কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

তানিয়া চক্রবর্তী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৮



তুমি

 

(১)

 

এই তো পরিচয়

এই তো সবে মুকুল

তাতেই এত নিবিড় গন্ধ ঝরে গাছে

আসলে তো, নেত্র ধরে গঙ্গা হয়ে

নামতা নামতা খেলি

চালের মাথায় শেয়াল বসে

কাটাকুটি শেখায়...

এর মধ্যেই এমন সব মন্ত্র এল মুখে

যে বেকুব হয়ে আপন বনে গেলাম

আপনরা সব রাতের ঘোরে স্বপ্নে দেখা ভুল

স্বপ্নে তুমি মধবাসবে মাখিয়েছিলে আতর

গন্ধ জুড়ে অসহ্য সব ছোঁয়া...

ছোঁয়াই যদি পিরিত হতো

বেশ্যা তবে জল ফেলত এত?

দেয়ালজুড়ে টাঙাত এত রক্ষাকালীর ছবি?

কেউই তবে কেউ তো নয়

তবুও কেউ কেউ তো হয়

তুমিই তবে কেউ-এর শেষের খেলা

 

(২)

 

যেমন তোমায় দেখেছিলাম গঙ্গাধারে,

উন্মাদেরই রঙে, বোধহয় তুমি এসেছিলে

অন্য কোনো ছলে....

গায়ের ধুলো উড়িয়ে দিলে

দাঁড়ির মধ্যে জল দিলে

ছাপোষা এক বন্য প্রাণী যেন

 

তেমন তো তুমি ছিলেও না কেউ

মুখাবয়ব সাধারণের, তবু কেমন উদাস ছিলে

গঙ্গাফড়িং মাথায় ছিল বসে

কলের তলায় মুখটি ধুলে আঁজলা ভর্তি জলে

 

জল তো তখন জল ছিল না

ছিল আমার মরা নদী

নদীতে তখন মরা ভাসত,স্বপ্ন ছুঁতো বাঁচার

ট্রেনের ভেতর জানলা দিয়ে খুঁজছিলে কোনো দড়ি?

দড়ির এক ফাঁস ছিল

ফাঁসের গিঁটেই মরেছিল

দু:খি এক শ্যামাপোকার বউ

কপালভর্তি রক্ত ছিল তার

রক্তে তোমার মুখ দেখেছি

এবার খেলার শুরু....

হঠাৎ করে ছুঁয়েছিল এমন

গলায় তখন ঢেউ এর কান্না ছিল...

গায়ে তখনও অন্য স্মৃতি ছিল...

ছিটকে গেলাম

যেন মরা কৈ এর পিত্ত ফেটে জল

কৈ -এর তেলেই এখন ভাত মাখো

তাই ভাবছ,

এ কৈ বুঝি সস্তা হল ঝোলে

ভেবো না এমন বাউল গবেষক

রক্তে তোমার এখনও আমি আছি

যখন আমি কাঁটিয়ে দেব সুতো,

রক্ত ছুঁয়েও বেরিয়ে যাবে ছিপ,

তখনই তোমার মুক্তি হবে জেনো...

কৈ তো কেবল তাই

জমাট শ্বাসের বাইরে এসেও

জন্ম বাঁচায় রোজ...

 

(৩)

 

এখন আমার ভাঙা জলের খেলা

ভেতরে তেমন ভয়ের সুখ ও নেই

কুয়োয় তুমি মরতে বসেছিলে

খালে-বিলেও বেঁচেছিলে কেমন

এসব সব ভুলিয়ে রাখার কথা

তবু শব্দ জেনো, ভোগীর রাজ্যে বাঁচে...

নখে তোমার রক্তজমাট দাগ

ইচ্ছে ছিল কপাল দিয়ে ছুঁইয়ে দিই তুলো

কপাল তুলোয় স্বপ্ন চাদর ঢালি

কিন্তু তুমি শুকিয়ে যাওয়া নারকেলের খোল

আর আমি ভেতর ভর্তি শাঁসের জন্য পাগল

এমন মিলে হবে নাকি কিছু!

মাঁচায় তুমি অন্ধকারে বাঁচো

আর আমার চাঁদ এসে যায় ঘরে

জানি, শনি চন্দ্র বিষযোগে বসে

চন্দ্রাহত হতেই থাকি রোজ...

তবু ওরা পেটের ভেতর নাভিব্রহ্মে বাঁচে

তাই তো এখন মাপতে পারি তোমায়

তুমি তুমি তুমি....বাঁচাল সংস্রবে

আমার শব্দরা সব  শ্মশানঘাটে

বোবা এক শ্লোকের মতো ঘোরে...

 

(৪)

 

এখন তুমি গড়িয়ে গড়িয়ে হাসো...

ভাবো, অহং গড়া মেয়ে পড়েছে  গলাজলে...

এখন ও তুমি কবি বলেই ডাকো...

চোখে তোমার হলুদ আলো থাকে

গায়ের কালো রং এ স্বপ্ন আসে প্রেমিক রাক্ষসের

দাঁড়ির ভেতর অশোকবনে বাঁচি...

যখন বলো গন্ধ দাও...

হাত দুখানা তোমার মুখেই রাখি

রেখার মধ্যে শিরায় রাখি শিশু

তাই তোমায় ও বলি ভেতরে শিশু রেখো...

তুমি জেনেছ আমার মন?

মনের ভেতর শুঁয়োপোকার বাস

সারারাত্রি হেঁটেছি তোমার ঘরে

ভেবেছ পাগল, ডাকিনী-যোগিনী এলই বুঝি ঘরে

যোগ ও ভোগ এখন ও বেঁচে আছে

কিন্তু তুমি ধারণায় বাঁচো যুবক

তাই  কাঁচা মাটির দলা গড়তে শেখোনি...

তবুও যদি পারো,

দু'হাত দিয়ে মধ্যচ্ছদা চিঁরে

বুকের ব্রহ্ম আশ্লেষে নিও দেখে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন