কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

কাজল সেন


কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৮

 


শুভবিবাহ


সাইবার যুগে কোনো মা-বাবা যে তাদের ছেলের নাম হরিদাস রাখতে পারে, তা অনেকের কাছেই হয়তো বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু হরিদাসের মা-বাবা তাদের ছেলের নাম হরিদাস রেখেছেন। সেকেলে নাম হলেও নামটা অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ।  হরি অর্থাৎ ভগবানের দাস, মন্দ নয় ব্যাপারটা! কিন্তু হরিদাস তার পিতৃদত্ত নামের মর্যাদা রাখল না যে! সে হরি’র পরিবর্তে দিনে দিনে হর’র দাস হয়ে উঠতে লাগল, মানে চৌর্যকর্মে প্রতিবারই নিপুণতা ও দক্ষতার ছাপ রাখতে লাগল। শুরুটা করেছিল স্কুলের সহপাঠী-পাঠীনিদের বই-খাতা-পেন চুরি করে। কিছুদিন পর টিফিনবক্সের খাবার চুরিতেও যথেষ্ট সাফল্য লাভ করল। তারপর একজনের নামে আরেকজনের কাছে চুকলি করার খেলায় পারদর্শিতার পরিচয় দিল। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, হরিদাস তার নামের অমর্যাদা ঘটিয়ে  নিজেকে হরদাস রূপে প্রতিপন্ন করলেও, অভাবের তাগিদ ছিল না, বরং ছিল স্বভাবের তাগিদ। তার মনের ভেতর থেকেই কেউ যেন সমানেই তাকে চৌর্যকর্মে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করত।

স্কুল থেকে কলেজে উত্তীর্ণ হয়ে হরিদাসের কর্মপদ্ধতিতে কিছু শৈল্পিক পরিবর্তন ঘটল। এতদিন সে চুরি করত লুকিয়ে। কিন্তু নতুন টেকনিকে সে লুকিয়ে চুরি করা থেকে বিরত হয়ে সরাসরি চুরির পথ অবলম্বন করল। এই যেমন, সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস ‘উত্তরাধিকার’ চুরি করেছিল কলকাতা বইমেলা থেকে সবার অজ্ঞাতে। তা ‘উত্তরাধিকার’ পড়া শেষ হলো কিন্তু পরের পর্ব ‘কালবেলা’ পড়ার কোনো সুযোগ ঘটছিল না। এমন দুর্দিনে সে জানতে পারল তার বান্ধবী মিঠুর কাছে উপন্যাসটা আছে। মিঠু কলকাতা বইমেলা থেকেই কিনেছে। হরিদাস মিঠুকে উত্যক্ত করতে শুরু করল, একবার বইটা দে না রে! আমি পড়েই তোকে ফেরৎ দেব। মিঠু বইটা দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি কিন্তু ফেরৎ দিস। কিন্তু ফেরৎ আর কোথায়! কিছুদিন পর হরিদাস রীতিমতো অস্বীকার করল, আমি তো বইটা চেয়েছিলাম, কিন্তু তুই তো বইটা দিসনি আমাকে। তুই নিশ্চয়ই ভুল করছিস, তুই অন্য কোনো বন্ধুকে দিয়েছিস।

হরিদাসের আরও কয়েকটা বিশেষ গুণও ছিল। চেহারাটা কার্তিক-মার্কা। চোখদুটো মায়াবী। গানের গলাটা বেশ সুরেলা। পড়াশোনায় মনোযোগী।  কথাবার্তায় চমক ও চটকের ছড়াছড়ি। স্বাভাবিক কারণেই তার বন্ধু-বান্ধবী অনেক। বান্ধবীরা তার বিশেষ ভক্ত। কিন্তু হরিদাসের মেয়েদের প্রতি তেমন কোনো আকর্ষণ ও আদেখলাপনা ছিল না। প্রেম-ট্রেম করা তার পোষাতো না। এক বান্ধবী, অপরূপা, রূপে-সৌন্দর্যে সত্যিই অপরূপা, তার প্রেমে পড়েছিল অনেক বন্ধুই, কিন্তু মূল প্রতিদ্বন্দিতা ছিল শিবশঙ্কর আর রূপঙ্করের মধ্যে। দুজনেই অপরূপাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া। ব্যাপারটা জেনে হরিদাস অপরূপাকে প্রশ্ন করল, তুই কাকে বিয়ে করতে চাইছিস? অপরূপা হাসি হাসি মুখে বলল, দুজনকেই। হরিদাস বলল, তাহলে তুই আগামী শনিবার দুজনকেই কালীমন্দিরে বিয়ের জন্য সকাল দশটায় আসতে বল। অপরূপা ঘাবড়ে গেল, ও মা! সে কী!

-তুই আসবি সাড়ে ন’টায়। আমিও বিয়ে করব।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টায় হরিদাস ও অপরূপা মন্দিরে পৌঁছল। হরিদাস সব ব্যবস্থা করেই রেখেছিল। দশটার মধ্যেই বিয়ে সুসম্পন্ন হলো। বেলা দশটায়  হাজির হলো শিবশঙ্কর আর রূপঙ্কর।

 

 

 

 


1 কমেন্টস্: