কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১


সাঁঝবেলা


মৌমার গাড়িতে উঠতে রীতিমতো ভয় পায় ত্রিদিব। প্রচন্ড বেগে গাড়ি চালায়  এবং রুক্ষভাবে চালায়, যাকে বলে রাফ অ্যান্ড টাফ ড্রাইভিং। বিভিন্ন থানার ডায়েরি ঘাঁটলে জানা যাবে, সে ইতিপূর্বে অনেকবার রাস্তায় ঘোষিত স্পিডলিমিট উপেক্ষা করার জন্য কোর্টে জরিমানা দিয়েছে, কয়েকবার ট্রাফিক সিগন্যালের লাল-আলো উপেক্ষা করার জন্য ফাইন দিয়েছে, আর বেশ কিছু পথচলতি মানুষকে ধাক্কা মেরে নিহত না করলেও আহত করেছে এবং সেজন্য তাকে পুলিশ-আদালত ইত্যাদিতে যথেষ্ট নাজেহাল হতে হয়েছে। তবু মৌমার কী যে হয়, গাড়ির স্টিয়ারিং ধরলেই সে যেন ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ পায়।  বেপরোয়াভাবে গতির সাধনায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে।  

সেদিনও একটা সাংঘাতিক দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত। মরিয়া হয়ে মৌমা গাড়ির  ব্রেক আচমকা কষে না ধরলে রাস্তার লোকটার ওপর দিয়েই গাড়িটা চলে যেত। এবং এবার আহত নয়, হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিহত হতো লোকটা। তবে কেউ আহত হোক বা নিহত, মৌমা পালিয়ে যাবার মেয়ে নয়। এবারও সে গাড়ি থেকে নেমে মাঝরাস্তায় হকচকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে থাকা লোকটির সামনে এসে দাঁড়ালো এবং কী  আশ্চর্য, লোকটা তার পরিচিত, ভীষণ পরিচিত, বহুদিন দেখা হয়নি ঠিকই, কিন্তু সেই নাক-মুখ-চোখ, সেই স্বপ্নালু উদাস দৃষ্টি, সেই শক্ত চওড়া চোয়াল, বয়স  অবশ্য বেড়ে গেছে অনেকটাই, সম্ভবত সত্তর, সত্তরের আন্দোলনের মৌমার সহযোদ্ধা অনিমেষ।

অনিমেষ মৌমার গাড়িতে উঠে অবাক চোখে মৌমাকে দেখছিল। মৌমা গাড়ি ড্রাইভ করছিল। অনিমেষ প্রশ্ন করল, তোর তো এইবয়সে পুরোপুরি বুড়ি হয়ে যাবার কথা! এখনও তো বেশ শরীরটা ধরে রেখেছিস! সতেজ টাটকা!

-হ্যাঁ, ধরে রেখেছি তো! বল তো, কার জন্য ধরে রেখেছি?

-কার জন্য?

-তোর জন্য।

-ফাজলামি মারিস না মৌমা। সময় কারও জন্য বসে থাকে না। তা তোর তো এখন ভরা সংসার।

-তা বলতে পারিস। তবে সঙ্গ পাই কই! ছেলে-মেয়ে দুজনেরই অনেকদিন আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের ছেলে-মেয়েও বড় হয়ে গেল। কিন্তু ওরা সবাই থাকে বিদেশে। ভিডিও কলে তাদের দেখি, কথা বলি, আনন্দ পাই।

-আর তোর হাজব্যান্ড?

-আছে। যেমন সবার আছে, থাকে। একঘেয়ে। নতুনত্ব কিছু নেই।

মৌমা নিজেই বেছে নিয়েছিল ত্রিদিবকে। পার্টির কাজ ত্রিদিবের আর ভালো লাগছিল না। আন্দোলনের কোনো সঠিক দিশা খুঁজে পাচ্ছিল না। মনে হয়েছিল, এভাবে জীবনটা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। অনিমেষকেও বলেছিল, পার্টির কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে, আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। অনিমেষ রাজী হয়নি। সে তার ব্রত থেকে বিচ্যুত হতে চায়নি। আজও সে পার্টির সঙ্গেই আছে। পার্টির কাজ করে। পার্টি অফিসে থাকে।

অনিমেষ প্রশ্ন করল, ত্রিদিব কেমন আছে? শুনেছি, পার্টি ছাড়ার পর জীবনটা বেশ গুছিয়ে নিয়েছিল। ভালো চাকরি করেছে। সুখে সংসার করেছে। আর তুইও তো ঠিক এমনই একটা সংসার চেয়েছিলি, তাই না?

মৌমা বলল, কী জানি! হয়তো চেয়েছিলাম! অবশ্য এটাও আমি জানি না, ত্রিদিবের বদলে সেদিন তোকে বিয়ে করলে আজ তোকেও আমার একঘেয়ে লাগত কিনা!

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন