কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

তথাগত চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১


উৎকণ্ঠা

 

গেট খোলার আওয়াজ দোতলা থেকেই পেয়েছিল সুস্মিতা। সচকিত হল সে। ভাবল, রিয়া এল বুঝি? বাইরে গুমোট ভাব, ঘরেও। শাশ্বত সোফায় নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগে শাশ্বতর সঙ্গে তুমুল বাকযুদ্ধ চলছিল তার। সেই গরম আবহাওয়া আপাতত ঠাণ্ডা হলেও দুজনের মনের উৎকণ্ঠা কিন্তু কমেনি।সুস্মিতা বলেছিল, “কী ভাবলে তাহলে? পুলিশে একটা খবর দেওয়া তো উচিৎ!”

পুলিশ! শাশ্বতর কাছে শব্দটা দুর্বোধ্য ঠেকেছিল যেন। সে যাবে পুলিশে খবর দিতে? তাঁর একমাত্র কন্যা রিয়া এখনও বাড়ি ফিরছে না বলে? রিয়াকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না বলে? জানাজানি হলে তাদের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাহলে? আর রিয়ার পজিশনটা?

দেয়ালে টাঙানো ঘড়িতে রাত এগারোটা। শাশ্বত সেদিকে তাকিয়ে বলেছিল, “আর একটু দেখি”।

সুস্মিতা চিৎকার করে বলেছিল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি তো দেখবেই! দ্যাখো। সারাটা  জীবন ধরে মেয়েকে শুধু দেখেই যাও। কিচ্ছু বোলো না। তোমার আশকারা পেয়ে রিয়া যে কতখানি চড়ে বসেছে, তার খবর রাখো তুমি? যে মেয়ে রাত নটার মধ্যে   টিউশন পড়ে ঘরে ফিরে আসে, সে এত রাত অবধি কী করছে? খবর রাখো ও কোথায় যায়? কার সঙ্গে মেশে? আজ লেট নাইটে ফিরবে, কাল হয়তো ফিরবে না। আর পরশু... মেয়ে কিন্তু শৃঙ্খলা হারাচ্ছে শাশ্বত। আর জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ‘মা এখন আমি অ্যাডাল্ট। কথায় কথায় তুমি সবকিছুর কৈফিয়ত চাও কেন বলত’? অথচ তুমি একটু শাসনে রাখলে এ অবস্থাটা...”

“আঃ, চুপ কর একটু। অনেক তো শুনলাম”। শাশ্বতও গলাটা ভারী করে বলেছিল। তারপর সিগারেটে একটা শেষ টান দিয়ে ভগ্নাবশেষটা ছুঁড়ে দিয়েছিল জানালার বাইরে।

আসলে শাশ্বত সবই বোঝে। সে জানে রিয়া তার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশায় পড়াশোনার থেকে বেশী সময় দেয়। তবুও চুপ করে থাকে। রিয়াকে বকতে পারে না। অত্যধিক অপত্য স্নেহই যে প্রশ্রয়ের কারণ, শাশ্বতর তা অজানা নয়।

সোফা ছেড়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল শাশ্বত। চুলগুলো এলোমেলো, চোখটাও যেন বসা বসা। পাখার হাওয়া বেশ গরম। তারপর বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে ফিরল জানালার ধারে। মোবাইল থেকে আরও একবার রিয়ার নম্বরে ফোন করল সে। সেই একই উত্তর, আপনি যে নম্বরটি ডায়াল করেছেন সেটি এখন পরিষেবা সীমার বাইরে... কিছুক্ষণ পর আবার...

শুধু সুস্মিতা উৎকর্ণ হয়ে আছে। গেট খোলার আওয়াজের পর এবার সে শুনতে পাচ্ছে পায়ের শব্দ। মনে হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে আসছে কেউ। তার তোলপাড় করা মন বলছে, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই রিয়া। এই তো, এবারই কলিং বেলের আওয়াজ শোনা যাবে। ঠিক রিয়া যেভাবে বেল বাজায়।

অসীম উৎকণ্ঠা নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল সুস্মিতা।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন