কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

গোবিন্দ ধর


কবিতার কালিমাটি ১০৮

 


ভুল এক রক্তচোষা ভাম্পায়ার

 

তাহলে জীবন কি শুধুই ভুল?

ভুল বর্ণমালায় গড়েপিঠে নিজেই নিজেকে

ভুলের চক্রব্যুহে জড়ানোই জীবন?

জীবন লাঙ্গির নেশার মত শুধুই ভুল আঁকড়ে

আরো ভুলের সরণি বেয়ে আরো ভুল আরো

ভুল আরো আরো শুধুই ভুল চিত্রমালা?

ভুল এক রক্তচোষা ভাম্পায়ার - সে পাঠ শেষেও

আরো আরো চক্র ও চক্রান্তের কাছে

হারতে হারতে জীবন পচা শামুকের মতো।

জীবন শাঁখের করাত - শুধু আসতে যেতে

হৃদয় মনন শরীরকে খুবলে খুবলে খায়।

 

প্রতিটি সিঁড়ি টপকাতেই ভুলের রক্তচোষা জোঁক  

মেরুদণ্ড চোখ হৃদয়খেকো ভুল এসে ঝেঁকে বসে।

 

অস্থিসার শূন্য প্রাণ হৃদয় খুবলানো এই আমি

দশচক্রে ভুত দেখি সাজানো বাগানে।

 

হৃদয়হাওর জুড়ে গভীর অসুখ

 

হৃদয়হাওর জুড়ে গভীর অসুখকৃষি লাফিয়ে

ধানচারার মতো আকাশ ছুঁতে চায়।

অসুখের গাছ অনেক বড় হয়ে গেলো অজান্তে।

ডালমূল শাখা তার ছড়িয়েছে মাটি ও আকাশতারায়।

 

কতটুকু গভীরে গেলে অসুখ ডানা মেলে

পাঠ নেই ডানায় লেগে থাকা মারণঅসুখ রেখেছি যত্নে।

ডানায় ঝাপটে অসুখহরিয়াল উড়ছে আকাশে

তার কামগন্ধ ঘ্রাণ এসে লাগেনি,সময় ক্রান্তিলগ্নে।  

 

প্রতিদিন শরীরের আড়মোড়া ভেঙে গেলে

তোমাকেই কাছেপিঠে রেখেছি, মুখে চুপ।

হৃদয়হাওর থেকে কিচিরমিচির শব্দ করে

একটি বিকেল গড়িয়ে পড়ে মরুমায়া রূপ।

 

চোখের গভীর থেকে ভালোবাসা গলে পড়ে

অসুখ হেসে বলে এসব মিছে অভিনয়।

শরীরে লেগেছে গ্রহণ ভুলের দাপট

আমিই ভূমিষ্ট নতজানু সবিনয়।

 

 যাপনচিত্র

 

ঠিক কিরকম আঁকবো অতিমারির সময়

বাজারের চিত্র, ঘরগৃহস্থলি সংসার

স্ত্রী পুত্র পরিজনের কেউ সুখে নেই।

বাজার ফেরত সবজির মতো বাড়ির বাইরে

গেলেই, নিজেকে ধুয়েমুছে রাখা জীবন

সেনিটাইজার মাক্স অক্সিমিটার আইসিতে নেওয়া

কোভিড পেশেন্ট সবখানেই লেগে আছে বিষাদের রঙ।

 

ঘরে ঘরে টুংটাং বাসনকোসন হাঁড়িপাতিল

মুখভার করা আষাঢ়ে মেঘ, শ্রাবণ শ্রাবণ মন

তাও কোথাও তাল কেটে পেকে যায় তাল।

তিল থেকে তাল হয়ে পড়ে যায় গৃহসুখ।

গৃহের অসুখ রেখে সেনিটাইজ জীবন থেকে

ভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে এত তোড়জোড়!

 

সব ঘরে নেমেছে কিছু বিষাদছায়া সকলেই

তীব্রভাবে সবুজ সবজীর মতো সতেজ হতে চায়

কোথাও তবুও বিকেলের অবিক্রীত সবজীর মতো

মনের গভীরে এসে মলিনতা নীড় বানায়।

 

এখান থেকে শুরু হলে বিশল্যকরণীর জোড়া লাগানোর প্রয়াস,

আর ফিরবে কি ফুরফুরে সকাল?

 

ঘরে ঘরে টুংটাং বাসনকোসন হাঁড়িপাতিল সংসার

কোথাও তাল কেটে দূরে তাবলায় সঙ্গত বাজে

বাজে ভাঙামন ডেকে আনা করোনা ডেল্টাপ্লাস।

 

ক্রমাগত লকডাউন করোনাকার্ফু এক দুই বাড়ছে

ঘরের ভেতর আরো আরো ঘরের সংখ্যা বাড়ে

সকালের টাটকাফল বিকেলেই হলদেটে যাপন

এই ক্রান্তিলগ্নে মন ক্রমশঃ টুকরো টুকরো ছন্নছাড়া

ক্যানভাস আঁকে গৃহসুখ, গৃহের ভেতর আরো এক গৃহ।

 

ডাস্টার

 

আগাছাগুলো পরিষ্কার করে দিতে হয়

যেমনটি ব্ল্যাকবোর্ড থেকে আঁকিবুঁকি

রেখা মুছে দিতে হয় চকচকে রাখতে।

 

এরকমই কিছু ভুল কিছু স্বপ্ন মুছে দিতে

একটি ডাস্টার জরুরি।

 

পেছন পেছন আসা বিষপিঁপড়ে

মাঝে মাঝে কামড়ে দিলে পিষে ফেলা জরুরি।

 

জরুরি ধান খেত থেকে আগাছা উপড়ে ফেলা।

কাটাকাটি করে অঙ্ক করতে নেই

মুছে নিলে ঝাঁ চকচকে একটি ব্ল্যাকবোর্ড

পুনরায় শুরু করতে যথেষ্ট।

 

দিন শুরুর আগে হোমওয়ার্ক সেরে নিলে

নির্ভুল গন্তব্যে পৌঁছা যায়। এক্ষেত্রে ভুলগুলো

মুছে দিতে একটি ডাস্টার জরুরি


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন