সমকালীন ছোটগল্প |
বটুকবাবু ফিল্মমেকার
বটুকবাবু ইউটিউবে একটা চ্যানেল খুলেছিলেন।
সারাজীবন ফিল্ম জাঙ্কি। চাকরি থেকে অবসর নেবার পর ভাবলেন বলিউড জ্ঞান একটু ভাগ করে
নেবেন। নানা কারণে মুক্তি না পাওয়া হিন্দী ফিল্ম নিয়ে ভিডিও বানাতে লাগলেন। পুরনো দিনের
নানা ছবি ৭০-৮০র দশকে যেগুলো আদৌ তৈরী হয়নি, কিম্বা কয়েক রিল শুটিং হবার পর বন্ধ হয়ে
যায় অথবা পুরো তৈরী হওয়ার পর ডিস্ট্রিবিউটর না মেলায় বা অন্য কোন কেচ্ছার জন্য বন্ধ
হয়ে যায়, এমন ছবি বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে ভিডিও বানান। দৃশ্যে থাকে সেসব ছবির পোস্টার,
ট্রেইলার, ক্লিপিংস।
বটুক প্রযুক্তিতে বাঘা। অডিও ভিডিও নিজেই
এডিট করেন। সপ্তাহে একটা ভিডিও তো আসেই। দেব আনন্দ, দিলীপকুমার, হেমা, বিনোদ খান্না
হয়ে শ্রীদেবী, অমিতাভ, অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্ত, মাধুরী দীক্ষিতের ক্যানড ছবির ভিডিও
ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ৫০০-৬০০ ভিউজ, ভালো সংখ্যক কমেন্টস এবং সেখানে বেশ কিছু
জানা-অজানা ফিল্ম নিয়ে ভিডিও বানানোর অনুরোধ। বটুক অনুপ্রাণিত বোধ করেন। খবর লাগান।
নার্ড স্টাইলে ডিপ ওয়েবে ঢুকে পড়েন। গহীন সমুদ্রে গায়েব জাহাজের পেটে রাখা মোহরের মোহমায়ায়
খুঁজে চলেন হারানো ছবি। যোগাযোগ করেন পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে।
তাদের টুইট করে শুধোন ছবি রিলিজের ব্যাপারে। ওটিটিতে রিলিজ করা যায়? নয়তো ইউটিউবে সরাসরি?
সম্পূর্ণ হওয়া স্বত্ত্বেও মুক্তি না
পাওয়া ছবিগুলোর পেছনে পড়ে থাকেন বটুক। অবাক লাগে কেমন করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের
বানানো ছবি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে গেছেন মেকাররা, অ্যাক্টররা! প্রশ্ন করলেও উত্তর দেন
না, আগ্রহ দেখান না। ঐ ছবিগুলো রিলিজ হলে কি ভাগ্য বদলাতে পারত সেইসব অভিনেতা-অভিনেত্রী,
পরিচালক-প্রযোজকদের? কে জানে ঐ ছবি হয়ত কাউকে-কাউকে সুপারস্টার বানিয়ে দিতো! কালস্রোতে
সবই কেমন বয়ে গেছে। ওরা অস্বীকার করেন ওদের সৃষ্টিকে! মনে করেন ভদ্রা লাগা ওসব ছবি,
মুক্তি নেই, তাই অভিশপ্ত! কারুর দেউলিয়া হয়ে যাবার স্মৃতি, কারুর স্বজন হারানোর আবার
কারুর মুখ থুবড়ে পড়া প্রেমের স্মৃতি লেগে থাকা সেসব ছবি ডাস্টবিনে পড়ে!
একজন পড়তি নায়ককে একদশক আগে বন্ধ হওয়া
ছবি নিয়ে জিগানোয় তিনি উত্তর দিলেন। বাজারদরে টান, কাজের চাপ নেই, সময় অঢেল বলেই হয়ত
মেসেঞ্জারে উত্তর এল দিন তিনেক পর। একটি হরর ফিল্ম। ওর নিজেরই প্রোডিউস করা। কো-প্রোডিউসর
ছিলেন স্ত্রী। সে বছর ওর একটা হোম প্রোডাকশন বক্স অফিসে মার খাওয়ার পর এই ফিল্ম আর
রিলিজ করতে পারেননি। মেসেঞ্জারে এককালের জনপ্রিয় হিরো আফসোস করে বলেন, "আহা ঐ
ছবিটায় কী ভালো কাজই না করেছিলাম! ভেবেছিলাম ওটা আমার কেরিয়ারের টারনিং পয়েন্ট হবে! হায়!" বটুকের
রিসার্চ বলছে, ছবিটার ফুল প্রমোশন হয়েছিল ট্রেলার, গানসহ। গানগুলো বেশ পপুলারও হয়েছিল।
অথচ রিলিজ হল না। গল্পখান ছিল এরকম:
মনোরোগবিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিজেই এখন মনোরোগী।
পাগল হয়ে গেছেন পরিবারের সবাই খুন হবার পর। হত্যাকারী ধরা পড়েনি। ১৫ বছর পর বৃদ্ধ ডাক্তার
মনোকষ্টে আর বাঁচতে চান না। নিজের খুনের সুপারী দেন নিজেই। যে কিলারকে কাজ দেওয়া হয়
সেই আমাদের অ্যান্টি-হিরো। কিন্তু কথামত ডাক্তারকে খুন করতে সেদিন রাতে বাড়ি ঢুকেই
বুঝতে পারে ডালমে কুছ কালা হ্যায়। খুনি নিজেই ফেঁসে যায়। এই হিচককসুলভ প্লটের সিনেমার
ট্রেলারও ছিল রুদ্ধশ্বাস! কেন যে রিলিজ হল না কে জানে! পরিচালক বেশ নাম করেছেন পরে।
বটুক যতবারই ট্রেলার দেখেন আর সিনেমাটার কথা ভাবেন, অবসেসড হয়ে পড়তে থাকেন। কে ঐ মুখোশপরা
খুনী যে সুপারী কিলারকে খুন করতে আসে? সেই কি খুন করেছিল ডাক্তারের বৌ বাচ্চাকে ১৫
বছর আগে? সে কি ডাক্তার নিজেই? সান্ধ্য আলোয় কে মোমবাতি জ্বালায় ঘরের কোণে? কার হাত
থেকে লাল বল নিচে পড়ে যায় রিভলভিং স্টেয়ারকেসের ফাঁক দিয়ে? ক্যামেরা ওপর থেকে নীচে আর নীচ থেকে ওপর তুলে ধরে বলটাকে? বটুক
বারবার নিজেকে দেখতে পান বসন্তোত্তীর্ণ সেই নায়কের পরিবর্তে।
বটুক চান যেভাবেই হোক সিনেমাটা রিলিজ
হোক। নাহলে তিনি নিজেই হয়ত বানিয়ে ফেলবেন অমন একটা ফিল্ম। কিন্তু বটুক কি আর সিনেমা
বানাতে পারবেন? সে কি চাড্ডিখানি কথা! তবে কি দেখবেন, সিনেমাটা নিজে থেকে তৈরী হয়ে
যায় কিনা? তার জন্য কি করতে হবে? হয় বৌ বাচ্চাকে খুন নাহলে সে খুনের সুপারী। দেখাযাক
না তারপর কী হয়!
ভালো লাগল। তবে লেখাটি আর একটু বড় হলে বেশ রুদ্ধশ্বাস হত। গল্পের প্লটে তেমন উপাদান আছে। আমার নমস্কার নেবেন অর্কবাবু।
উত্তরমুছুন