কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫ |
প্রশ্নোত্তরমালা
ফটিক উঠে বসল একটু মাথা ভার নিয়ে। সামনে বার্লির সরবৎ। ছোড়দি বার্লি খেতে খুব ভালোবাসে। একদমে কতটা খেয়ে ফেলে। ছোড়দির ফ্রক লাল হয়ে ওঠার দিনগুলো ফটিক বুঝতে পারে মুখের দিকে তাকিয়ে। ছোড়দি একটু খিটখিটে রাগী হয়ে থাকে। ফটিক সাবধানে থাকে আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা একা দাবা খেলে প্রতিপক্ষ সাজিয়ে নিজেকে। ফটিকের সঙ্গে ছোড়দির দশ বছর বয়সের পার্থক্য। আসলে জ্যেঠতুত দিদি। ফটিক বছর কয়েক আগে একবার বলে ফেলেছিল ছোড়দির কাছে অংক শিখতে শিখতে, বিয়ে আমি তোকেই করব। সেদিন শুনল জ্যেঠি ছোড়দিকে খুব বকছে। বকাবকির বিষয়বস্তু কী, তার সে বুঝতে পারে নি।
ফটিক ছোড়দির একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে এতদিনে পরিবারে ও বৃহত্তর আত্মীয়গোষ্ঠীতে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ফটিকের চোখে পড়ে যাচ্ছে দুরূহতম বইয়ের দুরূহতম ভাঁজে রাখা ছোড়দিকে লেখা কিছু চিঠি। কুরুক্ষেত্র ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসে চিঠিগুলো। আর্মিতে আছেন মনীশ দত্ত। পাঞ্জাবী। জ্যেঠির কি এখানেই আপত্তি?
বর্ণনায় রয়েছে ফটিকদের রেলকলোনির মাটির টিলা, পিচের গলি, শাপলা শালুকের লেক আর মৃদু তরঙ্গে ভাসা রাজহাঁসের দল। আরেকটা চিঠিতে আছে মেতে মেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদের মত্ততায় ওদের স্পন্দন। চিঠির ভাষা ইংরেজি। কিন্তু কাউকেই জানানো যাবে না পাহাড়টিলার ধারে মনীশের সঙ্গে বসে মিস শান্তশ্রীর বাদাম খাওয়ার কথা। সে শুধু নীরব সাক্ষী থাকবে। ছোড়দির দেওয়া গিফ্ট পাওয়ায় সে ছেদ টানতে চায় নি।
এই ছোড়দি একদিন মুখে হাত চাপা দিয়ে চুল এলো করে বিছানায় উপুড় শুয়ে কাঁদছিল সশব্দে। ব্যারাকপুর থেকে ক্যাডেট করা কল্যাণীদিদি এসেছিল, ছোড়দির বন্ধু। পুকুরপাড়ে গোলাপঝাড়ের পাশে ওরা গল্প করছিল। ছোড়দি কি একটা উত্তেজনায় হঠাৎ গুঙিয়ে উঠে কাঁটাসুদ্ধ গোলাপগাছ চেপে ধরেছিল। অনেক কাঁটা ফুটে রক্ত গড়িয়ে পড়েছিল হাত বেয়ে। ফটিক এ দৃশ্য দেখে চেঁচিয়ে উঠেছিল আর বাড়িতে হৈচৈ বেঁধে গেছিল। ফটিক ভয়ে ঘরে একলা বসেছিল। সন্ধ্যা হলে ছোড়দির ঘরে ঢুকেছিল অপরাধীর মতো। ছোড়দির হাতে কাকু ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিল। ছোড়দি ফটিককে দেখামাত্র ফোলা চোখে কাছে ডাকল। 'এই নে' বলে একটা ছবি হাতে দিয়ে বলল -- আর যা বলল তাতে ফটিক ছোড়দিকে জড়িয়ে ধরল। সাক্ষী ধরা পড়ে গেল হয়ত। আর অনন্ত প্রশ্ন ও উত্তর নীরবে ঘরের দেওয়ালে মাথা কুটে মরতে লাগল। গোলাপ কাঁটা বিঁধে দেওয়ালেরও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল কি?
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন