কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯০


চিন্তামৃত্যু


মুখ ফেরানো দিন থেকে মুখ তুলে তাকানো রাত পর্যন্ত চোখ চলে গেলেও নড়েনা মৃত্যু-পরবর্তী নিথর শরীর। তবে? কী এমন ছিল দরজার কোণের ঐ অন্ধকারে  যে মরে শক্ত হয়ে আসা টিকটিকিটার শরীর দরজা ঠেলে ঘরের ভেতর ঢুকে আসতে লাগলো তরতরিয়ে?

সকালবেলায় দিব্বি খেলাধুলো করছিলো টিকটিকিটা। ঘরময়। কী এমন বিষ ছিল  সেই সন্ধ্যায় যে কয়েক ঘন্টায় মরে কাঠ! হঠাৎ চোখে পড়লো দরজার কোণে কালো হয়ে আসা নিকষ দেহ। চোখদুটো ফ্যাটফ্যাট করে খোলা। অথচ তারপর দেখা গেল প্রতি ঘন্টায় একটু একটু করে এগোচ্ছে। গুটি গুটি পায়ে! তবে কি মরেনি, স্রেফ মরার ভান করে পড়েছিল এতোক্ষণ? 

লাঠির ডগা দিয়ে দেহ উল্টে দিতেই বেরিয়ে পড়ল সত্যিটা। টিকটিকির অন্তর্দেহে পিপীলিকা সমাবেশ। অনেকক্ষণ ধরে কুরে কুরে খাচ্ছে ভেতর থেকে ওর শরীরটাকে। ওর ভেতর-শরীরটাকে। খেতে খেতে টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কোন সে অন্ধকার ডেরায় যেখানে বাকিটা খাবে! সবটা খাবে! সবটা। শবভক্ষণ এবং শববাহনের এই সমাপতন চমৎকৃত করে!

তবে কি পিঁপড়েগুলোই খুন করলো জ্বলজ্যান্ত টিকিটিকিটাকে? তারা কি কেবল মৃত শরীরের খাদক নাকি হন্তারকও বটে? কিন্তু তা কী করে সম্ভব! খুদে খুদে  লাল কালো পিঁপড়েগুলোর কাছে ঐ টিকটিকি তো নেহাৎই গডজিলা। মরলেই কেবল তার কাছে ঘেঁষবে পিঁপড়ের দল, নচেৎ নয়। তবে কি বিষ ছিল নীল আকাশে ঘনায়মান অন্ধকারে যে এক সন্ধ্যায় মরে কাঠ হয়ে গেল?

পিঁপড়েরা মরলে কি টিকটিকিরা খেতে পারবে ঐ লিলিপুট শরীর? টেনে নিয়ে যেতে চাইবে কোন অজানা গুহার ভিতর? ভেতর-শরীর খাওয়ার পর খোলশ   পড়ে থাকবে সে গুহায়। বাহির-শরীরের খোলশ। 

এসব চিন্তা অজ্ঞতাপ্রবণ মনুষ্যজাতির। পিঁপড়ের শুধু পরিশ্রম। সুসংহত পরিশ্রম। টিকটিকির খোলা চোখ কি দেখে নিচ্ছে তার খাদ্য হয়ে ওঠার উত্তরকাল? নাহ। তা নিতান্তই অসম্ভব এবং ফলত চিন্তার অতীত। চিন্তার ভবিষ্যৎ হল মৃত্যু। মুখ ফেরানো দিন থেকে মুখ তুলে তাকানো রাত পর্যন্ত চোখ চলে গেলেও নড়ে না মৃত্যু-পরবর্তী নিথর শরীর।

 


1 কমেন্টস্: