কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

অভিজিৎ মিত্র




কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫



ছাতারে


আমরা ড্রেন খুঁটে খাই। একসাথে থাকি। এক গামছায় সকালে চান হাগা করে দড়িতে টাঙানো যে কোন একটা জাঙ্গিয়া পড়ে কাজ খুঁজতে বেরোই। আমরা সাতভাই। আমাদের একঠোঁটে বিড়ি অন্যঠোঁটে খেউড়। কাজ না পেলে ছিনিয়ে নিই। ওয়াগন থেকে পূজোর চাঁদা। লোকেরা মনে মনে শুয়োরের বাচ্চা বলে গাল দেয়। সরকার সেটা চেঁচিয়ে বলে। আমরা সরকারের কথা শুনি না। বিজ্ঞান মানি না। নিজেদের মত খিল্লি করি। ডাক্তার পেটাই শিক্ষক খুন করি রাত হলে চুল্লু খাই। পুলিশ আমাদের একভাইকে মাঝে মাঝে মেরে ফেলে। আমাদের যায় আসে না। একশ তিরিশ কোটির দেশে আমরা সাতভাই থেকেই যাই। আমরা বুঝি না রোজ আমাদের রোগ হয়, সারে না।

আসলে কেউ কখনো বলে নি আমাদের সাতভাই-এর দরকার একজন বোনশর্তবিহীনঠিক মায়ের মত। যে আমাদের ইনসোমনিয়া, হাইপারটেনশন, ব্লাডসুগার, মায়োপিয়া, থাইরয়েড, কোলেস্টেরল, মাইগ্রেন, সাইনাস, স্লিপ-ডিস্ক, ফ্যাটি লিভার, গাউট, আর্থ্রাইটিস, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া -- সব শুষে নেবে। আমরা তাকে কুঁড়ির মত আগলে রাখব। সে বড় হবে। আমরা সবাই তাকে আদর করব, সন্মান করব। আমরা একটা সমাজ তৈরি করব যেখানে সব ঘরে একজন বোন থাকবে, সবাই তাকে সন্মান করবে, তার জন্য সাইনবোর্ড টাঙাবে। আমাদের কেউ এভাবে দেখতে শেখায় নি।

আমরা সাতভাই হাতে রাখি নিয়ে ঘুরতে বেরোই। ‘তুমি আমাদের বোন হবে?’ রাস্তায় যাকে দেখি। সে একটাই প্রশ্ন করে, ‘তোমরা কি রেপ করো? শরীরে বা মনে?’ আমরা ওর বাপ-মা তুলে খিস্তি মারতে শুরু করি। ও অথবা ওরা পালিয়ে যায়।

আমরা ড্রেনের ধারে ফিরে আসি। দেয়াল ভিজিয়ে হিসি করে চু-চু-চু-চু খেলতে বসি। একচিলতে গাদাগাদি ঘরে আমাদের ক্ষিদে পায় না, তেষ্টা পায়। তোমরা আমাদের আলাদা করার জন্য আড়াআড়ি পাঁচিল তোল। আমরা এপাড় থেকে কথা বলি। না বুঝলে পাঁচিল ভেঙে দিই। একসঙ্গে খিস্তি মারি চাকু মারি। তোমরা আমাদের কপালে ছাতারে লিখে দাও। আমরাও হেসেখেলে ছাতারে হয়ে উঠি।
আমাদের ছাতারে ইনফেকশন ছড়াচ্ছে। বোন চাই। সিস্টার। যত্নশীল দুটো হাত। তোমরা জান। আমরা জানি না। আমাদের তোমরা জানাও নি। শেখাও নি। শুধু শিখিয়েছ কীভাবে বোকাবাক্সে বোতাম টিপতে হয়। নাম মিলিয়ে। চিহ্ন মিলিয়ে।  তোমরা অভ্যেস বদলাও নি, আমরাও বদলাই নি। আমরা কোনদিন তোমাদের ঐ মোক্ষম প্রশ্নটা করিনি। ‘তোমরা কি রেপ করো? শরীরে বা মনে?’ তুমি জানো, তোমরা কর। আমাদের চুল্লু দিয়েছ, রোগ দিয়েছ, লাল চোখ দিয়েছ, তলোয়ার দিয়েছ। লজ্জা আর অনুতাপ দাও নি।

- ছাতারে, দুধ খা।
- দুধ? এ তো ধেনো রে!
- ওটাই তোর দুধ।
- জল দে। ভাঁড় দে। মেশাব।
- শালা ড্রেনের জল মেশা। হাতে ঢাল। চুমুক মার।

আমরা সাতভাই চুমুক মারতে শুরু করিচোখ লাল। কান্ট্রি থেকে স্টেট চেঞ্জ হচ্ছে। কোথায় আটকাবে আমাদের? কিভাবে? রাতের অন্ধকারে আমরা বোন খুঁজতে বেরোব। ছিনিয়ে নিতে। তোমরা সংখ্যা গোণ।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন