প্রতিবেশী সাহিত্য
নাজিম হিকমত-এর কবিতা
(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)
কবি পরিচিতি : নাজিম হিকমত(১৯০২--১৯৬৩)।
তিনি টার্কির প্রথম আধুনিক কবি। তাঁর সমাজতান্ত্রিক
মতামত সীমানা ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিল এবং বিংশ শতাব্দীর একজন মহানতম কবি হিসেবে আন্তর্জাতিক
মঞ্চে তাঁর পরিচিতি হয়। পঞ্চাশটিরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয় হিকমতের কবিতা। কিন্তু তাঁর
নিজের দেশেই প্রতিবন্ধিত হন তিনি এবং অজ্ঞাতবাসে
থাকেন ও মস্কো চলে যান। ১৯২৪ সালে টার্কিশ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশে ফেরেন, কিন্তু
বামপন্থী কাগজে কাজ করার জন্য গ্রেফতার হন এবং
তাঁর ১৫ বছর কারাদণ্ড হবে জানতে পেরে
কোনোক্রমে আবার রাশিয়া পালিয়ে যান। আবার দেশে ফিরে এলে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। পাঁচবছর
জেলে থাকাকালীন তিনি চিঠি আকারে স্ত্রী
ও বন্ধুবান্ধবদের লেখা পাঠাতে থাকেন। ১৯৪৯ সালে এক আন্তর্জাতিক কমিটি প্যারিসে তৈরি
হয় হিকমতের মুক্তির জন্য। ১৯৫১ সালে তাঁকে শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। এরপর টার্কিতে গণতান্ত্রিক সরকার এলে তিনি মুক্তি পা্ন।
কিন্তু একবছর পরেই আবার ষড়যন্ত্রের শিকার হন, তাই
দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় এক ঝড়ের রাতে ছোট মোটরবোটে করে পালিয়ে যান। আর কখনো তিনি
টার্কিতে ফেরেননি। বাকি জীবন পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও রাশিয়ায় কাটিয়েছেন।
Letters from a man in solitary (এক নির্বাসিত
মানুষের চিঠি)
আমি তোমার নাম আমার ঘড়ির ব্যান্ডে
আঙুলের নখ দিয়ে লিখেছি।
আমি কোথায় তুমি জানো--আমার কাছে মুক্তো
বসানো হ্যান্ডেলের ছুরি নেই (এরা আমাকে কোনো ধারালো জিনিস দেয় না)। দেখতে পাই না সে
গাছ যার মাথা মেঘে ঢেকে আছে… গাছ উঠোনে হতেই পারে কিন্তু আমাকে মাথার উপরে আকাশ দেখতে
দেয়া হয় না।
আরও কত লোক এখানে আছে
তাও আমি জানি না… আমি একা সবার থেকে
দূরে… তারাও আমার থেকে দূরে। কারো সাথে কথা বলা বারণ তাই আমি নিজের সাথে কথা বলি। কিন্তু
সেটা খুব বিরক্তিকর প্রিয়তমা!
আমি গান গাই, কিন্তু জানো সে দুর্বল
স্বর আমাকে এমন ভাবে স্পর্শ করে যে মন ভেঙে যায়... ঠিক যেন সেই পুরনো গল্পের দুঃখী
অনাথ ছেলেটির মতো, যে নগ্নপায়ে তুষারপাতে হারিয়ে যায়।
আমার হৃদয় ভেজা নীল চোখে এবং হাল্কা
লাল ভেজা নাক নিয়ে তোমার বাহুতে নিশ্চিন্তে শুতে চাই... না এটা উন্মাদনা আনে না!
এই মুহূর্তে আমি এত দুর্বল... এত
স্বার্থপর।
আমার অবস্থা শারীরিক ও মানসিক ভাবে
ব্যাখ্যা করা যাবে। অথবা এটা এরকম...
এই শূন্য জানালা, এই মাটির কলসি,
এই চার দেয়াল, যা আমাকে মাসের পর মাস অন্য মানুষের আওয়াজ থেকে দূরে রেখেছে।
বাইরে এখন বসন্ত আমার প্রিয়তমা--বসন্ত!
বাইরে থেকে হঠাৎ সজীব পৃথিবীর গন্ধ
আসছে... পাখিদের কলতান ও গানের সুর...
এত কিছু আর কী! ...এটা বসন্ত যে প্রিয়া!
বাইরেটা ঝকমক করছে, ভেতরে বিছানার
ছারপোকাগুলো জেগে উঠেছে, জগের জল আর বরফ হচ্ছে না। সকালের সূর্য সারা মেঝেতে, প্রতিদিন
দ্বিপ্রহর পর্যন্ত আসে আর যায় আমার কাছে টর্চ
জ্বলা নেভার মত!
দিন যখন বিকেলে গড়িয়ে পড়ে ছায়া দেয়াল
বেয়ে ওঠে। খালি জানালার কাচগুলোতে আগুন ঝরে। তারপর বাইরে রাত নামে...
মেঘহীন বসন্তের রাত! ঘরের ভেতর বসন্তের
গাঢ় অন্ধকার। সংক্ষেপে বলতে গেলে স্বাধীনতা নামের দৈত্য তার জ্বলজ্বলে শরীর
এবং অগ্নিবর্ণ চোখ দিয়ে ভেতরের মানুষটাকে
দখল করে নিয়েছে, বিশেষ করে বসন্তে।
আমি এসব নিজের অভিজ্ঞতা থেকে
জানি হে প্রিয়তমা… অভিজ্ঞতা!
Today is Sunday (আজ রবিবার)
আজ রবিবার -- প্রথমবার ওরা আমাকে
বাইরে নিয়ে এলো… সূর্যালোকে। এবং
জীবনে
প্রথমবার আমি ভয়ার্ত হয়ে দেখলাম
আকাশটা কত দূরে কত নীল আর
ক--ত বিস্তৃত! আমি সেখানে স্থির ও
স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর শ্রদ্ধাপূর্ণ
ভক্তি নিয়ে সাদা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে
মাটিতে বসে রইলাম!
এই মুহূর্তে কে ভাবে আমি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত
কী ভীষণ চাওয়ার ঢেউয়ে আমি আবর্তিত!
অথবা আমার মুক্তি ও প্রিয়তমা স্ত্রী!
নাহ...
আহা! এই মাটি এই সূর্য আর আমি!
এই মুহূর্তে যে চরম আনন্দে ডুবে আছি!
দারুন অনুবাদ বাণী দি
উত্তরমুছুন