজনেই টাট্টুতে সওয়ার হয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিকে হাওয়া খেয়ে আসবে। প্রস্তাবটা প্রথমে  এসেছিল যমুনার কাছ থেকে। মালতী একটু ভেবে নিয়ে আর আপত্তি করেনি। আর হরেন তো এমন প্রস্তাবটা পেয়ে একেবারে লুফে নিয়ে সাথে সাথে হরিকে জানায়। আর তখনই ব্যাপারটা ফাইনাল হয়ে যায়।

বাগডোগরার চা বাগান মালতী-যমুনার দেখা। তাই সে পথে যেতে খুব একটা উৎসাহ নেই ওদের দুজনের। আজ ওরা কোথায় যেতে চায় তা হরি-হর ওদের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে। যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। যা খেতে চাইবে তাই খাওয়াবে। আর আজকেই হরি-হর সেই বহুদিনের উথাল পাথাল করা গোপন কথাটি ওদের বলবে। তাই হরি-হরের কাছে আজকের দিনটি একটি স্মরণীয় দিন। আর তাকে আরো বেশি মধুময় করে রাখার জন্য ওদের আর একটা আলাদা মতলবও আছে। সেটা অবশ্য মালতী-যমুনা জানে না।

মালতী-যমুনার ইচ্ছে অনুযায়ি ওরা চলেছে রাঙ্গাপানির উদ্দেশে। শুনেছে ওখানে নিহারিকা বলে যে চা বাগানটি তৈ্রি হয়েছে তা নাকি মাত্র বছর দশেকের পুরনো। চারদিকে সবুজের সমারোহ। বাগানটি প্রায় রাঙ্গাপানি গ্রামের মাঝেই যেন গড়ে উঠেছে। তাই বাগানটিও যেমন দেখা হবে সেই সাথে গ্রামটিও ঘুরে দেখা যাবে।

সত্যিই উড়ে চলেছে ওদের দুটো টাট্টু। পেছনের সওয়ারি দুজনেই প্রায় জড়িয়ে ধরে রয়েছে টাট্টুর মালিকদের। গ্রামে আরো কয়েকটি বাইক থাকলেও এর আগে কেউ কোনদিনই কারোর বাইকে চড়েনি! এই প্রথম অভিজ্ঞতা। তাই ওদের বুক শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে। আবার ভালোও যে একেবারে লাগছে না তাও নয়। দামাল বাতাসে উড়ে চলেছে মালতী-যমুনার ঝুলে থাকা চুলের বেণী। যেন বেয়াড়া তুরগ পাগলের মতো ছুটে চলেছে আর পুচ্ছটিও ক্রমশই সোজা হয়ে যাচ্ছে! হরেনের টাট্টুটি পেছনে থাকায় যমুনা মালতীর চুলের বেণীকে দেখতে দেখতে এমন দৃশ্যের কথাই ভাবছিল। সে ইতিহাসে পড়েছে রানা প্রতাপের ঘোড়া চৈতকের লেজটাও দ্রুত ছোটার সময় এমনই সোজা থাকত। ও বুঝতে পারল যে ওর বেণীটাও তাহলে এমনই সোজা হয়ে রয়েছে। অথচ যমুনা ভয়ে পেছনে হাত দিয়ে তা পরখ করতে পারছে না।

সদ্য সদ্য দুবাক্স পার করে দুজনের হাতেই এখন একেবারে নগদ কুড়ি হাজার করে টাকার উষ্ণতা ওদের মনটাকে সব সময় উৎফুল্ল করে রেখেছে। খালি মনে হচ্ছে চল পানসি বেলঘরিয়া। তাই বাগানে যাওয়ার আগেই নতুন ঝাঁ চকচকে রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে ঘ্যাঁচ করে টাট্টু দুটো দাঁড়িয়ে যাওয়ায় রেস্টুরেন্টের মালিক গলা বের করে একবার খদ্দের দুজনকে দেখে নিয়ে মৃদু হাসল। সে এক ঝলক দেখেই বুঝতে পারছে যে দুটো পাখিকেই এই প্রথম উড়িয়ে আনা হয়েছে বাড়ির বাইরে! ওদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে! কুঁচকে যাওয়া পরনের স্কুলের পোশাক ঠিক করতে করতে ওরা রেস্টুরেন্টের  একটা কোণ দখল করে বসে পড়ে। পর্যাপ্ত খাবারের অর্ডার পেয়ে শুরু হয়ে যায় কর্মচারীদের ব্যস্ততা। মালিক মাঝে মাঝেই আড়চোখে ওদের দেখে আর মনে মনে ভাবে এবার থেকে তার মনোরমা রেস্টুরেন্টে কমপক্ষে দুটো কেবিন বানাতেই হবে। আর তাতে ঝোলানো থাকবে বেশ ভারী পর্দা। বাইরে জ্বলবে একটা লাল ছোট বাল্ব। ঠিক যেমনটা অপারেশন রুমের বাইরে থাকে।

আসলে ওদের কোন দোষ নেই। এটা বয়সের ধর্ম। এমন সান্নিধ্য তো কেউ আগে কোনদিনই পায়নি। সেই সাথে ইচ্ছেমত ভালো ভালো খাওয়া। সবার শেষে একটা করে কোলার ক্যান। হরি-হরেরা জানে আজ আর পকেটের দিকে তাকালে চলবে না। যখন দিল মাঙ্গে মোর তখন মনের কথাই শোনা উচিত। ওরা টাট্টুর আরশিতে একবার মুখ দেখে অবিন্যস্ত চুলগুলোকে ঠিক করে নেয়। মালতী-যমুনাও এই সুযোগে একবার নিজেদেরকে দেখে নেয়। আর আরশিটাও সাথে সাথে দুজনকেই চোখ টিপে হাসে।`

চা বাগানের অফিসের সামনে টাট্টু দুটোকে রেখে ওরা যখন ঢুকতে যায় তখন গ্রামের লোকেরা অচেনা ছেলে-মেয়েদের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। সাধারণত মালিকদের নিজের লোক ছাড়া তেমন কেউই আজো এই বাগানে বেড়াতে আসেনি। একটু এগিয়ে গিয়েও হরি থমকে দাঁড়ায়। দুপা পিছিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে – একটু চা-বাগানটা ঘুরে দেখা যাবে?

এক সাথে জটলা করা গ্রামবাসীরা কেউ কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ে। চারজন যুবক-যুবতী প্রজাপতির মতো উড়তে উড়তে এক সময় চা-বাগানের মধ্যে হারিয়ে যায়। রোদ ক্রমশই ফিকে হতে শুরু করে ।

সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বাড়ির লোকদের অস্থিরতা বেড়েছে। সঠিকভাবে কেউ বলতেও পারছে না মালতী-যমুনা স্কুল থেকে কখন বেরিয়েছে। খবর যা পাওয়া গেছে সবটাই চিলে কান নিয়ে যাওয়ার মতো। তবু ভয় হয়। দিন কালের ভয়। চারদিকে এমন তো অনেক কিছুই শোনা যায়। তবে একটা খবর পাওয়া গেছে যে মালতীর বাড়ির উলটো দিকে যে হরির বাড়ি সে নাকি সেই দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। কখন ফিরবে বলে যায়নি। আবার যমুনার বাবাও খবর পেয়েছে যে ওদের পাড়ার হরেনও নাকি আজ দুপুর থেকেই বাড়িতে নেই। একেবারে দুটো পরিবারের মধ্যে অস্থিরতা যে ক্রমশই বাড়ছে না তা নয়। তবে যৎসামান্য আশার আলো টিমটিম করে জ্বলছে হরি-হরের ফেরার পথ চেয়ে। ইদানীং মেয়ে দুটোই নাকি ওদের সাথে আড়ালে আবডালে কথা বলত।

তবে ছেলে দুটো একেবারে বকাটে উচ্ছন্নে যাওয়া নয়। বেশ ভালই নাকি উপার্জন করে। দুজনে দুটো নতুন পালসার বাইক কিনেছে। এত টাকা যখন আছে তার মানে বেশ ভালই কামাইও আছে। দুটো পরিবারের বুকের চাপটা হয়তো একটু কমে আসে। কারণ এখন শেষ ভরসাই হচ্ছে হরি-হরের দেখা পাওয়া।

ব্যাপারটা শুধু আর চার বাড়ির ঘরের মধ্যেই আটকে থাকেনি। মালতীর পাড়া আর যমুনার পাড়ার কারোর আর জানতে বাকি নেই যে ওরা কার সাথে গিয়েছিল। তলে তলে যে ওরা এতদূর এগিয়ে গিয়েছে তা ঘুণাক্ষরেও বাড়ির লোকেরা টের পায়নি। তাহলে না হয় মেয়ে দুটোর উপরে নজরদারি রাখাই যেত। ছিঃ ছিঃ! এভাবে লোক হাসানোর কোন মানে আছে! বাড়ির সকলেরই যে মাথা কাটা গেছে এটা বাড়ির অভিভাবকেরা বুঝলেও যাদের নিয়ে এত হৈচৈ তাদের খুব একটা হেলদোল হল না। বরং তারা বুঝতেই পারছে না কেন তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হল। হ্যাঁ, এটা সত্য যে তারা না হয় হরি আর হরের বাইকে করে একটু রাঙ্গাপানিতে নতুন চা বাগান দেখতে গিয়েছিল। তারা রেস্টুরেন্টের ভালো খাবার খেয়েছিল। আর খাবে নাই বা কেন! স্কুল থেকে তো আর বাড়ি ফেরা হয়নি। তাই বেদম খিদেও পেয়েছিল। আর ওরা যখন খাওয়াতে চাইছে তখন বোকার মতো না খাওয়ার কোন মানেই হয় না। তবে মাঝখান থেকে মালতী এবং যমুনার স্কুল যাওয়া আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। এতে মালতীর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলেও যমুনার বেশ ভালই লাগছিল। এই নিয়ে সে দুবার একই ক্লাশে আছে। আর একই পড়া দুবছর ধরে পড়তেও ভালো লাগছিল না যমুনার। নেহাত স্কুলে না গেলে বাড়িতে খেটে মরতে হবে, তাই রোজ স্কুলে যাওয়া। ক্লাস নাইন কি আর কম উঁচু নাকি! এর বেশি শিখে আর হবেটাই বা কি! সেই তো বিয়ে করে সংসার সামলানো! ধান জ্বাল দেওয়া, ঘুঁটে দেওয়া, গোয়াল পরিষ্কার রাখা, সোডা কাচা! মা-ঠাকুমারা তো একই কাজ করে আসছে সেই কবে থেকে। ওরা তো কিছুই লেখা-পড়া জানে না। তাতে ওদের ক্ষতিটা কি হয়েছে শুনি! তাছাড়া সে তো আর চাকরি করবে  না। কাজেই এ বরং মন্দের ভালোই হয়েছে। আর হরেন ছেলে হিসেবে ভালো ছেলে। একেবারে পালটি ঘর। এই বয়সেই গাড়ি কিনে ফেলেছে! দুদশ গাঁয়ে কজনেরই বা গাড়ি আছে! আর হরেনকে তো সেই ছোট থেকেই দেখে আসছে। আগে তো দাদার বন্ধু হিসেবে বাড়িতে রোজই আসত। ইদানীং চাকরী করে বলেই আর আসা হয় না। কি সুন্দর নাম চাকরিটার- ‘রুটম্যান! চুরি তো আর করে না! বাড়ির লোকেরা ওর থেকে ভালো ছেলে পাবেই বা কোথায় শুনি! তাছাড়া সেদিন চা বাগানের আবডালে গিয়ে সেই প্রথম হরেন তাকে ছুঁয়েছিল! আর সাথে সাথে ওর সারা শরীরে একটা অদ্ভুত ধরনের অনুভূতি হয়েছিল! কিন্তু তার কোন ব্যাখ্যা সে করতে পারবে না! কিছুটা সময় কাঁধে হাত রেখেছিল। কী ভারী হাত রে বাবা! পুরুষদের হাত বুঝি এতটাই ভারী হয়! ওদের মনে যে আর একটা দুষ্টুমি লুকানো ছিল তা মালতী-যমুনা কেউ আগে টের পায়নি। হঠাৎ করেই ওরা চা গাছের দুটি পাতা একটি কুঁড়ি ছিঁড়ে ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওদের হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর বলেছিল- ‘আমাদের ভালোবাসা তুমি স্বীকার কর। কোন একটা সিনেমায় শাহরুক খান নাকি কাজলের সামনে এই ভাবেই একটা লাল গোলাপ দিয়েছিল। যমুনা সিনেমাটা টিভিতে দেখেছে। অবশ্য মালতী সেদিন যতটা লজ্জায় কুঁকরে গিয়েছিল ওর তেমনটা হয়নি। বরং বেশ একটা নরম স্বপ্ন সারা মনটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। আর ফাঁকা রাস্তায় যখন হরি-হর দুজনেই একসাথে গাইছিল –‘এ পথ যদি না শেষ হয়—‘ তখন নিজেকে সুচিত্রা সেনের মতোই মনে হচ্ছিল! আজো ভাবলে তেমনটাই মনে হয়। যমুনা ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর রোমকূপগুলো থরথর করে কাঁপছে! আর একটু শীত শীত করছে।

দিন সাতেকের মধ্যে একদিন রাতে ফোনটা এসেছিল হরির কাছে। বিমলের ফোন। এতে অবাক হওয়ার মতো কিছুই ছিল না। এর আগে বহুবার যখন তখন খবর দেওয়ার জন্য বিমলের ফোন এসেছে! কিন্তু সেদিন বিমল যা শোনাল তাতে সারা আকাশ যেন হঠাৎ করে তাদের মাথায় ভেঙে পড়ল!

-কোন খবর আছে নাকি বিমলদা?

-হ্যাঁ, আছে বলেই তো তোমাকে ফোন করলাম।

-এবার কিন্তু দেখ হাতে যেন একটু সময় থাকে। আসলে বিহারের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বা গো-হাটা থেকে মাল কিনে সব কাজ সামলাতে ওদের প্রায় দিন চার-পাঁচ লেগে যায়। তাই ওরা বলছিল হঠাৎ করে বললে ওদের পক্ষে মুশকিল হয়ে যায়। পাঁচ-দশটা মালের জন্য তো গাড়ি পাঠানো যায় না। হরি ওদের অসুবিধার কথাই বলল।

-একটা দুঃসংবাদ আছে হরি। বিমলের গলাটা একটু কেঁপে যায়।

হরি এক লহমায় নির্বাক হয়ে যায়। তারপর বার কয়েক ঢোক গিলে বলে- বল শুনছি।

-আমাকে নাকা চেকিং থেকে থানায় তুলে নিয়েছে।

-কিন্তু বিমলদা, তুমি তো বেশিদিন হল নাকায় আসনি! তাহলে?

-বুঝতে পারছিস না! কেউ হয়তো টের পেয়ে আমার বিরুদ্ধে বড় সাহেবের কাছে চুকলি কেটেছে। নতুবা কেউ বুঝে ফেলেছে যে আমার সাথে তোমাদের যোগাযোগ আছে! তোমরা কাউকে আমার নাম বলনি তো?

-তুমি কি পাগল হয়েছ বিমলদা। কেউ কি নিজের পায়ে কুড়াল মারে! তবে এতে তো তোমার চাকরিটা বহাল থাকল। কিন্তু আমরা এখন কীভাবে খবরাখবর পাব বল তো? একটা অন্য কাউকে ফিট করা যায় না? হরির গলায় একরাশ আকুতি ঝরে পড়ে।

-আরে ধুর পাগল। এসব কথা কি কাউকে ঐভাবে বলা যায় নাকি। তাহলে আমার চাকরীটাই নট হয়ে যাবে। এই ঘটনার পরে এখন নিজের ছায়াকেও আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। কার মনে যে কি আছে তা তো আর পড়া যায় না! তবে আমি এখনও বুঝতে পারছি না আমার এবং সেই সাথে তোমাদেরও এত বড় ক্ষতিটা কে করল!

-তাহলে এখন আমরা খবরাখবর কীভাবে পাব বিমলদা? আমাদের তো কারবার চৌপাট হয়ে যাবে। একটা কাউকে ফিট করে দিয়ে যাও বিমলদা। হরির ভীষণ কান্না পায়।

-শোন, আরো একটা দুঃসংবাদ আছে।

-এরপরেও!

-পুলিশ কমিশনারেটের বড় অফিসারে্রা এবার থেকে রাতে চেকিং-এ থাকবে। মাসে একবার করে পারাপার হলে না হয় খবরটা অত চাউর হত না। কিন্তু তোমরা তো প্রত্যেক সপ্তাহেই ট্রাক ভর্তি মাল পারাপার করাচ্ছিলে। হয়তো সেটাই অনেকের নজরে পড়েছে। এখন চোখ-কান খুলে কাজ করবে। একটু ভুল করলেই একেবারে শ্রীঘরে চলে যেতে হবে। এখন আমি রাখছি হরি।

বিমলের কাছ থেকে এমন মর্মান্তিক দুঃসংবাদ পেয়ে হরির সব স্বপ্নই তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল! কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকার পরে হরেনকে ফোন করতেই সে বলে- আরে হরি বলিস কিরে! এই কিছুক্ষণ আগেই ফোন এসেছিল। তোর বাড়িতেই যাচ্ছিলাম। ওরা আজ ছোট-বড় মিলিয়ে তিনবাক্স অবলা পাঠাবে। এখন ওরা শুধু আমাদের সিগনালের অপেক্ষায় আছে।

ফোনের দুই প্রান্তের কথা থেমে যায়। যেন ওরা ভুলেই গেছে যে এতক্ষণ ওরা ফোনে কথা বলছিল। একটু পরে হরি বলে- ঠিক আছে তুই কি এখন একবার আসতে পারবি? পারলে আয়। একটা না একটা পথ তো বের করতেই হবে। হরি ফোন ছেড়ে দেয়।

ওরা যখন নাকা চেকিং-এর কিছু দূরে একটা গাছের নিচে গিয়ে পৌছাল তখন বেশ পরিষ্কার নাকায় থাকা পুলিশদের দেখা যাচ্ছে। দুজনেই সিগারেট ধরাল। বেশ কয়েকটা টান দিয়ে হরেন বলে- হ্যাঁরে হরি, তোর মাথায় যে প্ল্যানটা ঘুরছে তা একবার বলবি?

চোখ সরু করে হরি নির্লিপ্তভাবে সিগারেটে টান দিয়ে চলে। বাতাসে রিং বানাতে চায়। কয়েকটা হলেও পুরোটা হয় না। হরেন অধৈ্র্য হয়ে বলে- কিরে হরি, কিছু বলছিস না যে!

-করোনা হয়েছে।

-কার হয়েছে।

-বিমলদার।

-এই তো তুই বললি ওকে থানায় পোস্টিং দিয়েছে।

-হ্যাঁ, সেখানে কি ওর করোনা হতে পারে না?

-না, তা অবশ্যই পারে। কিন্তু আজকেই জয়েন করল আর সাথে সাথে করোনা ধরা পড়ল!

-এবার নাকায় চল। তুই কিছুই বলবি না। যা বলার আমিই বলব। হরি ওর বাইকে স্টার্ট দেয়।

নাকায় বাইক দাঁড় করিয়ে হরি দেখল সে একজনের মুখ চেনে। হরিদের দেখে সে মুখ তুলে তাকাতেই হরি বলে- দাদা, এখন বিমলদা কেমন আছে বলুন তো?

-কেন বল তো? তুমি কি বিমলকে চেন নাকি?

-হ্যাঁ, অবশ্যই চিনি। না, মানে শুনলাম তো যে বিমলদার করোনা হয়েছে। তাই জানতে এলাম সে এখন কোন হাসপাতালে আছে। নাকি বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে!

-তুমি কী বলছ! ওর তো আজ থানায় রিপোর্টিং করার কথা। তোমাকে কে বলল খবরটা? মুখ চেনা পুলিশটি জানতে চায়।

-ওদের পাড়ারই একজন। তাহলে কি সে আমাকে সাত সকালে ঢপ দিল নাকি! দেখছেন দাদা দিন কাল কী পড়েছে। এই করোনা বা বসন্তের নামে কখনও মিথ্যা কথা বলতে আছে নাকি! কেউ জানে না কার ঘাড়ে কখন লাফিয়ে পড়বে। হরি বার কয়েক মুখে চুক চুক শব্দ করে মাথা নাড়ে।

-বিমলের বাড়ি কি তোমাদের গ্রামে? পুলিশটি জানতে চায়।

-না, আমাদের পাশের গ্রামে। আর ঐ গ্রামে আমার পিসির বাড়ি। ওখানেই আলাপ আর কি! তা হঠাৎ করে বিমলদাকে বদলি করল কেন? বেশি দিন তো আর নাকায় আসেনি! তাহলে এটা কি রুটিন বদলি? হরি জানতে চায়।

পুলিশটি পাশের সহকর্মীর দিকে আড় চোখে দেখে নিয়ে নিচু স্বরে বলে- শুনেছি বিমল কেস খেয়ে বদলি হয়েছে।

-কেস! সে তো পুলিশ করে আমাদের উপরে। পুলিশদের উপরে কেস দেওয়ার মতো লোক আছে নাকি?

-আরে এ কেস তেমন কেস নয়। এ হল ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত। কেউ হয়তো বিমলের নামে চুকলি কেটেছে। আবার সত্যিও হতে পারে। তবে এবার থেকে বেশ কড়াকড়ি হবে শুনছি। পুলিশটি হরির দেওয়া সিগারেট টানতে টানতে বলে।

-আসলে আমাদের আবার একটা পেশেন্ট রয়েছে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে। অবস্থা বিশেষ ভালো না। প্রায় রাতেই যেতে হয়। বিমলদা সবই জানত। আজও যেতে হবে। কিন্তু বিমলদার খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল! বেশ ভালো মানুষ ছিল। ঠিক আছে আজ চলি। হরিরা চলে যায়।

মোড়ের চায়ের দোকানে বসে হরি বলল- কি বুঝলি হরেন?

-এরপর থেকে আমাদের আর করে খেতে হবে না। দিব্বি সামান্য কাজ করে খাচ্ছিলাম। শালা তাও লোকের সইলো না। হরেন চায়ে চুমুক দিয়ে বলে।

-বুঝলি হরেন, আমার মনে হচ্ছে বিমলদাকে যে বাক্স প্রতি একহাজার করে দিতাম সেটা সে হয়তো একাই খেত। অন্যকে সামান্য ভাগ দিলে তো আজ নাকা ছাড়তে হত না। এখন ওর যেমন আম-ছালা দুটোই গেল তেমনি আমাদেরও অনেক অসুবিধা হয়ে গেল। কাকে যে বিশ্বাস করে ম্যানেজ করব সেটাই বুঝতে পারছি না। হরি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।

-তাহলে আজ রাতের অপারেশনের কি হবে হরি? বিহারে ওদের তো জানিয়ে দিতে হবে। হরেনের কথা শেষ হতে না হতেই একটা ফোন আসে। হরেন মোবাইল অন করে দেখে সেই লোকটির ফোন যে আগে কথা বলেছিল। হরেন বলে- হাঁজি, বাতাইয়ে।

-তুমহারা উধার কেয়া চল রহা হ্যাঁয়। হালচাল ক্যাইসি হ্যাঁয়?

-পুরা তো ঠিক নহি হ্যাঁয়। পুলিশকো বিচ যো ইনফরমার থা উসকো ট্রান্সফার হো গিয়া। আভি খবর লেকে আয়া কি কাল সে নাকা চেকিং বহত টাইট হোগা। এক মিনিট লাইন পর রহিয়ে। এবার হরিকে বলে- ওদের তাহলে কি আজ আসতে বলব? হরি মাথা নেড়ে সায় দেওয়ায় হরেন আবার বলে- শুনিয়ে, আজ ভেজ দিজিয়ে। কিতনে ভেজেঙ্গে?

-তিনবাক্স।

-ঠিক হ্যাঁয়। এগার সে বারো বাজনে কা বিচ ইয়ে নাকা ক্রশ করনে হোগা। হরেন ফোনটি পকেটে ঢুকিয়ে হরির উদ্দেশে বলে- আজ ঠিকঠাক পার করিয়ে দিতে পারব তো?

-আশাকরি আজ তেমন অসুবিধা হবার কথা নয়। তবে এর পরে যে কী হবে তা ভগবানই জানে! বুঝলি হরেন, তুই তো দিব্বি এক বিঘা নাবাল হলেও দুফসলি ধানি জমি কিনে ফেলেছিস। আর আমি তো ভেবেছিলাম এবার পুরনো ঘরের টালি হটিয়ে লাল রঙের টিন দেব। আর কাঠের সিলিং বানাবো। কিন্তু এমনই আমাদের কপাল আর হয়তো হবে নারে! হরি একটা ফৎ করে নিঃশ্বাস ফেলে।

আজ রাতে দুবার একই রাস্তায় চক্কর মারার পরে নাকা চেকিং-এ হরিদের বাইক আটকে একজন অফিসার জিজ্ঞাসা করেন- তোমরা মাঝে মাঝে কোথায় যাও বল তো?

-স্যার, আমাদের একজন পেসেন্ট রয়েছে হাসপাতালে।

-কিন্তু রাতে তো কোন ওয়ার্ডেই ঢুকতে দেওয়া হয় না! তাহলে তোমরা গিয়ে কী কর? অফিসারের গলায় কৌ্তুহল ঝরে পড়ে।

-আসলে স্যার, আপনি ঠিকই বলেছেন। পেসেন্টের অবস্থা ভাল নয় বলেই আমাদের রাতে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছে। তাছাড়া আমরাও মাঝে মাঝে বাইরে থেকে কাঁচের দরজা দিয়ে দেখে আসি। হরি বেশ গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলে দেয়।

-ঠিক আছে তোমরা যাও। এই বলে অফিসার রাস্তার পাশের ঘরে গিয়ে ঢোকেন।

-ভাগ্যিস উনি আসার আগেই আমাদের বাক্স নাকা চেকিং পেরিয়ে গেছে। তা না হলে আজ আর রক্ষা ছিল না। হরির কথায় হরেন মাথা নাড়ে।

এবার শিলিগুড়ি কমিশনারেটের যে অফিসারেরা নাকা চেকিং-এ টহল দিতে আসেন তারা সত্যিই বেশ কড়া। মুখ দেখলেই কাছে যেতে ভয় হয়। নিশ্চয়ই ওদের কাছে এ ব্যাপারে একেবারে পাক্কা খবর রয়েছে। কিন্তু বামাল সমেত ধরা পড়ছে না। তবে পুলিশের সোর্স বলছে কিংপিনের বাড়ি বিহারে আর নাম হল ইয়াকুব। কিন্তু নির্দিষ্ট করে অঞ্চলের নাম বা গ্রামের নাম এখনও জানা যায়নি।

(ক্রমশ)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন