কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

সোনালি বেগম



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫


বিবর্তন

একটা কুয়াশাঢাকা জীবন্ত বিকেল উপহার দেবে বলে অনেকক্ষণ বসে আছে নিশা। অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছে সে স্বামীর হাত ধরে। আলোয় একা হাঁটতে ভয় পায়। মাঝে মাঝে হাত ফসকে যায়। চারধারে নানান গুজব ওঠে। তার স্বামী অলোকেশ একটি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি করে। বয়সের বাছবিচারহীন বান্ধবী সংখ্যায় এই ষাট বছর বয়সেও বেশ তারুণ্য অনুভব করে অলোকেশ। বউএর বয়স্ক চেহারার দিকে তাকিয়ে কোনো আকর্ষণ বোধ করে না আজকাল। যদিও এটা অনেক পুরনো রোগ তার।

আজ ম্যাকডোনাল্ডে বার্গার, কালকে এফ.সি.-র চিকেনফ্রাই, তো পরশু ডোমিনোপিৎজা। কোয়ালিটি ওয়ালস আইসক্রিম হাতে চার-পাঁচ বান্ধবীদের নিয়ে হাসতা-খেলতা জিন্দেগি অলোকেশের।

‘ঘরের বউ সে তো রাঁধুনি, কাজের লোক। চুপ থাক্, একদম বাজে কথা বকবি না। খেতে পরতে পাচ্ছিস, এই যথেষ্ট। না হলে, বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবো। সেখানে তোকে কে পুছবে না। বিনা পণে বিয়ে – আমার ঘাড়ে সারাজীবনের জোয়াল পরিয়ে দিয়েছে। চালাক লোক সব।’ অলোকেশ রাগে বিড়বিড় করতে থাকে।

নিশার চুপজীবনের চুপকথা গুঁড়িয়ে গড়িয়ে জলীয়বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশতে থাকে।

মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে ‘কাম’ একটা মুখ্য ভূমিকা বরাবর অবলম্বন করেছে। বিবাহিত পুরুষের নানান সুবিধে, আবার টাকার অভাব না থাকলে তো, সোনায় সোহাগা।

নিশার দাম্পত্যজীবনে আছে লাঠি, লাথি, ঝাঁটা, বালতি, স্ক্রাবার, ভিমলিকুইড। কবে যে মেনোপজ হয়ে গেল, সে গুরুত্বই দিল না। বন্ধুবান্ধবের বাড়ি, পার্টি...  এইসব করেও বেশ হাঁফ ধরে আজকাল।

আজ এই শীতের বিকেলে চারটে বান্ধবী নিয়ে অলোকেশ বাড়ি ফিরে আসে। তাদের চা-জলখাবারের ব্যবস্থা করে, নির্দেশ মত নিশা পাশের ঘরে চলে যায়। একের পর এক ক্যামেরার শট, হৈ-হুল্লোড় কানে আসতে থাকে। এমন সময় নিশা কাঁপতে থাকে, সারা শরীরে তার শীতল স্পর্শ, নাকি সাপের শীতল শরীর ধীরে ধীরে জড়িয়ে যেতে থাকে তার শরীরে!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন