কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯০

 


অস্পৃশ্য-সাধন


বাজার নিয়ে ফিরছিলাম। দুহাতেই জিনিস রয়েছে। বড় বাজারের থলেটাতে, হাতের একটা প্যাকেটকে ঢুকিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম। অনেক কসরতেও থলেটা ঠিকমত ফাঁক হচ্ছিল না। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়েই শাপান্ত করব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। করলেও বা কাকে করব, অদৃষ্টকে!

এই সাতমাসের কোয়ারান্টাইনে, হ্যাঁ কোয়ারান্টাইন নয়ত কি! বেরুনো নেই, কারুর বাড়ি যাওয়া নেই, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নির্দ্বিধায় চড়তে পারা নেই, একাডেমি নেই, কফিহাউস নেই, এমনকি আপিস-ক্যান্টিনে পিএনপিসিটা অবধি নেই। আপনি বলবেন যে, “হ্যাঁ মশাই! আপনাদের তো শুনেছিলাম সেক্টর ফাইভ, তা সেখানেও কি ক্যান্টিনে ক্যান্টিনে পিএনপিসির চল আছে নাকি?”  আমি বলবো, “আহা, মেঝেটা মার্বল হলেই কি আর ক্যান্টিনটা ফাইভস্টার হয়ে যায়, নাকি গলায় টাই ঝোলালেই বাঙালিরা সব সাহেব হয়ে যায়? আপিস  ধর্মতলাতেই হোক বা নিমতলায়, সেক্টর ফাইভে হোক কী বানতলায়, ক্যান্টিন ও পিএনপিসি সর্বত্র। কিন্তু এখন হয়েছে উল্টো বিপদ। মাস্কের ঠেলায় গলা বেশী নামানো যাচ্ছে না। আবার রামকে শ্যামের গল্প বলতে গিয়ে, হয়ত বা শ্যামকেই শ্যামের সম্পর্কে দু’চার কথা তেড়ে শুনিয়ে দিচ্ছি। আসলে ফর্ম্যাল পোশাকে তো  রামে-নিতাইতে কোনই পার্থক্য নেই! মুখোশের আড়ালে যে কে বা ঘাপটি মেরে বসে আছে! সে যাইহোক! বিরক্তির একশেষ। আমার যদিও বা আবার ওয়ার্ক  ফ্রম হোম। তবুও কি এত খাটনি পোষায়? মাইনেটা পাচ্ছি বলেই কী... দুত্তোরি,  যত্তসব! এ তো আচ্ছা জ্বালা হল দেখছি, এতটুকুও ফাঁক করতে পারছি না এই ঘাটের ইয়ে থলেটাকে... উফফ!

সামনেই সিপিএমের বইয়ের দোকান। এক হতভাগা ছোকরা ভেতরে বসে বসে দেখছে ঠিক, কিন্তু কাছে আসছে না। আমার মাসতুতো দিদির মেজো শালার নাকি আবার পজিটিভ ধরা পড়েছে। ছোকরা কি সেইজন্যই কাছে আসতে চাইছে না ? আহা, শালা তো থাকে ব্যারাকপুর। আমার সঙ্গে লাস্ট কনট্যাক্ট হয়েছে সেই সিপিএমের জমানাতেই। ছোকরা দেখছি ভারী অসভ্য পাবলিক। কিছুতেই উঠে আসবে না। আমি তো এবারও বিধানসভায় বুক ঠুকে নোটাতে বোতাম টিপেছি। নিরপেক্ষতার একটা মূল্য চোকাতে হবে না!

সাধন করঞ্জাইয়ের হোসিয়ারীর দোকান। দেড়লাখ টাকার মাল তুলেছিল নতুন বছরের সময়। মহাজন রোজ শাসাচ্ছে এখন। আমার বাড়িওয়ালাই নাকি ওরও  মহাজন শুনেছি। সে হলেই বা, মাসে সতেরো হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিয়ে রয়েছি। বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটটা হয়ে গেলেই... সাধনকে তুলে দেবে বলে শাসিয়েছে শ্যামল। আমার বাড়িওয়ালার নাম শ্যামল। সাধন চা খাচ্ছিল রাস্তার পাশের  দোকানটায়। ভাঁড়টা ফেলে দিয়ে একটা ন্যাকড়াতে হাত মুছল ভালো করে। পকেট থেকে একটা স্যানিটাইজার বের করল। হাতটা রগড়ে নিল আবার। নতুন দুফোঁটা স্যানিটাইজারের ম্যাজিক! এগিয়ে এসে আমার ব্যাগটাকে ফাঁক করে ধরল, “নিন ঢোকান!” একগাল হেসে বলল, “ভয় নেই স্যর, হাত আমার পরিষ্কার”।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন