কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

অমলেন্দু চক্রবর্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প


পৃথিবী আবার সুস্থ হবে


এ্যান্টোনি বলল, কী রে, তোর শরীর মেয়েদের মত এত পেলব তুলতুলে, কী করে পটাবি! প্রথমটায় ভাবলাম তোকেই টোপ্ করবো। তুই তো শ্লা টোপাকুল বেরিয়ে গেলি; আড়ালে ওরা কি বলে জানিস? বলে কাঁচা সবুজ মরিচ আর নুন দিয়ে নুনুটা ! বেশ তারিয়ে তারিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আর ঐ যে নূপুর বলে মালটা বলেক না অ'কে পুরোটাই আহ্ মা'ইরি। কী! রিঅ্যাকশন জানিস? মীনাকছী্র গাল দুটোগুলা- -বী- - হ‌ই গেলো। নীতা, কি বলল জানিস? বলল, "মর্দাঙ্গি দেখতে হলে এ্যান্টনি, এ্যান্টনির মত মাল্ বহুত্ কম। এতসব বলে এ্যাকশন্ শ্যু-পরা ডান পা নাচাতে লাগলো। লকডাউন কেটে সবে স্কুল  কলেজের দিন শুরু হচ্ছে। সব‌ই যেন নতুন নতুন। অভিভাবক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের 'ট্যাগ‌অব‌ওয়ার' চলছে। প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য আমরা অনলাইন ক্লাস নিয়েছি, ওপরের ক্লাশে প্রমোশন দিয়েছি। বকেয়া আমাদের হকের। অভিভাবক বলছেন, কাজ নেই, আর্নিংলেশ, বাচ্চাদের এন্ড্রয়েড দিতে পারিনি, তাই ওরা অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। আমাদের রেহাই দাও।

মলি ক্লাসের সবচেয়ে বেশি মিশুকে। পড়ালেখায় মানে সব ব্যাপারেই এক্স্ট্রা অর্ডিনারি। তিমিরের এই পেলবতা একমাত্র ঐ আনদেখা করে। কারণ তিমিরও পড়াশোনায় ভালোই এবং হেল্পফুল। মলি তাদের পাড়ার মেয়ে। জোরে জোরেই  গান গায়, কথা বলে। গোল গোল মুখমন্ডল, তৈলাক্ত ত্বক, অন্যদের হলে ভালো লাগে না। মলিকে কী সুন্দর লাগে! পুজোটুজোতে তসরের শাড়িতে ওকে হেব্বি লাগে। কোঁকড়ানো চুলও দূগ্গা দূর্গা লাগে। দেখো এতো ভালো ভালো, একটুও অহঙ্কার বলতে নেই। সন্ধ্যের অন্ধকার নামছে। টানা বেশ কদিন সাইক্লোনিক এফেক্টে অঝোর অবিরাম বৃষ্টিতে ঘর থেকে বেরোন‌ই যাচ্ছিল না। তবুও কলেজ যখন খুলেই গেছে, আর নয়। এবার যত‌ দূর্যোগ‌ই হোক, আর নয়।

নূপুর একটা অসভ্য মেয়ে, এ্যান্টোনি কেমন সব বন্ধুদের সামনে ফলাউ করে হাসির খোরাক বানালো। নূপুর মিনাকছি্ মলি'র মতো হয়ে দেখাক! সে হবার নয়। হ্যাঁ এ্যান্টোনির লুকটা্ ভালো লাগে, তার মানে এই নয় যে, অন্যকে টোন টিটিকিরি করতে হবে। স্ট্রিটল্যাম্পগুলি জ্বোলে গেছে। সাঁকোর দুই ধারে নানান বয়সের মানুষ বসে গল্পসল্প করে, নাটক সিনেমা রাজনীতি বাজারদর  লকডাউনের ক্ষতি লাভ। ঐ ধারের দেউটিতে টিম টিম করে আলো জ্বলে ওঠে।  এখানে গ্রামশহর মিলেমিশে একাকার। মলিদের বাড়ি, মলি এখন ওয়াশরুম্ সঙ জোর গলায়। ঐ যে আজকাল শ্রীলঙ্কার মেয়েটি গেয়েছে না! কোটি কোটি টাকার মার্কেটিং। একেই বলে স্টার! হুঁ হুঁ! সব কি বোধোগম্য হয়, নাকি হতে পারে? সুর যে সবার ভিতর সমাহিত। বুঝে, না বুঝে শরীরে দোলা দেবে‌ই। এরকম "মা হিথে লঙ্গানমা দাওতোনা। পেসেকা পাতালেনা ম‌ই নারী সুকুমারী…”। বাংলা করলে এ রকম হয়, "মা একটা বিয়ে দে না, আমি কারো প্রেমে পড়ে গেছি"। কী জানি বাবু, কী যে আছে এই গানটিতে, এত মার্কেটিং সঙ্গীতের জগতে অনেক দিন পর। পরের দিন আরোও সুরেলা কণ্ঠে মলি স্টোরিতে ছেড়েছে। কানে তার  লম্বা লম্বা দুলপাশা। ঠোঁটে তার লাল লিপস্টিক। ভোরের সূর্যকে মনে করিয়ে দেয়। আবার কদিনের ঐরম সাইক্লোন উঠলে কেমনে হয়! না না, সে দেশ দুনিয়ার বিশাল ক্ষতি। তিমির! এই তিমির! তুমি কি সবুজে একাকার তোমাতে গানে পেয়েছে বৃষ্টিতে ঘামে আকাশে বাতাসে আলোতে অন্ধকারেতে কার ছবি দেখছো গো কে? বলবো! বলি, বলি না একবার প্লীজ! একবার, শুধু একবার‌ই বলব। মলি…

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন