কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

 

কবিতার কালিমাটি ১০৮



আনিসুল

 

(ক)

 

সহধর্মী নই, সহকর্মী নই;

নই সহজাত তবু এমন সহমত, এমন সহবত দুজনের স্বরে!

বেশ মনে পড়ে -

দুজনের বাড়ি আর বিদ্যালয়ের মাঝে সেই স্মৃতিপথ, সেই প্রীতিপথ,

আর দামোদর নদ, যাতে বর্ষাকালেতে যাওয়া নৌকো চেপে,

নইলে বাঁশের সাঁকো, বেশি ভারে বুক যার উঠত কেঁপে

বন্ধুর মতো ছিলো ঘাটের ঘেটেল,

সেই পথে পাশাপাশি দুটো সাইকেল -

যে যার বাড়ির কাছে গিয়ে বেঁকে যেত,

এভাবেই একসাথে ফিরতে ফিরতে কত –

কথাবার্তার দাঁড়ি, কমা হয়ে যেত,

অজানা সময়ঘরে কিছু কিছু পিছুটান জমা হয়ে যেত!

অজান্তে গাঢ় হতো বন্ধুত্বও, গলেনি এখনো তার মধূত্থও

সব গোপন কথা বলিনা তো কই একে অপরকে আর -

কী বলতে চাই তবু না বলেও বুঝে যাই ঠিক প্রতিবার!

ভালো থেকো স্মৃতিপথ, দামোদর নদ,

টাকা নয়, টাকা নয়,

এসবই তো হয়ে আছে, থাকবেও জানি আমাদের সম্পদ।

 

(খ)

 

সমনামী নই, সমকামী নই;

না হয়ে সমাকৃতি, সমাকর্ষী এমন ভাব দু-মনেই করে!

বেশ মনে পড়ে -

যখন ফেরার পথে আকাশটা কালো হতো,

তাতে সবুজ অশত্থও আনন্দে আলো হতো,

বর্ষায় উত্তাল দামোদর, পয়োধর এখনোও হয়;

প্রজন্ম আসে আর প্রজন্ম যায়,

পথ আর প্রাকৃতিক ঘটনারা নয়,

ইচ্ছের কোল ছেড়ে আমাদের প্রায়শই দূরে যেতে হয়।

জ্বর হলে কারো, একা, নিজে নিজে যাওয়া-আসা;

কোনওদিন একসাথে ভিজে ভিজে বাড়ি আসা,

নৌকোয় হতো স্থির মন, সাইকেল- যেন দাঁড়িয়ে নিথর,

বৃষ্টিতে নাচানাচি, লাফালাফি সে নদের বাঁধের ওপর

কে কতটা দূর অবধি দেখতে পারে,

এমন খেলাও হতো নদের পারে

একান্ত আমাদেরই রইলো সে স্মৃতিগুলো,

মাঝখানে বয়ে গেলো কতোটা সময়!

আহা! সময়যাত্রা করে ছবি তুলে আনা গেলে কি যে ভালো হয়!

বন্ধুতা আসলেতে সংযত প্রেম,

অনায়াসে, অনাময়ে রয়েছে কায়েম।

 

(গ)

 

সমবস্হ নই, সমপদস্হ নই;

তবু আজও ভাবি ঠিক একে অপরের তরে!

বেশ মনে পড়ে -

আরও যারা ছিলো ওই আমাদের দলে -

তখন বাল্যপ্রেমে মজেছিলো সব,

আমরা দুজন তবু পড়ুয়া ছেলেই,

যদিও ছিলাম ঝালে-ঝোলে-অম্বলে।

পড়া ফেলে গেছি কোনও গোপন স্থানে বা নদী-অববাহিকায় -

অন্যের অভিসারে সতর্ক প্রহরীর নাম-ভূমিকায়।

নবম শ্রেণীতে এসে কোনও একদিন -

ততদিনে গালাগালি কে কটা জানে, কার কত দম!

একসাথে পাড়া হলো, পড়া হলো কম

কে জিততো তাতে কিছু এসে যেত না,

কম পেলে কারো কই গোঁসা হতো না!

তারপরে দুজনের পাঠ্যবিষয় হল ভিন্ন,

হল একসাথে যাতায়াত ছিন্ন।

বাইসাইকেল দুটো এভাবেই হয়েছিলো পথচ্যুত,

বয়ঃসন্ধি এলো আর দোলাচল,

তবু কই ছেঁড়েনি তো, বন্ধুত্বের সুতো!

মহাবিদ্যালয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যার যাই হোক ফলাফল।

 

(ঘ)

 

সমভিব্যাহারী নই, সম অপহারী নই;

অনাড়ম্বর দুটো পরিবার, কৈশোর, দুজনের ঘরে,

বেশ মনে পড়ে -

ধর্মনিরপেক্ষ কিছু স্মৃতি নিরাপদে -

রয়েছে; বা আগামীতে রাখতেও তৈরি,

মা কালী বা হজরত মোহাম্মদে,

হননি আসলে কোনোদিনই কারো বৈরী

এভাবেও প্রিয়তম বন্ধু হওয়াই যায়, হয়েও বিধর্মী,

অবহার, উপহার নিষ্প্রয়োজন হওয়া গেলে সহমর্মী।

গিয়েও শ তীর্থ, সবাই জীবাত্মার ঘনিষ্ঠ হয়?

হয়েও সতীর্থ, সব বন্ধুত্ব কি এতো দ্রঢ়িষ্ঠ হয়!

দুজনেই বিবাহিত, নেই সংসারদুটো একইস্থানে হায়!

না হয়ে সহগ যা সে এমন সহজ,

না হয়ে যমজ যাতে এমন সমঝ,

সেই বন্ধুতা যেন প্রত্যেকে অন্তত একটাও পায়।

 

ইরোটোমেনিয়ার শেষে

 

পাশে আর একটা কেদারা রাখি

সেই বোধ প্রতিষ্ঠা করি তার ওপর,

যে বোধে ঈশ্বর তৈরি হন।

অনেকক্ষণ,

এভাবেই বসে থাকবো, এমনি;

পরিত্যক্ত রেল লাইনের পাশে যেমন বজ্রাহত গাছ।

তার না থেকে থাকার মতো ভাব –

তবু ভালোলাগবে,

সম্পর্ক হবে দেহাতীত।

শুনবে আমার স্বগতোক্তিও সে বিদেহী,

বলবে না কিছুই।

চেয়ে থাকবো অপলক দূরে, দিগন্তে;

ওই সাগর, আকাশের মিল ভেঙে আর -

কোনও জাহাজ যেন না আসে!

 

 

সাক্ষ্যপ্রমাণ

 

যদি -

অপমানিত হওয়ার মুহূর্তগুলো,

শুধুই স্মৃতিবন্দী না করে,

প্রমাণস্বরূপ ক্যামেরাবন্দী করে রাখা যেত;

অপোহে, খণ্ডন করা গেলেও যেত পারতো –

মিথ্যেবাদীদের বেপরোয়া ভাব।

অন্যায় মেনে নিতে বাধ্য হওয়ার আগে -

ফেরানো গেলেও যেতে পারতো,

সুদসমেত।

কত অপমানেরই তো প্রমাণ থাকে না,

তবু তার দাগ থাকে মনে, জীবনে।

কাঠগড়ায় কি সবকিছু দেখানো যায়?

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন