সমকালীন ছোটগল্প |
কুমারী
সিন্দারেলা বাড়ই
(১)
কুমারী সিন্দারেলা বাড়ইয়ের গল্পটি শুরু করার সময় কেন জানি আমার মনে হচ্ছে ওর মা যেদিন গর্ভে ওর স্পন্দন প্রথম বোধ করে এবং খাবার খেতে গিয়ে বমি করে, সেই মুহূর্ত বা তার আগের কিছু মুহূর্ত থেকে আমরা কাহিনীটা শুরু করতে পারি। লক্ষ্যা নদীর তীরে একটি বাড়ই বা পান চাষীদের গ্রামে পানের বরজে একটি পূজা শেষ হবার পর প্রসাদ খেতে গিয়ে সিন্দারেলা বাড়ইয়ের মা নির্মলা বাড়ই সহসা বমি করে ফ্যালে এবং মাথা ঘুরে পড়ে যায়। পূজায় উপস্থিত বয়সিনীরা বিড়বিড় করে বলতে থাকে - কী বিপদ! বরজ অশুচ হয়ে গেল! গর্ভিনীদের কি শরীর খারাপ মেয়েদের ঢুকতে নেই এ পূজায়। নতুন বউ। বছর না ঘুরতে গর্ভ হলো। ঘরে শাশুড়ি নাই। মা থাকে না কাছে-পিঠে। এ শরীরের হাল বোঝেও নাই এত দিন!
অথচ, পূজার শুরুটা কিন্ত সুন্দর হয়েছিল। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নবম দিন ছিল। লক্ষ্যার তীরে উষা দেবীর উদ্দেশ্যে বাড়ই মানে লতা-বৈদ্যদের নবমী পূজার দিন। নবমী পূজার জন্য পানের বরজের মাঝ বরাবর কলা গাছ পুঁতে চিনি, চাল আর মিষ্টি সাজিয়েছিল বাড়ই মেয়েরা উষা দেবীর ভোগের জন্য। সাত সকালেই সবাই নদী থেকে নেয়ে উঠেছিল। নদী থেকে নেয়ে উঠে আর পরিষ্কার কাপড় না পরে পানের বরজে ঢুকতে নেই বাড়ই নারী-পুরুষের। মাত্রই বর্ষাকালে পানের মরসুম গেছে। চারটা পানে এক গন্ডা আর কুড়ি গন্ডায় এক বিড়া হলে আশিটা পানে এক বিড়া। শত শত বিড়া পান হয়েছিল এ বছর। লক্ষ্যার তীর থেকে বিক্রমপুর অবধি লতা-বৈদ্য গ্রামগুলোর আশপাশে নৌকা আর নৌকা। ব্যাপারিরা পান নিয়ে যায় দূরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কি মুন্সীগঞ্জের হাটে বিক্রি করবে বলে। এখন অবশ্য এই ভাদ্র-আশ্বিন মাসে পানের ফলন কমে আসে। আরো পরে শীত পড়লে সূর্যের তাপ কমে পানপাতা অনেক সময় সাদা হয়ে যায়। তখন নিয়মই হলো পানলতার শেকড় বাঁশের কঞ্চির সাথে বেঁধে উপরের দিকে উঠিয়ে দেয়া।
-বাপের বাড়ির কথা মনে পড়তেছে গো কাকি!
মনোরঞ্জন বাড়ইয়ের বউ নির্মলা বাড়ই তার এক কাকি
শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে ঘুম ঘুম চোখে বলে। আজকাল কেন জানি তার শুধু ঘুম পায়।
-বিক্রমপুরের মাইয়া তুমি। তোমরা ত আবার উষা
দেবীরে কও সাংগাই দেবী, না?
-ঠিকই জানো - কাকি, আমরা লতা বৈদ্যরা পূজায়
ব্রাম্মণ ডাকি না ক্যান? কায়েতরা ক্যান আমাদের পূজা করায়?
-আমি সেই কাহিনীডা জানি। সৃষ্টির শুরুতে পান
চাষ করছিল একজন ব্রাম্মণ। কিন্ত ব্রাম্মণডা পান চাষে যত্ন করে নাই। তার অবহেলায়
পানের লতা অনেক লম্বা হয়ে যায়। লতা
বাইন্ধা রাখনের জইন্য সে তখন তার পৈতাডা দিয়ে বান্ধিবারে যায়। কিন্ত পানের লতা
বাড়তেছে ত বাড়তেছেই। সে আর তার পৈতা সামাল দিবার পারে না। তখন গ্রামের এক কায়স্থরে
সে হাত-পা ধইরা রাজি করায় পানের বরজের যত্ন নিবার জন্য। সেই থেকে অগো মানে
ব্রাম্মণগো পানের বরজে ঢোকা নিষেধ।
নির্মলার কাকি শাশুড়ি সুশীলা বাড়ই পূজার ভোগ সাজাতে সাজাতে গল্পটা বলে। শরতের সকালের সূর্য তখন একটু একটু করে চড়ছে।
-কাকি - তোমার বাপের বাড়ি য্যান কোথায়?
- সোনারগাঁও। ঐ যেখানে কাফুরি পান হয়।
কর্পূরের মত সুবাস। এই অখিলের বউ দেহি অহনো আইলো না?
- অর শরীর খারাপ করছে!
- তাই ক। তইলে আর কি? বিশ ঘরের বউ-বিটিরা সবাই
ত আসছে। জোকার দিয়া আমরা তইলে পূজা শুরু করি? শ্বশুর মরার এক বছর পুরা হইছে না?
অশৌচ ত শ্যাষ?
- শ্যাষ কাকি!
-মনোরঞ্জন কামের পোলা। তোরে ঘরে আনার আগে যেই
বচ্ছর বাপে-পোলার পানের বরজে ডাকাইতের হামলা হইলো আর পেরায় কুড়ি হাজার টাকার পান
কাইটা নিয়া গেল ডাকাইতরা - বাপের দেনা শুধতে তর জামাই শহরে মাইনষের বাড়িতে - ঐ যে
সরকারের ফুডে কাজ করে সতীশ সরকার - তার বাড়িতে তিন বছর কাম করছে! বেতনের সব টাকা
জমাইয়া ফিরা আইছে। বাপের বেইচা দেওয়া দুইটা বরজ ফিরা কিনছে - একা হাতে এই গোলমরিচ,
কুমড়া, বেগুন সব লাগাইছে বরজে। তারপর তোরে বিয়া করলো ত দেড় বচ্ছর মাত্র।
চিররঞ্জনদা ছেলে-ছেলের বউয়ের সেবা ভোগের কপাল কইরা আসে নাই। নিজের বউ বছর পাঁচ
আগেই গেছে। ছিল এক ছেলে। তারে বিয়া দিয়া বেটার বউ ঘরে আনতে না আনতে নিজেই মরলেন।
-কি এ্যাতো কথা কও তোমরা? পূজার যোগাড় ত সব
সারা! এখন কাজ শুরু করো!
তাড়া দেয় অন্য কোন বয়সিনী।
-করতাছি - করতাছি! কুলাডা একডু ধর ত!
নির্মলা কুলায় রাখা পানের বিড়া, ফল, চাল, সুপারি, কলা সব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কুল কুল করে ঘামতে থাকে। রোদ একটু উঠছে বটে তবে খুব চড়াও না। তবু সে সব কিছু কেমন আবছা দেখছে। সকাল থেকে উপোস থাকা, পূজার আয়োজন আর সুশীলা কাকির সাথে বকর বকর করার জন্যই কি মাথাটা একটু দুলছে?
-নে - পূজা শ্যাষ। কুলাডা রাখ এখন। প্রসাদ নে।
- প্রসাদ?
- হ্যাঁ- প্রসাদ? তোর জামাই গেছে সোনারগাঁওয়ের
হাটে পান বেচতে? সে ফিরলে তারে দিস আর অখন নিজে খাইয়া ল। সকাল থেকে ত উপাস আছিস!
ভক্তি ভরে, হাত বাড়িয়ে চাল-কলা-গুড়-নারকেল
মাখা আর কয়েক টুকরা কাটা ফল কি বাতাসা মুখে পুরতেই নির্মলা বোঝে ভেতর থেকে গুব গুব
করে বের হয়ে আসছে হলুদ জল।
-আরে কি হইলো - বমি হচ্ছে ক্যান?
-নতুন বউ মনে হয় পোয়াতি! দ্যাখো না মাথা ঘুইরা
পইড়া যাচ্ছ্।ধরো -
কি ভাগ্য না? গেল ভাদ্রে শ্বশুর মরছে আর এই
ভাদ্র ঘুইরা আশ্বিন আইতে না আইতে এক নতুন আত্মা সে সংসারেই জন্ম নিতাছে।
-অর শ্বশুরেই ফিরা আসলো কিনা কে জানে?
-হইতে পারে। যদি পুত্র সন্তান হয়, তবে হয়তো
ঠাকুর্দ্দার আত্মা নিয়াই জন্মাবে।
(২)
মনোরঞ্জন বাড়ই অবশ্য তিন বছর ঢাকায় কাটিয়ে বেশ আধুনিক হয়েই ফিরেছিল। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল অবধি সে পানের বরজে এক মনে কাজ করে। তারপর সাইকেল চালিয়ে প্রায়ই সে উপজেলা সদরে যায়। এর ভেতরেই স্ত্রীকে নিয়ে সে কয়েকবার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এসেছে।
-কাল তোমারে আর একবার নিয়া যাব। সাত মাস হইলে ছেলে হবে না মেয়ে হবে বুঝবে ডাক্তার।
-গিয়া কাম নাই। যদি শুনি মেয়ে?
-মেয়ে হইলে খারাপ?
-ইসশ কি শখ মেয়ে হবার! মেয়ে হইলে নাম কি
রাখবা?
-নাম ঠিক করা আছে আমার।
-কি নাম শুনি?
-সিন্দারেলা।
- সিন্দা - কি বললা?
- সিন্দারেলা - বিদেশী নাম - যে বাড়িতে তিন
বছর কাম করলাম, সেই বাড়িতে প্রিতি শুক্রবার একটা রূপকথা দেখাইত - সাহেব-মেমদের
রূপকথা - নাম ছিল ফেইরি টেল থিয়েটার - ঐ বাড়ির ছেলে-মেয়েদের মুখে শুনতে শুনতে
মুখস্থ হইয়া গেছিল - সেইখানে এই গল্পটা আমি দেখছি!
-তুমি ইংরেজি বোঝ?
-দেখতে দেখতে কিছু বুঝছি - কিছু ওরা বুঝায়
দিত!
- সিন্দা, কি নাম বললা?
-সিন্দারেলা-
-হ - সিন্দারেলা কি?
- সে লম্বা গল্প! একটা দুখী মাইয়া - মা-বাপ
নাই। সতালো মা আর সতালো বইনদের সাথে থাকে আর ঘরের সব কাজ করে!
-এত বাজে গ ল্প- ছি: ঠাকুর করুক আমার মেয়ের যেন
অমন ভাগ্য কখনো না হয়!
-সবটা ত’ শুনবা? সে কইন্যার যে পরে রাজপুত্রের
সাথে বিয়া হইলো?
-আমার রাজপুত্র লাগবে না মেয়ের বিয়া দিতি!
-আরে!
(৩)
তারপর - প্রিয় পাঠক - মনোরঞ্জন বাড়ই তার সাধ্যমতো খরচ করেছিল সন্তান জন্মের আগে - চাইলে সে ঘরে ধাই এনে প্রসব করাতে পারত। সেটা না করে সে বউকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তারের কাছ থেকে রেফারেন্স নিয়ে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। কিন্ত কেন জানি ধনুষ্টংকারের আক্রমণে নির্মলা বাড়ই তীব্র খিঁচুনি আর শ্বাসকষ্টে কোন মতে তার প্রসব দ্বারে রক্তমাখা একটি কন্যা শিশুকে তাজা ও জীবন্ত পৃথিবীর প্রতি উপহার হিসেবে রেখে ধীরে ধীরে চোখ বুঁজে ফ্যালে। ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা - পাশে কোথাও রেডিও বাংলাদেশে মাত্রই সকাল সাতটার খবর শুরু হচ্ছিলো।
ফিমেল ওয়ার্ডে প্রসূতির খাটের নিচে রাতে একটি চাদর পেতে শুয়ে থাকা মনোরঞ্জন বাড়ইয়ের মামী চোখের পিঁচুটি আঁচলে মুছতে মুছতে মনোরঞ্জনের দিকে তাকায়। বলে - কত কইলাম হাসপাতালে আসলে আয়ু ক্ষয় হয়, শুনলি না? বাচ্চা আমাগো হয় নাই? আমি সাত বাচ্চার মা! সব কয়টা বাচ্চা ঘরে হইছে! এখনো সারাদিন পানের বরজে কাজ কইরা রাতে তিনধামা চাল ঢেঁকিতে কুটতে পারি। দুইটা টাকা হইছে কি হয় নাই টাকার ফুটানি দেখাইতে বউয়ের কি আদর - হাসপাতালে ভর্তি করাইলি! কই, হাসপাতালে তর বউ বাঁচলো?
ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মনোরঞ্জনকে ওধার থেকে মেট্রন কড়া স্বরে ধমক দেয়, - সে দোষ আমাদের না। আপনার ওয়াইফ ইঞ্জেকশন দিতে ভয় পেত। সে প্রেগন্যান্ট মেয়েদের জন্য জরুরি সব কয়টা টিকা নেয় নি। টিটেনাসের টিকাটা বোধ করি এসকেপ করে গেছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিস্টার ত’ তেমন বললো আমাকে ফোনে। আমাদের বা ঐ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও প্রতিদিন এত রোগী- রোগী নিজে যদি না দেয়, তাকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রেখে ইঞ্জেকশন দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না! আপনি ত’ শেষের দিকে নিজে না এসে ওয়াইফকে একাই পাঠিয়ে দিতেন। এই গ্রামের মেয়েদের এত ইঞ্জেকশনের ভয়!
মনোরঞ্জন দুই হাতে চোখ মুছতে মুছতে মৃতা স্ত্রীর পাশে একটি দোলনায় শোয়ানো দুই হাত দুই পা নাড়তে থাকা মেয়েটিকে কোলে নেয়।
-মেয়ের নাম কি লিখব?
আর এক নার্স এসে একটি মস্ত খাতা হাতে নিয়ে
সামনে এসে দাঁড়ায়।
-ল্যাখেন দিদি - মাইয়ার নাম কুমারী সিন্দারেলা
বাড়ই!
(৪)
প্রিয় পাঠক, এখন আপনাদের মনে হতে পারে যে গোটা ঘটনাটাই আমার মত একজন নেহাত কাঁচা গল্পকারের মস্তিষ্ক প্রসূত কিনা? আসলে হয়তো এমন কিছু ছিলই না কখনো বা ঘটে নি? সিন্দারেলা বাড়ই নামে কেউ জন্মায় নি কোনদিন? সবিনয়ে বলি যে আপনাদের এ ধারণা ভুল। সিন্দারেলা বাড়ইকে চিনি আমি। কারণ সে আমাদের বাসায় কিছুদিন কাজ করেছিল। অবাক হলেন ত’? সিন্দারেলার বাবা মনোরঞ্জনদা যখন আমাদের বাসায় কাজ করতো তখন আমি ক্লাস টুতে পড়ি। তিনবছর কাজ করে মনোরঞ্জনদা চলে গেলেন গ্রামে। দুই বছর পর একদিন মনোরঞ্জনদা এলেন একটি এক বছরের বাচ্চা মেয়েকে কোলে করে। আমি তখন ক্লাস সেভেনে। মা’র সাথে গল্প করলেন অনেকক্ষণ। আমার মা ছলছল চোখে বললেন, দ্যাখ - আমাদের বাসায় যে মনোরঞ্জন ছিল না তার একটা মেয়ে হয়িছে? মেয়ের নাম রাখিছে সিন্দারেলা। হা- হা- ঐ যে ফেইরি টেল থিয়েটার দেখিতো টিভিতে?
মা বলে চলেন তাঁর গোপালগঞ্জের ভাষায়।
-আবার বিয়া করবা নাকি ও মনোরঞ্জন?
-বুঝি না মাসী!
-বিয়ি ত’ করতি হবে। তুমি পুরুষ মানুষ। তাতে এই
যুবক বয়সে স্ত্রী হারিয়েছো। বিয়ি ত’ করতিই হবে!
-দেখি - যদি ধৈর্য্য সহ্যঅলা মেয়ে পাই যে আমার
মেয়েটাকে দেখবে!
মা কোথা থেকে কোথা থেকে ঠিক এক বছরের মেয়ের পরণের কিছু পুরনো সূতির জামা দিব্যি মনোরঞ্জনদা’র হাতে গছিয়ে দেন। মা’র স্টোরে থাকেও। নিশ্চিত দিদির মেয়ের জামা। টিউলিপের বয়স এখন তিন। ওর এক বছরের জামাগুলো থেকেই মা দিচ্ছে। গরীব আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত জন, অতীতের গৃহকর্মী বা তাদের সন্তানদের জন্য মা’র রিসাইকলড পোশাকের স্টোর হাউস। আচ্ছা, আমাদের মায়েদের এসব রিসাইকলড স্টোর নিয়ে আমরা কোন গবেষণা করি না কেন?
- তোমার মেয়েকে পুরনো জামাই দিলাম - জানি,
তোমার এখন অবস্থা ভাল হয়িছে!
- না-মাসী! অবস্থা ফিরছিলো। সিন্দারেলার মা
মরার পর সব হাল ছাড়লাম। এখন আবার বরজে পোকা - আয় নাই!
-ভাগ্যের উপর সব ছাড়লি হবে? কথায় বলে তোমার
পুরুষকার বড় জিনিষ- কাজ করি সব দু:খ জিততি হবে!
-কি জানি মাসী? আজ যাই?
-আসো!
-মা মরা মেয়েটার জন্য আশীর্ব্বাদ করবেন!
- সে ত’ করি!
মনোরঞ্জনদা চলে যাবার সময় কেন জানি আমাদের
সবার মন খারাপ হয়ে যায়। সিন্দারেলার সাথে আমাদের দ্বিতীয় দফা পরিচয় হয় যখন ওর বয়স
নয়বছর আর আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স ফাইন্যাল ইয়ারের ছাত্রী।
এবার মনোরঞ্জনদা যখন এলেন, তখন তাকে আমি চিনতে পারি নি। মাথার চুল পড়ে যাওয়া আর
স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়া এই মনোরঞ্জনদা আগের মানুষটির চেয়ে কি ভয়ানক আলাদা!
-মনোরঞ্জন যে - কি ব্যাপার?
-দয়া করেন মাসী - আমার মা মরা মেয়েটাকে দয়া
করেন!
-কি হয়িছে?
-কি আর হবে? ওর দ্বিতীয় মা মেয়েটাকে খেতে দেয়
না, মারধোর করে, ঘরের সব কাজ করায়! এইটুক মেয়ে আমার চুলার কাছে থাকতে থাকতে কালো
হইয়া গেছে! আপনার সব কাজ করতে পারবে - নয় বছরের মেয়ে আমার স-ব রান্না করতে পারবে!
-রান্না এখনো আমি নিজিই করি। তা’ আমার বড় মেয়ে
বিসিএস অফিসার। তার ছোট মেয়েটার মাত্র দুইবছর বয়স। ভারি দুষ্টু। ওর মা-বাবা আর
বড়দিদি সবাই যখন অফিসে কি স্কুলে চলে যায়, আমার ছোটমেয়ে লীরার ভার্সিটিতে সামনে
ফাইন্যাল - আমি নিজে সারাদিন ওকে সামলাতি পারি না - তোমার মেয়ে শুধু আমার ছোট
নাতনীর সাথে খেলবি - টাকা দেব মাসে এক হাজার আর তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া ফ্রি!
-আপনার অনেক দয়া!
মনোরঞ্জনদা মা’র পায়ে হাত দিয়ে কাঁদতে থাকেন।
-কাঁদে না মনোরঞ্জন কাঁদে না - পুরুষ মানুষির
কাঁদতি নাই।
(৫)
দু’টো বছর সিন্দারেলা আমাদের বাসায় দিব্যি থাকে। আমাদের বাসায় কাজ করতে আসা অধিকাংশ গৃহকর্মী মেয়েকে আমি যেমন প্রাথমিক শিক্ষা নিজ গরজে দান করতে গিয়ে বিফল হয়েছি - মেয়েগুলো পড়তে চায় না বা বই লুকিয়ে রাখে বিছানার নিচে - সিন্দারেলার পড়ায় বেশ মন। তবে কেন জানি পড়া সে বেশি মনে রাখতে পারে না। মাঝে মাঝেই ভুলে যায়। আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো রান্নাঘরে গ্যাসের চুলার পাশে একটি মোড়ায় বসে থাকতে তার পছন্দ। তাকে টিভি দেখতে ডাকলেও সে রান্নাঘরে চুলার পাশে মোড়ায় বসে ঢুলে। এটা নিয়ে তাকে বকলে সে একটু ভীতুর মত হেসে বলে যে গ্রামে সারাদিন চুলার পাশে থাকতে থাকতে এটা তার অভ্যাস হয়ে গেছে!
-বোঝ লীরা বোঝ - জীবন কি কঠিন! এটুকু মেয়ের চুলার পাশে থাকা অভ্যেস হয়ি গেছে! মা আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, এদেশে ত’ সব আরাম আমাদের - একাত্তরে ওপার বাংলায় গিয়ি দিখিছি সব কয়লার চুলায় ফুঁ দিয়ি দিয়ি রান্না করা কি কষ্টের! কয়লার চুলা হলি বুঝতাম সিন্দারেলার তার পাশে থাকতি ভাল লাগে কিনা? কি সিন্দারেলা? তা’ সিন্দারেলার নামটা একদিক থেকে সার্থক। দোকানে এত ছোট জুতা আর পাওয়া যায় না - একদম আমার দুই মেয়ের মত!
মা হেসে ওঠে। কথাটা সত্যি। আমি আর আমার চার বছরের বড়দিদি মানে আমার মেজদিদির পায়ের মাপে জুতা পাওয়া সত্যি বেশ কঠিন। যে কোন দোকানে গেলে জুতা খুঁজতে দিন চলে যায়। দোকানীরা অবাক হয়ে আমাদের প্রকৃত বয়সের সাথে জুতার মাপ মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করে আর আমরা লজ্জা পেতে থাকি।
-এইটাও লাগলো না আপা? আপনার পায়ে যেইটা পইরা আছেন সেইটা দেখান দেখি!
দীর্ঘ কামিজ বা সালোয়ারের ঝুলের আড়াল থেকে পা
বের করলে দোকানীরা আমাদের জুতা হাতে নিয়ে অবাক হয়, এত ছোট জুতা? না - এই ডিজাইনে
এর চেয়ে ছোট জুতা আর হবে না!
-প্লিজ ভাই - এই ডিজাইনটা খুব সুন্দর। আর এক
সাইজ ছোট হবে না?
-না, আপা - এর চেয়ে আর ছোট নাই। আপনারা কিসে
পড়েন?
-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।
বলতে বলতে লজ্জা পেয়ে ভাবি যে আমার বড় ভাগ্নির
জুতা ইতোমধ্যে আমার পায়ের মাপের চেয়ে বড়। আমাদের দুই বোনের জুতা খুঁজে পাবার সাথে
যুক্ত হলো সিন্দারেলার পায়ের মাপে নিদেনপক্ষে একটি স্পঞ্জ খুঁজে পাবার সংগ্রাম।
আমার সেজদা একদিন সিন্দারেলার পা দেখে হেসে ফেললো - এ দেখি বিপ্লব-পূর্ব চীনের
মেয়েদের লোটাস ফিট। পদ্ম পায়ের পাতা। এত ছোট পায়ে কোন জুতা বা স্যান্ডেল লাগবে না।
সত্যি তাই। সিন্দারেলা আমাদের বাসায় দু’বছর থাকতে থাকতে মাথায় তিন হাত লম্বা হয়ে গেল, তবে তার জুতা বা স্পঞ্জ সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারেরই রয়ে গেল। আমার মেজদিদি পিএইচডি করতে চলে যাবার পর আমি যখন বিদেশে মাস্টার্স করতে যাব কিনা ভাবছি দেশে মাস্টার্স শেষ করার পর, এক সকালে সিন্দারেলার গ্রাম সম্পর্কে এক কাকা এলো ভয়াবহ দু:সংবাদ নিয়ে। সিন্দারেলার বাবাকে সাপে কেটেছে। এখনো নাড়ি চলছে। ওঝা এসেছে। অচেতন মনোরঞ্জন তার প্রথম পক্ষের বড় মেয়ের নাম বলছে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে। কাজেই সিন্দারেলাকে আমাদের যেতে দিতে হলো। বড়দিদির ছোটমেয়ে ততদিনে চার বছরের হয়ে উঠেছে এবং তার দুষ্টুমির পরিমাণ খানিকটা কমেছে।
(৬)
সিন্দারেলার সাথে আমার তৃতীয় বা শেষবার দেখা হয় আরো পাঁচবছর পর। আমি তখন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডির ফিল্ড ওয়ার্কের কাজে দেশে এসে সাভারের কিছু নারী পোশাক শ্রমিককে শুক্রবার ছুটির দিনে কারখানার পার্শ্ববর্তী তাদের বস্তিতে গিয়ে ইন্টারভিউ করছি। বাবা-মা দু’জনেই এ পাঁচ বছরে মারা গেছেন। তা’ এক শুক্রবার সাভারের এক বস্তিতে গ্রাম থেকে এসে মেস করে থাকা কিছু কিশোরী কি তরুণী পোশাক শ্রমিকের সাথে আলাপ করার সময় একটি মেয়ের চেহারা চেনা চেনা লাগতে থাকে। কিছুতেই মনে করতে পারি না কোথায় তাকে দেখেছি। নারী শ্রমিকরা তাদের নাম-পরিচয় বলার পালা শুরু করলে সেই মেয়েটি তার নাম বলার সময় বললো, আমার নাম কুমারী সিন্দারেলা বাড়ই!
সাথে সাথে আমার চোখে চলে গেল ওর পায়ের দিকে।
সেই পদ্মের কুঁড়ির মত ভারি ছোট পা।
-তুমি সিন্দারেলা! আমাকে চিনতে পারছো?
-আমি চিনছি - ভাবছিলাম আপনি চিনছেন কিনা?
এক গাল সরল হাসিতে ওর মুখ ঝলসে ওঠে।
জানা গেল বাবা মারা যাবার পর বছর চারেক ভয়ানক কষ্টে কেটেছে তার। দিন-রাত চুলার পাশে থেকে কাজ করা আর দ্বিতীয় পক্ষের মা আর বোনদের হুকুম তামিল করতে করতে তার নাভিশ্বাস উঠে গেছিল। জীবনে বাঁচতে সে সাভার চলে এসেছে কাজে। এক বছরের উপর হয় সে এখানে কাজ করে।
-আল্লা অরে অনেক কষ্ট দিছে ঠিকই তবে সামনে ওর কপালে অনেক সুখ!
একটি মেয়ে মুচকি হেসে বলে।
-কিরকম?
-আপা - অর ত’ বিবাহ ঠিক হইছে। দুইমাস আগে
বাবার মৃত্যু বার্ষিকীতে গ্রামে গেছিল। সেখানে গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে - কি নাম
জানি?
-রজতকুমার বাড়ই! লজ্জায় লাল হয়ে সিন্দারেলা
মাথা নিচু করে বলে।
-আপা - সিনেমার স্টোরি অর গল্পের পাশে কিছু
না। চেয়ারম্যানের বাড়ি কীর্ত্তনের অনুষ্ঠান আর তারপর পায়েস খাওয়ার কথা ছিল।
গ্রামের সবাইর দাওয়াত আছিলো। আমি আপা অর গ্রামেরই মেয়ে। আমরা মুসলমান পানচাষী।
আসলে চেয়ারম্যানের ছেলে - আমাদের গ্রামটা আপা হিন্দু প্রধান গ্রাম - চেয়ারম্যানের
ছেলে আসলে পাত্রী দেখতে মন চাইছিল। সিন্দারেলারে অর সতালো মায়ে আর বইনরা যাইতে
দেবে না। মুটকি দুই সতালো বইন ত’ সাইজা-গুইজা শ্যাষ! আমিও তখন কারখানা থেকে
তিন/চাইরদিনের ছুটতে গ্রামে গেছিলাম। অরে ফ্যাক্টরির কামে ত’ আমি নিয়া আসছি। তা’
অগো বাসা থেকে কাছেই আমগো বাসা। আমি গেছিলাম অগো বাড়ির পাশে আমাগো কয়েক হাত চওড়া
কুমড়া ক্ষেত থেকে কুমড়া কাটতে। তা’ কুমড়া কাইটা ভাবলাম সিন্দারেলার সাথে দেখা কইরা
যাই। বাড়ি ঢুইকা দেখি সিন্দারেলার কি কান্দন! কইলাম, কি হইছে? কয় - ঐ বেটি তার দুই
মাইয়ারে সাজায়-গুজায় চেয়ারম্যান বাড়ি নিয়া গেছে চেয়ারম্যানের পোলার চোখে পড়ার
আশায়। অর নিজের মা-বাপ কেউ নাই। অরে কে বিয়া দিব? আমি কইলাম - কান্দবি না ছেমড়ি!
তখন আপা আমার কাছে যা ছিল - ভাল একটা শাড়ি, কাজল-ফিতা-ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী-পাউডার-আলতা...
সব দিয়া সাজায় দিলাম। কইলাম, যাবি আর আসবি। অত ভিড়ে কেউ ভাল কইরা খেয়াল করবো না!
সতালো মা আর বুইনেরা আসার আগেই বাড়ি ফিরবি!
-তাজ্জব! এ ত’ সেই রূপকথার গল্পের মতই! তারপর?
-এ ছেমড়ি তাড়াতাড়ি ফিরা আসার সময় আবার জুতা
একখান ফেলায় আসছে!
-বলে কি? সত্যি?
-সত্যি না? চেয়ারম্যানের ছ্যামড়া ঠিক তালে
তালে পরের দিন অগো বাসায় আইসা হাজির। তারপর ত’ অর পায়ে জুতা লাগার পর বিয়ার
প্রস্তাবও দিছে!
-কবে বিয়ে?
-সামনের মাঘ মাসে। বকেয়া টাকাগুলা নিতে আসছি।
এগুলা নিয়াই বাড়ি যাব।
মাথা ঝাঁকিয়ে জানায় সিন্দারেলা।
-বাড়িতে তোমার ত’ মা-বাবা নাই?
- না থাকুক। মা’র এক পিসতুতা বোন আছে দু’টা
গ্রাম পর - সেই মাসীর বাসায় গিয়া উঠবো। সেখানেই বরপক্ষ আসবে!
নখ খুঁটতে খুঁটেতে বলে সিন্দারেলা।
-খুব খুশি হলাম। মা বেঁচে থাকলে তোমার বিয়ের
খবর শুনতে পেলে খুব খুশি
হতো!
-উনি আর নাই, না?
-না।
-আমারে আশীর্ব্বাদ কইরেন।
সিন্দারেলা আমার পায়ের কাছে গড় হয়ে প্রণাম
করার উদ্যোগ নিতে গেলে আমি বিব্রত ও বিরক্ত হই। মানুষের মানুষকে গড় হয়ে প্রণাম
করাটা কি খুব বাজে একটা বিষয় নয়?
-আপনার মোবাইল নম্বরটা দেন। আমার মা’র পিসতুতো
দিদির ছেলে মানে আমার মাসীর ছেলে আমার বিয়ার সময় আপনারে আমাদের গ্রামে নিয়া আসবে।
আমি হৃষ্টচিত্তে সিন্দারেলার সাথে মোবাইল
নম্বর বিনিময় করি।
(৭)
কুমারী সিন্দারেলা বাড়ইয়ের সাথে শেষ দেখাটা আমার হয়েছিল রিয়েল নয়, ভার্চুয়্যাল লাইফে। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, সাভারে ফিল্ডওয়ার্ক শেষ করে আসার পর প্রায় একসপ্তাহ ধরে ডাটা ট্যালি করা শেষ হলে এক সন্ধ্যায় রিল্যাক্সড হতে আমি ফেসবুকে ঢুকি। লগ-ইন করতেই ‘দিকশূন্যপুরের নৃ-বিজ্ঞানী’ হ্যাজ ট্যাগড ইউ ইন আ পোস্ট নোটিফিকেশন পেয়ে কৌতূহলী হই। দিকশূন্যপুরের নৃ-বিজ্ঞানী কারো একক আইডি না কালেক্টিভ আইডি জানি না, তবে এদেশে পোশাক কারখানায় যখন তখন পুড়ে মরা, পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে মরা কি নানা ভাবে মরতে থাকা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সত্যি তাদের ভাল কাজ আছে। আমিও ফেসবুক মারফত গরমাগরম মাঠের খবর পেয়ে যাই। বিনোদন, এ্যাক্টিভিজম সব হয়। প্রযুক্তি রথ দেখা ও কলা বেচা কেমন সহজ করে দিচ্ছে! তা’ দিকশূন্যপুরের নৃ-বিজ্ঞানীর নোটিফিকেশনে ক্লিক করতেই খবরটা স্পষ্ট হয়:
গতকাল সাভারে একটি পোশাক কারখানায় দুপুরে শৌচাগার ব্যবহার করতে যাবার সময় ভুত দেখার আতঙ্কে বা গুজবে এবং একইসময় কারখানায় শর্ট সার্কিটে গোলযোগে একটি ছোট অগ্নিকান্ড সৃষ্টি হলে ভূতের গুজব এবং অগ্নিকান্ড - উভয়ের মিলিত ত্রাসে কয়েক জন নারীশ্রমিক তাড়া-হুড়া করে কারখানার সরু ও সঙ্কীর্ণ সিঁড়ি পথে নামতে গেলে পদতলে স্পৃষ্ট হয়ে প্রায় পঞ্চাশ জন আহত এবং দশজন গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের ভেতর তিনজনকে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
কারখানার কিছু নারীশ্রমিক গত কয়েকদিন ধরে ভৌতিক কোন প্রেতাত্মার ঘোরা-ফেরা সন্দেহ করছিল। মনস্তত্ববিদ শেহতাব আরার মতে বছর তিন আগে একটি বড় কারখানা ধসে অনেক শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের বন্ধু-বান্ধবী বা সহযোগী শ্রমিক যারা আজো বেঁচে আছে তারা কালেক্টিভ হ্যালুসিনেশনের শিকার হতে পারে।
নামগুলো পড়ার আর দরকার হয় না। ফেসবুকে কুমারী সিন্দারেলা বাড়ইকে আমি চিনে যাই। পোস্টের সাথে তিন মৃতার ছবি জুড়ে দেয়ায় ছবিগুলো ক্লিক করতেই তারা বড় হতে থাকে। এক পায়ে জুতা এবং অন্য পা থেকে জুতা ছিটকে পড়া পদ্ম পায়ের পাতা আর পানপাতার মত মুখের গড়নের এক পানচাষী কন্যা সিন্দারেলা বাড়ইকে চিনতে কোন ভুলই আর হয় না আমার। চেয়ারম্যানের ছেলে রজতকুমার বাড়ই তার জীবনে পরবর্তী কোন্ মেয়েকে খুঁজে খুঁজে জুতা পরাবে সেটা আর আমার জানা হয় নি। আমার গবেষণায় তার কোন দরকারও ছিল না।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন