কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

শতাব্দী দাশ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১


শূন্যপুর ৯


লোকটা লাঠি হাতে তেড়ে আসছে। একা। চোখ কচলে দেখলাম। চিমটি কাটলাম নিজেকে। আউলে গেছে শালা। হেসে ফেললাম ফ্যাকফ্যাক। আমার পাশে বড়ুয়া। কাঁধ থেকে রাইফেল নামাচ্ছে। হাসছে না। চোয়াল শক্ত। স্পর্ধা ওকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছে।

ওদের ঝুপড়ি ভাঙতে গেসলুম। বুলডোজার হুই জামরুল গাছটার তলায় দাঁড়িয়েছিল। ড্রাইভার লাফিয়ে নেমে বিড়ি ধরিয়েছিল আয়েশে। আমরা এগোলুম। রাইফেল কাঁধে। শিল্ড। হেলমেট। প্লাস্টিকের লাঠি। অস্ত্রসজ্জা সম্পূর্ণ হলে আমি আর আমাতে থাকি না। জালির ফাঁক দিয়ে লোকগুলোকে পোকামাকড় দেখায়। লুঙ্গি পরেছে ভাঁজ করে। কাঁখে বাচ্চা মেয়েরাও আসে। গণ্ডা গণ্ডা বিয়োয়। ঘেন্না। লুঙ্গি। নোংরা শাড়ি। শিশুর নাকে সিগনি। উর্দি পরলে আমরা কথা বলি না। লাঠি বলে।

প্রথমে তড়পেছিল খুব। বুলডোজার চালু হতেই রগড়। মেয়েরা বাচ্চা কোলে আছাড় খেল। টেনে টেনে ট্রাঙ্ক বের করতে গিয়ে এক শালা ট্রাঙ্কের তলাতেই চাপা পড়ল। এক বুড়ি শূন্য চোখে তাকিয়েছিল। বুলডোজার 'দূর হটো' হাঁক পাড়তেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেল বাঁদিকে গাছের তলায়। আছাড়ি পিছাড়ি৷ বিজাতীয় ভাষায় অভিশাপ। ও ভাষা আমার নয়, যদিও আমার ভাষার মতো শুনতে খানিক। ও' ভাষার উপর দিয়ে বুলডোজার চালাই। বেয়াড়া এবড়ো খেবড়ো সমান করে দিই।

একধারে ছোট ধর্মস্থান। বুলডোজার থামিয়ে বড়ুয়া জিপ থেকে জ্যারিকেন নামানোর অর্ডার দেয়। আমোদ পেয়েছিল সিপাহীগুলো। নানা অঙ্গভঙ্গি করে দাহ্য ছড়িয়েছিল। তারপর আগুন। ওরা দেখছিল দূর থেকে, এগুতে সাহস পাচ্ছিল না। ওদের চোখে কি রাগ ছিল? দূর থেকে ঠাহর হয় না।

এইসময় ছুটে এসেছিল লোকটা। একা। অকুতোভয়। বাঁট দিয়েও মেরে এসেছি কিছু আগে। রাইফেলের উপস্থিতি জানে না, এমন নয়! আবার দু’ঘা খেলে ঠাণ্ডা হবে। কিন্তু বড়ুয়া কী করছে? লোকটা কাছে এসে গেছে। ওর শীর্ণ বুকের পাঁজর এক, দুই, তিন…

লাঠিগুলো উঠে গেছে মাথার উপরে, আবার শিল্ড বুকে, সবাই মারোদ্যত, প্রস্তুত। ব্যাটা বেঁচে ফিরবে না।

হঠাৎ গুলি। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে। বড়ুয়া জানে, বন্দুককে ভয় না পেলে বন্দুকের কার্যকারিতা প্রমাণ করে ভয় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা কর্তব্য।

সিপাহীদের মজা মাঠে মারা গেল। চোখের নিমেষে দফারফা, এই হল বন্দুকের খামতি। একে একে নানা প্রত্যঙ্গ থেকে রক্ত চলকানো, কোঁক শব্দ, গ্যাঁজলা বেরোনা — এইগুলো দীর্ঘসূত্রী আরাম দেয়। আমরা থমকাই। ছ্যাঁদাবুক লোকটা শুয়ে আছে, নিথর। লাঠি ছিটকে পড়েছে দূরে। বোকা ছিল কি লোকটা? নাকি সাহসী? সাহসী লোকরা কি আসলে বোকা? বোকা লোকরাই কি সাহসী? লাশের চোখদুটোয় ক্রোধ থমকে আছে। লোকটা চোখে চোখ রেখেই মরল। তাহলে বড়ুয়া হারল না জিতল? ওর চোখ থেকে ক্রোধ কেড়ে অসহায়তা পুরে দেওয়া যায়? পায়ে পায়ে এগোই। লাশের পাঁজর লক্ষ্য করে লাথি কষাই। পরিচিত কোঁক শব্দ পাই না। শূন্যে লাফ দিই লাশের উপর আছড়ে পড়ব বলে। শূন্য থেকে দেখি নিরাবলম্ব ক্রোধ তীরবেগে ছুটে আসে। ভয় করে। শুকনো পাতার মতো বিবর্ণ নিস্তেজ, ঝরে পড়ি লাশের উপর।

 

 

 

 

 

 


3 কমেন্টস্:

  1. বিভৎস!
    যদিও সাহিত্য হিসাবে খুব সুরুচি সম্পন্ন নয়।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. 'সুরুচি সম্পন্ন'করতে তো চাইনি। রুচিসম্পন্নও করতে চাইনি। কন্টেন্ট রুচিশীল নয়। ধন্যবাদ।

      মুছুন
  2. স্বল্পদৈর্ঘ্য। সপাট। চাবুকের মতো।

    উত্তরমুছুন