কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

সাগরিকা রাজবংশী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৬


অতীতের গল্পেরা এবং কয়েকটি কবিতা

 

(১)

 

দম বন্ধ করা শ্বাসগুলো

অকারণেই ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর

রাস্তা আটকানোর পরিকল্পনা করে

প্রাণপণে...

 

(২)


দূর পথে টেলিগ্রাম ভাসে নিরন্তর। চিঠির পর চিঠি, ভাঁজে ভাঁজে ক্ষয়ঃপ্রাপ্ত  হাতের রেখা স্মরণ করে কালির ছোঁয়া। রঙ বেরঙের কালি। এক একটা কালির  ছোঁয়ায় এক একরকম অনুভূতি। ঠিক যেভাবে রঙ আকৃষ্ট করে প্রজাপতি। আর  সেই রঙ সে সারা গায়ে মেখে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে প্রজাপতি হয়ে ওঠে রঙ।

 

(৩)


বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া ভাঙা নৌকা জীর্ণ শীর্ণ শরীরে ডুব দিয়ে শোঁকে শরীরের গন্ধ মিশ্রিত নতুন আলকাতরা। সর্বাঙ্গে রঞ্জিত নতুন রঙ। নতুন শরীরে  চকমাটির আলপনা। প্রত্যেকটা দাগের অন্য একটা দাগে পর্যবসিত হওয়া। তারপর আলগোছে আর একটা দাগে নির্বাসনের প্রস্তুতি।

 

(৪)


যদি ঘটনাগুলো ঠিক এইভাবে ঘটতো। ঘটতে ঘটতে একসময় খেই হারিয়ে জট পাকিয়ে সুতো হয়ে উঠতো। আর দীর্ঘ সুতোর আঁশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতো জাদুকরী প্রদীপ। তারপর আলতো করে হাত ঘষলে দুর্জ্ঞেয় আঁধার অবমাননা করে বেরিয়ে আসত ইচ্ছেডানা। ঝাঁকে ঝাঁকে।

 

সময়ের অঙ্ক

 

(১)


তারিখদেরও কি ভুল হয়? পরতে পরতে ভাঁজে আটকে থাকা সোনালি আবেগ। না, আবেগদের ছুটি নেই। ওদের কোন বছর নেই। মাস নেই। ঘণ্টাও তার কারবার চুকিয়ে চলে গেছে। নির্ভুল সময়ের হিসেবে কে যেন জল ঢেলে দিয়েছে।

 

(২)


ঠিক কতগুলো ঘন্টা হলে একটা দিন পার হয়ে যায়? জটিল যোগ বিয়োগের খেলা। কিংবা অনেকগুলো নাছোড়বান্দা মুহূর্তের হিসেব। হিসেবগুলো জট পাকিয়ে বুড়ো বট গাছটা বেয়ে মাটিতে ঢলে পড়েছে। তার শিরা উপশিরা বেয়ে নামছে অনেক নদীর জল। 

এক, দুই, তিন… নেমেই চলেছে।

 

(৩)


খোলা মাথায় গোত্তা খায় খাতার হিজিবিজি। নরম সাদা স্লেটে সেই যে দাগ পড়ল। ডাস্টার ঘষে দাগ মুছলো। আবার দাগ পড়ল। একটার ওপর আরেকটা।  মুছতে মুছতে সারাজীবন কেটে গেল। এখন আমার স্লেটে হিজিবিজির মেলা বসেছে।

 

(৪)


ডায়েরির খাঁজে দোমড়ানো পাতার স্তূপ। বহু বছর ধরে স্তূপে সঞ্চিত ধূলির ছাওয়ায় বৃদ্ধ প্রচ্ছদপট। ধীরে ধীরে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া। সময়ের স্রোতে গা ভাসানো। বারংবার ডুবে যাওয়া। আর জেগে ওঠা মগ্নচড়া। নিশ্চিত জেনেও অনিশ্চিতে ফিরে তাকানোর খেলা। পানকৌড়ির হিসেব তো তাই বলে।

 

হাতেখড়ি

 

(১)

 

মাঝে মাঝে ওরা পায়ে হেঁটে চলে আসে

চাঁদ ওঠে উশকো খুশকো চুলে

ভুট্টার খেত হাসি হয়ে বিঘায় শেষ হয়

 

(২)

 

এই তো চায়ের কাপ প্লেটগুলো হাতদুটো           

ধরে আছে

কচি কচি হাত

 

(৩)

 

দেখ, সবুজের গন্ধ ঠিকরাচ্ছে শরীর

কচি মাংসের বড় স্বাদ!

মূল্য নির্ণয় করে রাক্ষুসে উপত্যকা

 

(৪)

 

দাঁড়িপাল্লা চায় আনন্দের ভাগ

রাত হলে উনুনে একফালি উপগ্রহ ভাসে

আগুন সেঁকে ইতস্তত ইচ্ছেডানা

 

(৫)

 

রাস্তার ওপর ছোট্টু ছুটকির ঘর

স্ট্রিট লাইটে  প্রসাদোপম স্বপ্ন দেখা যায়

হাত বুলোয় অ আ ক খ

সস্তা খাতায় এঁকে বেঁকে যায় নদী।

 


1 কমেন্টস্: