কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

শ্রাবণী দাশগুপ্ত




ধারাবাহিক উপন্যাস

লাল-নীল-পেন্সিল 


 

(৫)  

রান্নাঘরের দেওয়াল ভেঙে ওপেন কিচেনমতো করা। একদিকে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে রাখা ডাইনিং টেবিল আর চেয়ার চারটে আরেকদিকে টিভি দেওয়ালে আটকানো, ডিভান, টু-সীটার মামুলি সোফা, যেমন-তেমন করে কফি টেবিল ঠাসাঠাসি। সরু একফালি জানালা গলে আলো কম আসেএমনিতে পাড়াতে ফর্মালিটি করার এসোজন-বসোজন নেই। এক এলে কৌশিকের সঙ্গে ব্যবসাপত্তরের দরকারে, তা না হলে আঞ্চলিক মুরুব্বি কদাচিৎ কোনো কাজে এলে

পড়শিরা পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গল্প করে বেশিবাড়িতে এলে ভেতরের ঘরে, চা-চপ-মুড়িমাখা নিয়ে খাটে বসে আড্ডাদেবিকা ছোট থেকে পাড়া-বেড়ানি ছিল, এখনো তাই।
কৌশিক আগে চলে এসেছে দোকান থেকে, এরকম প্রায়ই আসেবেঞ্চের মতো ডিভানটাতে কাত হয়ে টিভি চালিয়ে খবর শুনছিলবিপ্লব সাড়ে ন’টায় দোকান বন্ধ করে বাড়িতে চাবি দিয়ে যাবে। দোকানে ভুটান নামে একটু ন্যালাখ্যাপা একটি ছেলেও কাজ করে।

চায়ের খালি কাপ তুলে নিতে এসে দেবিকা ঝাঁঝিয়ে বলে,
-আবারও চা খাবে?
-হ্যাঁ দাও।
-এই গরমের মধ্যে বারবার চা খাও কী করে, বুঝি না। ফ্লাক্সে রেখে দেব। দাঁড়াও, পরে করছিবকুল রান্নাঘরে, তরকারি রাঁধছে।
-ফ্লাস্কের চা জঘন্য। কিসের তরকারি?
-আলু-পটল। নারকেল কুরিয়ে দিতে বলেছি। ওই তো রান্নার ছিরি!
-নিজে রাঁধলেই পারো! মাম্পি ফিরেছে?
-ফিরল তুমি আসার একটু আগে, সাতটা-চল্লিশ নাগাদ।
-কোথায় গেছিল জিজ্ঞেস করলে?
-দূর্‌--! জবাব দেয় নাকি? যেন ফিরে উদ্ধার করেছে।
-না ফিরলে ভালো হত?
-সেকথা বলি নি। তোমাদের খালি টেরাবেঁকা কথা! বলতে গেলাম, দুপুরে কখন বেরোলি? চা খাবি না শরবৎ? বলল, এখন যাও। মাথা ধরেছে, লাইট জ্বেলো না।
-শুয়ে আছে?
-তা নয়ত কি? আমি দরজা টেনে চলে এসেছি। যাও কী হল – দ্যাখ গে। মান ভাঙাও।
-হুঁউ... মেয়েটার সঙ্গে এরকম কর... !

খাওয়ার টেবিলে বসে যত্ন করে আটা মাখছেন গায়ত্রীশান্ত, সহিষ্ণু, ছোট্ট পাতলা চেহারা। ফর্সা ফুটফুটে হাতের পাতা দিয়ে চেপে চেপে আটা ডলছেন। মেয়ে-জামাইয়ের বাদানুবাদ টুকটাক কানে আসছে। এবাড়িতে তিনি বাদে সকলে রাতে রুটি খায়। আগে তিনিও খেতেন। আজকাল আটা-ময়দাতে বদহজম হচ্ছেসকালের ভাতে জল ঢেলে প্রসূতিভাত রাখেন, সঙ্গে যাহোক হলে চলে। পয়সার খাঁই থাকলেও বকুল রান্নাটা ভালো করে, সকালে-সন্ধ্যেয় দু’বার করে আসে। দেবিকা এসব নিয়ে গজগজ করে। বছর তিন আগে পর্যন্ত দুপুরের রান্না নিজে করতেন। আর ধকল নিতে পারছেন না। কর্মশক্তি ক্রমশঃ কমছে বুঝতে পারেন।

দেবিকাদের কথার মধ্যে তিনি ঢোকেন না কোনোদিন। পারতপক্ষে দেবিকাকে কিছু বলেন নাচিরকেলে অবুঝ, একগুঁয়ে, গভীরতাহীন মেয়েচেঁচামিচি ঝগড়াও কম করে না। যখন যেমন ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছে। তাল সামলাতে না পারলে বাড়িতে তুমুল অশান্তি করেছে। গায়ত্রী নিঃশ্বাস লুকিয়ে ফেলেন। আটার তাল গুছিয়ে নিয়ে চেয়ার ছাড়েন। পাশে সামান্য আটার গুঁড়ি পড়েছে। মুছে ফেলতে হবে। কোনোরকম অপরিচ্ছন্নতা তাঁকে পীড়া দেয়।

(ক্রমশ)












0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন