কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

দেবরাজ গোস্বামী

 



ব্যক্তিগত কিনা ঠিক জানি না, তবে গদ্য বলেই মনে হচ্ছে   

                       

ছবি আঁকবো বলে রবীন্দ্রভারতীর দৃশ্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম ১৯৯২ সালে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবার পরেই। তখনই প্রথম শুনি তোমাকে চাইঅ্যালবামটা। বলাবাহুল্য সেই সময় এমন কনটেম্পোরারি লিরিক্স এবং কাব্যগুণ সম্পন্ন বাংলা গানের আকাল চলছিল। ফলে সুমনের গানগুলো বেশ পছন্দ হল, লিরিক্স মুখস্থ হয়ে গেল এবং  নিজের অবচেতনেই ছবি আঁকতে আঁকতে গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠার বিদঘুটে বদঅভ্যাস হল। আমাদের ক্লাস হত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ক্যাম্পাসের মধ্যে। তখন সেখানে ছিল ভিস্যুয়াল আর্টস, নাটক আর মিউজিক ডিপার্টমেন্ট। ঠাকুরবাড়ির মূল ভবনের পাশে একটা পাঁচতলা বাড়ির তিনতলায় চলতো রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্লাস, আর চারতলায় আমাদের গ্রাফিক্স ডিপার্টমেন্ট। ডিপার্টমেন্টের জানলা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখতে পেতাম অনেক নীচে রাস্তায় ঠেলায় করে মাল টেনে নিয়ে যাচ্ছে বা মোট বইছে প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আসা প্রান্তিক মানুষজন। আর সেই সঙ্গে শুনতে পেতাম তিনতলায় মিউজিকের ছাত্রছাত্রীদের সমস্বরে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান। এটা শুনতে শুনতে এমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল যে অনেকসময় খেয়ালই করতাম না, ছবি আঁকার সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মত ওটাও চলতে থাকতো। একদিন দুপুরে রাস্তার দিক থেকে একটা বাঁশির আওয়াজ শুনতে পেলাম। কে বাজাচ্ছে জানি না, হয়তো রাস্তা দিয়ে বাঁশিওয়ালা হেঁটে যাচ্ছে, বা অন্য কেউ বাজাচ্ছে। যেইই হোক সে আমাদেরক্যাম্পাসেরবাইরের লোক। কেননা ডোলে মেরা মন ডোলেপাঁচিলের এপাশে কেউ বাজাবে না। তারপর আমার কী হল ঠিক জানি না, ছবি  আঁকতে আঁকতেই নিজের অবচেতনে তারস্বরে গেয়ে উঠলাম

  
আমাদের স্কুল কলেজে

শেখে লোকে লেখাপড়া

প্রাণে গান নাই মিছে তাই

রবি ঠাকুর মূর্তি গড়া।

তোমার ওই দেহাতী গান 
দোলে যখন বাঁশির মুখে
আমাদের নকল ভন্ড কৃষ্টি চালায় করাত বুকে,
বুকে আর গলায় আমার শহর কলকাতায় ...
গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়


একটু পরেই মনে হল কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। কী যেন একটা অন্যরকম।  তারপর বুঝতে পারলাম আমার তারস্বরে গাওয়া গানের ঠ্যালায় তিনতলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুশীলন থেমে গেছে। একটি ঝকঝকে সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে গটগট করে এসে স্টুডিয়োয় ঢুকে বললআপনাদের মধ্যে কে গান গাইছিলেন?’ বন্ধুরা সঙ্গে সঙ্গে আমায় দেখিয়ে দিল। মেয়েটি আমার ইজেলের সামনে এসে বেশ আদেশের সুরে বলল

গান বন্ধ করুন! আমাদের ক্লাসের ডিস্টার্ব হচ্ছে। না হলে আমাদের ম্যাডাম আপনাদের হেডকে অভিযোগ জানাবেন। আপনারা ছবি আঁকা শিখতে এসেছেন, চুপচাপ বসে ছবি আঁকবেন। আপনাদের তো গান গাইবার কথা নয়!   
এই কথা বলে মেয়েটি একশো আশি ডিগ্রী ঘুরে আবার দুম দুম করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল।

 

(পুনশ্চ পরে এই বিষয়টাকে অন্য পরিণতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বন্ধুরা নানারকম এক্সপার্ট ওপিনিয়ন দিয়েছিল। আমি অবিশ্যি তাতে কর্ণপাত করিনি, কার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই জানি আমি আফটার অল মফঃস্বল’।)    

 


2 কমেন্টস্: