কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

সুকান্ত দেবনাথ

 


ধারাবাহিক উপন্যাস

           

দূরত্ব




 

(ছয়)  


যে কাজ তার সাক্ষী রাখে না, যে কাজের সাক্ষী থাকা অন্যায়, যে কাজ সতত নিভৃতি পছন্দ করে, সে কাজের ভিরতে আত্মা থাকে। যা শুধু তার দেহ পালটায়। আমি তেমনই কিছুর ভিতর থেকে নিজেকে তুলে আনতে চাই কিন্তু কি করি আমার ভাগ্য যে। ভোরের আলপনার মতো সে তার, গোছা চুলের উপর গামছা জড়িয়ে বেরিয়ে আসছে কলতলা থেকে। সিঁথি শুভ্র, হাতের চুড়ি গাছা শুধু তাদের অভ্যস্ত ছন্দে হাতের মাঝে খেলে যাচ্ছে। আমার মনের ভিতরে খেলে যাচ্ছে অচেনা কয়েকটি অভ্যেস, যেভাবে কস্তূরীর হাত থেকে পড়ে যাওয়া কাঁচের বাটির দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল।

যাক তাও এখানে অন্নপূর্ণার হাঁড়িতে জল ফুটছে, উঠে আসছে ভাতের ফ্যানের সাথে পাতা উনুনের গন্ধ। আমি তার মাঝে এক ব্রহ্মাণ্ডকে উথলে উঠতে দেখছি। উনুনের পাশে তার ছোট্ট ছেলেটি উবু হয়ে বসে আছে, হাঁটতে শিখেছে সে, সে এখন নিজে হেঁটে যেতে পারে যেখানে সে চায়। উনুন থেকে আগুন নিয়ে সে খেলে যাচ্ছে আপন মনে। পাশে ঠাকুমা, এক চোখে দেখে নিচ্ছে নিজেরই ছেলের থেকে হওয়া ছেলেকে। উঠে আসছে তার কাছে ফেলে আসা যৌবন। সেও তো এভাবেই একদিন তার ছেলেকে দেখে ছিল। আমি যেন কিছুটা অদৃশ্য কিছুটা আবার নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছি মায়ের কাছ থেকে। কোনো মা কি নিজের ছেলেকে চিনতে ভুল করতে পারবে। অবশ্য আমি তো এসেছি সে মেয়ের মনের কথা জানতে। যাই হোক ঠাকুমার পিছনে এক শিশু খেলে বেড়াচ্ছে আপন মনে। ঠাকুমার আড় চোখে তার মা, ঘর কন্নার কাজে ব্যাস্ত। কিছুটা শান্তি কিছুটা আবার -----

মানুষের মেটাবলিসম যদি কিছুটা কমানো যেত মানে ধীরে করা যেত তবে কি সম্ভব হত এই দুই নারীর ভিতরের দূরত্বকে কমানো। সে ঠাকুমা কি সেখানে দাঁড়িয়েই দেখতে পেতো পাশাপাশি নিজের যৌবন। তার ছেলে নেই, দূরে কোথাও, তার স্বামী বৃদ্ধ অর্থাৎ সবকিছুই এক অর্ধসত্য হয়ে রয়ে গেছে আমাদের মাঝে। আমার নিজের মায়ের দিকেও তাকাই কখনও, মা কে যে দেখে আসছি সেই কবে থেকে, মা একটু একটু করে বুড়ি হয়ে যাচ্ছে। মার গায়ের সব চামড়া শিথিল হয়ে আসছে। আমার দিকেও তো তাকিয়ে আছে মা, সেও দেখছে আমার চুলের পাশে হালকা সাদা দাগ। অথচ আমি মায়ের সামনে আছি তাই প্রতিদিন দেখে দেখে চোখ সোয়া হয়ে গেছে। নেমে গেছে মন থেকে দূরে কোথাও। মা কি এভাবেই আমার ছেলেটির পাশে বসে দেখত কস্তূরীকে। অবশ্য কস্তূরীর মা আসলে, আমার মা একটু যেন আনসিকিয়োর মনে করতো আমি দেখছি। যদিও তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাইনি কেননা কস্তূরীর মা নিজেই একজন নার্স ছিলেন। এবং চাকরির শেষ অব্দি মেট্রন হয়ে ছিলেন। তিনি আমার মা কে বিভিন্ন পদ্ধতি শিখিয়ে জেতেন। বিশেষত কস্তূরী ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কি করতে হবে, সে সব বিষয়ে। মাকে দেখেছি সে সব সময়ে চুপ করে যেতেন, এমনকি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে। এতটাই চুপ যেন শুনেতই পাচ্ছেনা, হয়তো এই চুপ থাকাই এই নিঃশব্দ প্রতীবাদ, বা অবহেলাও হতে পারে। যা এক নারী অন্য নারীর প্রতি দেখিয়ে থাকে। মায়ের বিশ্বাস ছিল প্রতিটি বাবা নাকি তার ছেলের মাঝেই ফিরে আসে, আর মেয়েরা নাকি তার মার রূপ পায়। এসব কথা যে বিশুদ্ধ মায়ের কথা সে কিন্তু নয়। কোথাও পড়েছিল, বা কেউ বলেছিল মাকে। সে বিশ্বাস নিয়েই মানুষ করে যেতে চায় নিজের ছেলে থেকে নাতি।

আমি কে, আমি আসলে আমার বাবারই আরেক রূপ। যে ফিরে এসেছে। আমি দুম করে কথাগুলি শুনে নিজেকে যেন আর ধরে রাখতে পারিনি। প্রশ্ন করেছিলাম কোথায় পড়েছেন এসব। কাপালিক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল তোর কপালে। তারপর চোখ বন্ধ করে বলেছিল আরও অনেক নিজস্ব গোপন কথা, যদিও গোপন ঠিক নয়। অন্যদিকে আমি নিজে কোনো দিন পুজো করিনি। অঞ্জলি দেওয়া, উপোষ করা এসব আমার কাছে বরাবর অর্থহীন মনে হয়েছে। কস্তূরীর দিকে তাকিয়ে বলেছি তুমি কি ওই কাপালিকের কথা বিশ্বাস কর। কেননা সে আরও অনেক কিছু বলেছিল চোখ বন্ধ করে। যা বাস্তবে অমোঘ সত্য আমাদের মাঝে ছড়িয়ে রয়েছে। কস্তূরী তার ভায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, তোর জামাইবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি কেন সবারই তো কিছুটা মাথা খারাপ থাকে, নাহলে কত সহজ উপায় ছিল শিকার করে খাওয়া। কেন যে মানুষ আবার চাষাবাদ করতে গেল। যাই হোক সেই ক্ষেত্রপাল মন্দিরে কিন্তু আমি অনেক বার গিয়েছি ছেলেকে নিয়ে। অবশ্য পুজো দিইনি একবারও, ওই বেড়াতে যাওয়া যাকে বলে। ফেরার সময় দেখেছি এক অনুভূতি ঘিরে থাকে মনের মাঝে। আমিই কি বাস্তবে আবার ফিরে এসেছি।

আবার সেই প্রশ্ন, আবার সেই দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আমার সেই নিজেকেই জিজ্ঞেস করা আমি কি সত্যি এ পথে হাঁটতে পারবো। দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসা মুখ যেন আমার ভিতর থেকেই উত্তর দিয়েছে ----

আমাকে অনুসরণ কর, দেখো কিভাবে আমি এতটা সংগ্রামের মাঝে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি। এও তো এক সংগ্রাম, নয় কি। পাশে যখন স্ত্রী থাকে, তাকে বলেছি – সাথী, এই যে দেখছও আকাশ। এই সেই দীর্ঘ কষ্টের পর এক চিলতে আকাশ। বসে আছে উড়ে যাবে করে। বসে আছে নিম অন্নপূর্ণা থেকে খানিকটা থালায় বেড়ে। মুখে দেবো নাকি উঠোনে ছড়াবো খানিকটা, এ বাড়ির নির্ভরশীল যারা তারা অন্ন পাবে মুখে। 

সাথী আমাকে বলেছে - তেমন কিছু নয় কিন্তু, তাও মনে পড়ে জানো। শুধু তোমাকে নয়, আরও মনে পড়ে। বাপের বাড়ির কথা মনে পড়ে। আমার পরের বোনটার কথা খুব মনে পড়ে। বিয়ে হল আমার পর পর অথচ বর দেখে না। হয়তো ভালোবাসেনা তাকে। কিন্তু দেখেছো তো একেবারে খারাপ কিন্তু নয় দেখতে। বলো তুমিও তো দেখেছো। খুব কি খারাপ। যদি তুমি দেখতে, করতে না বিয়ে। স্বাস্থ্যও তো ভালো। বলো।

ভালো, কিন্তু সব ভালো কি এক জন্মে তার আদর পায়। মাঝখানে কি কিছুই থাকেনা যেখানে ভুল করে মানুষ, ভুল করে সান্তনা দেয় নিজেকে।

আমি সাথীর দিকে তাকিয়ে বলেছি - দেখো সাথী কিছুটা তো তারও নিজের ভাগের প্রেম ভাগ করা উচিৎ। সব যদি লুকিয়ে রাখে তবে শুধু নিজেকে জেলখানায় বন্দী করা।  

জেলখানা সত্যি আমিও তো তেমনই চার দেয়ালের মাঝে দাঁড়িয়ে। ওপাশে কস্তূরী, আর এপাশে দেয়ালের মুখ। কিন্তু মুখ মনে করতেই আমার নিজের ঠাকুমার কথা মনে পড়ে যায়। ঠাকুমা খুব ভালো কারোর মুখ মনে রাখার পদ্ধতি বলে দিতেন। মুখের সাথে কোনো না কোনো গল্পের সাদৃশ্য খুঁজে মনে রাখা, এমুখের পিছনে তেমনই এক হাসি কান্নার গল্প আছে। আর সেই গল্প দিয়ে চিহ্নিত করা মুখ। তারপর কিন্তু গোটা জীবনে আর সে সেই মুখ ভুলতে পারবে না। সেভাবেই আমি আর আমার ঠাকুমা যে কোনো নতুন মানুষের মুখ দেখে কল্পনা করতাম, কি আছে সে মুখের পিছনের গল্প। সে কি সুখি, নাকি অনেক দুঃখ বুকে করে বেঁচে আছে। কি করে সে, কিভাবে ইনকাম করে। খুব কি হাঁটতে হয়, না কি বসে থাকে চেয়ারে ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। হাসি ঠাট্টা আছে কিছু চরিত্রে নাকি, হিউমার রহিত, শুধু গম্ভীর শুধু গম্ভীর। আর সব থেকে বিশেষ হল, কথা বললে সে কি উত্তর দেবে। না কি ফিরে চলে যাবে। 

এভাবেই কখনও অনেক গল্প বানিয়েছি ঠাকুমার সাথে। কিন্তু দেখেছি ঠাকুমার গল্পে কোনো মিল থাকেনি শেষে। শেষটা বরাবর এক বিষণ্ণ জায়গায় এসে শেষ হয়ে যেত। তারপর আর বলার কিছুই প্রায় থাকতো না। ঠাকুমা চুপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে যেন ভুলে যেত কি ছিল আমাদের মধ্যে কথা। আর আমি একটু একটু করে জেনে যেতাম কি হবে অবশেষ। তাঁর গল্পের শেষে মন খারাপ করার কোনো যায়গা নেই। আমার কষ্ট নেই তাই। আমি জানি সাথী আর কস্তূরী বাস্তবে একই পয়সার এপিঠ ওপিঠ। যারা শূন্যের মাঝে ঘুরে যাচ্ছে। কেউ যেন ছলকে দিয়েছে উপরে, আর ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে। কস্তূরী এলো তো শুরু হল শেষ আর সাথী এলো তো শেষ থেকে শুরু। ঠাকুমা কিন্তু সেভাবেই জানালার পাশে বসে আছেন। একদিন এক ক্লান্ত দুপুরে এক সেলস গার্ল এসেছিল আমাদের বাড়ি। তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি আর পড়ি মানুষের মুখ। ঠাকুমাও আমার সাথে তাঁর সেই শেষের দিকে মানুষের মুখের পিছনের গল্প কল্পনা করার খেলায় মত্ত। আমরা দুজনই মাত্র সেদিন ঘরে ছিলাম, দরজা খুললাম, যদিও ঘরের দরজা আমাদের কোনোদিন বন্ধ হত না। সকালে ছটার সময় মা ঘুম থেকে উঠে সেই যে দরজা খুলতেন, তারপর তা খোলাই থাকতো রাত এগারোটা পর্যন্ত। কেননা দরজা বন্ধ করার কোনো কারণই ছিল না তখন। দরজার পরে ছোট একটি বারান্দা তারপর বিরাট এক উঠোন। তার পরে টগর গাছের বেড়া, আর বাঁশের কঞ্চির এক পাল্লার গেট। যা ছিল আমাদের বাস্তবিক সীমা রেখা। তা ঠিক তখনই উঠোনের মাঝে আমরা দেখলাম একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে এক ভারি ঝোলা ব্যাগ। ঠাকুমা আমাকে বলল, সেলস গার্ল। 

আমি বললাম – খুব নিডি ফ্যামিলি মনে হচ্ছে।

-       পায়ে হেঁটে এসেছে এতদূর।

-       হাঁটা তার অভ্যাস আছে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম সে হেঁটে যেতে পারে।

-       গ্রাম থেকে গ্রামে?

-       সে গ্রামে থাকে তবে, টাউনসিপের লাগোয়া যে গ্রাম আছে সেখানে।

-       কিকরে বুঝলি?

-       পরনে চুড়িদারে নিচে জিনস, হাল ফ্যাশনের হলেও, কিছুটা যেন রং ওঠা।

-       বাড়িতে তার কি ভাই বোন আছে?

-       মা আছে, বাবা ঠিকা শ্রমিক, বোন একটি, ভাই নেই। 

-       কেন ভাই নেই?

-       দাদা আছে সি পি এম করে।

-       সেলসের কাজ কেন করছে? কি কারণে?

-       বাবা দেখে না, বা যা দেয় তা তে চলে না ভালো ভাবে। দাদা ব্যাস্ত খুব কিন্তু ইনকাম নেই। বোন আছে, যাকে নিয়ে চিন্তা সব থেকে বেশি। কেননা সে দেখতে ভালো, ফর্সা, ডাগর দুটি চোখ। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ভারি দুটি বুক, আর ঢেউ খেলান কোমর আছে তার। গরিব ঘরে এমন মেয়ে বিস্ফোরক।

-       তুই কিকরে জানলি?

-       দেখছও না এ মেয়ে কে। কেমন কর্মঠ শরীর, এ যদি আমাদের মতো ঘরে জন্মাতও, কেমন হত দেখতে। অন্যদিকে তার ঘরেই এক আদরে মেয়ে রয়েছে, সবার ছোট কিনা তাই, আদরে।

আমাদের বিড়বিড় দেখে মেয়েটি দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক ক্ষণ। তবে বেশি সময় নয় কিন্তু, কারোর বাড়িতে এসে, এভাবে কিছুই না বলে দাঁড়িয়ে থাকা অস্বস্তিকর। সে ভাবছে কি বলছে রে এরা। আমাকে নিয়েই কিছু বলছে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাকে কি চেনে?

বললাম কিছু বলবেন? সে মেয়ে বললে, বাড়িতে মহিলা কেউ নেই?

বললাম, না মা আছে তবে এখন নেই, কোথাও গিয়েছে হয়তো, ঠাকুমা আছেন, বলতে পারেন।

সে মেয়ে বললে, না আসলে আমি কিছু ভালো কাপড় নিয়ে এসেছি আর কিছু মহিলাদের জিনিস আছে। তোমার মাকে একটু ডাকবে।

আমি জানি মাকে ডাকলে মা এগিয়ে দেবে, নেবে না কিছুই। যদিও আমাদেরও নেওয়ার কিছু নেই, তবে একা একটি মেয়ে আর আমি। অবশ্য ঠাকুমা আছে। কিন্তু ঠাকুমা তো আমারই দিকে। ইশারায় বলছে ডাকিস না, তোর মার শরীরে একটুও দয়া মায়া নেই। ভাগিয়ে দেবে এখনই। তার চেয়ে আয় কিছুক্ষণ গল্প করি বসে। যা, কিছু পারলে খাবার নিয়ে আয় ঘর থেকে। দেখে মনে হচ্ছে খুল ক্লান্ত, খিদেও পেয়েছে খুব। আমি ভিতরে চলে গেলাম, সামান্য কিছু যদি আনতে পারি নিজেকে বেশ মনে হবে কিছু করা হল জীবনে। কেননা ঘর পর্যন্ত আসা কাউকে কিছু না খাইয়ে ফিরে যেতে দেওয়া আমাদের ঘরের নিয়ম বিরুদ্ধ। মায়ের নয়, মায়ের আগের তার শাশুড়ির নয় বা তার আগের যে সব মহিলারা এ ঘরে রাজত্ব করে গেছেন তাদেরও নয় হয়তো। কারণ আমি জানতাম আমাদের মতো গৃহস্থের ঘরের এটাই নিয়ম। করতে পারলে পুণ্য হয়। যদিও পুণ্য সম্বন্ধে বিশেষ কিছু কৌতূহল ছিল না। ছিল অনুকরণ করার চেষ্টা। আমি ফিরে আসি হাতে ঘরে বানানো সামান্য কিছু স্ন্যাকস হাতে করে। ততক্ষণে সে মেয়ের আমার ঠাকুমাকে যা বিক্রি করতে এসেছে তা দেখানও হয়ে গেছে। ঠাকুমা নেবে না বলে দিয়েছে বা দেয়নি কিন্তু যেতে দেয়নি তাকে, আমার হাত থেকে প্লেটটি নিয়ে নিজে তার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আগে খাও তারপর অন্য কথা হবে। আমাকে বললেন তুই পড়তে যা। তোর এখানে কোন কাজ। আমি তাও দেখলাম সে প্রথমে একটু কিন্তু কিন্তু করে তারপর ধীরে তারপর গোগ্রাসে সব কিছু খেয়ে ফেললো। ঠাকুমা আমাকে এবার ইশারা করলো আরও আন। আমি আর দাঁড়ালাম না কি জানি আমাকে দেখে তার হয়তো খেতে লজ্জা হবে। পরে দেখেছিলাম সে কয়েকটি কাপড় যা খুবই সস্তা দামের ছিল রেখে গেছে, টাকা না নিয়েই। আর ঠাকুমাকে বলে গেছে তার ঘরের কথা। তখন কে কাকে কনভিন্স করেছিল কে জানে। আমাদের অনুমান মিলেছিল, ঘরে এক বোন ছিল তার দাদা ছিল যে প্রায় কিছুই করে না। বাবা কারখানার ঠিকা শ্রমিক এবং সি পি এম করেন। অবশ্য মা নেই, ছিল কোনো কালে, একদিন নাকি বোনের ছোট বেলায় তার বাবারই দলের কোনো পার্টি লিডারের সাথে বেড়াতে চলে যায়। বাবা আর খবর নেয়নি, তারপর সেই মা, সেই দিদি, সেই সব। ঘরের জন্য করে আসছে যে মেয়ে আমার থেকে কয়েক বছরের বড়। এখানে আমাকে কিছুটা হোঁচট খেতে হয়ে ছিল। কেননা মা যে চলে যেতে পারে তা আমার সেই বয়সে অনুমান করা সম্ভব ছিল না। সে মেয়ে কিন্তু বুঝে ছিল এ ঘরের মানুষদের সাথে গল্প করে জিনিস বিক্রি করা যাবে। কয়েক বছর আসতো সে আমাদের বাড়ি, কাপড় দিয়ে যেত। কি নাম ছিল তার আজ আর মনে নেই। মনে করার তেমন কিছু ছিলনা সে মেয়ের মধ্যে হয়তো তাই। তবে জানতাম তার গল্পও ঠাকুমার ট্রাজেডি গল্পের মতো কোনো লোডশেডিঙের সন্ধ্যে হারিয়ে যাবে। সেও সেভাবে একদিন হঠাৎ হারিয়ে গেল। আর আসে না আমাদের বাড়ি, খবর দেয়না কিছু, মা তার খোঁজ করতে সেই আমাকেই পাঠায়। যা তো দ্যাখ কোথায় গেল সে। আমি তেমনই তার খোঁজ করতে করতে এক দখলি কলোনিতে পৌঁছালাম।    

 

(ক্রমশ)

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন