কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

দেবযানী বসু

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯০


ঝুঁকি নিয়ে বলছি

 

ঐন্দ্রিলাদের কাছে পুজোটা স্রেফ আনন্দের ব্যাপার। বিজয়া দশমীর দিনে সিঁদুরমাখা মুখগুলো হয়ে যায় লালমুখো বিদেশিদের মতো। আর মাটির দেবদেবীর ঠোঁটে ধ্যাবড়া করে মিষ্টি লেপ্টে দেওয়া দারুণ মজার খেলা। গতবার  ফ্ল্যাটের মহিলারা পুরুষদেরও সিঁদুরে রাঙিয়ে দিয়েছিল। ঐন্দ্রিলা ওর খুড়তুতো বোন বর্ণিতাদের ফ্ল্যাটে যায়, কিন্তু পারতপক্ষে ওদের বাথরুমে যায় না। ওদের  বাড়িতে আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধব যারাই যায়, তাদেরও একমত। ঐ বাথরুম ব্যবহার  করা যায় না। ক্রমশ কোনো গেট-টুগেদারে ঐন্দ্রিলাদের আড়ালে এই নিয়ে  হাসাহাসিও হয়ে গেল।

ঐন্দ্রিলার দাদা মিষ্টুন বেশ ঘুরে ঘুরে বেড়ায় সম্ভ্রান্ত মানুষদের বাড়িতে কাজের সূত্রে। থ্রি ফাইভ সেভেন স্টার হোটেলের বাথরুমকেও হার মানায় এক একজন মানিওয়ালা লোকের বাড়ি। পুরোপুরি স্বর্গের বাথরুম। স্বর্গেলোকে অত ভালো ভালো জিনিস খায় আর পটি করে না কি? তাদের বাড়িতে কাজের লোক, পোষা  কুকুর, গৃহকর্ত্রীর সব আলাদা আলাদা এমন কী শিশুদের ব্যবহারযোগ্য  বাথরুমও আছে। ছাদের ওপরে হাঁটাপথ আছে আবার সেখানেও বাথরুম আছে। মিষ্টুন দেখেছে বাথরুমে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি টাঙানো আছে। আন্তঃগৃহ গাছপালার টব বসানো আছে। একজনদের বাথরুমে এত রকমের নল আর যন্ত্রপাতি যে পুরো বাথরুমটা অক্টোপাসের মতো দেখতে লাগে। নিউজপেপার রাখার জায়গা আছে, তোয়ালে তো কোন ছার! সেইসব মারবেলের মেঝেতে শুয়ে  ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে।

বর্ণিতাদের ব্যাপারটা ঠিক কী বোঝা যায় না। কাকু সরকারি চাকরি করেন ভালো মাইনের। তিন সদস্যের পরিবার। খুবই অতিথিবৎসল। কাকিমা তো লোক খাওয়াতে ওস্তাদ। ওদিকে বাথরুমের কমোডে  এত চিত্র বিচিত্রময় ময়লা যে মাছি পর্যন্ত বসতে ভয় পায়। ঐন্দ্রিলা আর মিষ্টুন অনেকবার ভেবেছে জমাদার হাতের কাছে থাকতেও এরকম দুরবস্থা কেন! আসলে ছোটবেলায় এসব নজরে পড়ে নি। বর্ণিতা ওভাবেই অভ্যস্ত, বড় হয়েছে। কেউ সাহস করে বর্ণিতাদের  বলতে পারেনি। মিষ্টুন কতবার ভেবেছে অনলাইন অর্ডার করে লোক পাঠিয়ে দেবে পরিষ্কার করার জন্য। তারপর কী হাঙ্গামা হবে ভেবে চুপ করে গেছে।  কারণ কাকিমা কেমন যেন রূঢ়ভাষিণী, অন্যান্য অনেক ভালো গুণের সঙ্গে যা  কাটাকাটি হয়ে যায়।

এবার দুর্গাপুজোর আগে বর্ণিতার বাবা মিষ্টুনকে বরাবরের মতো প্যান্ট ও শার্টপিস দিয়েছে। ঐন্দ্রিলা দাদার টেবিলে প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিতে মিষ্টুন লাফ দিয়ে উঠল। তারপর কাউকে কিছু না বলেই সোজা বর্ণিতাদের ফ্ল্যাটে ছুটল। কাকু দরজা খুলতেই প্যাকেটটা কাকুর হাতে ধরিয়ে বলল, এই গিফ্ট আমি নেব না  যতক্ষণ না তুমি তোমার বাথরুম পরিষ্কার করাবে। তোমাকে টাকা দিয়ে অপমান করতে চাই না। কাকু ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ থাকার ভঙ্গি করলেন। বললেন যা তা শুনে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। মিষ্টুন বেরিয়ে আসার আগে বলল, এতদিন চেপে রেখে ভালো করো নি কাকু। আমি চিকিৎসা করাব, কাকিমার সমস্ত রকম ঝুঁকি নিয়ে বলছি।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন