কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

সেকেন্দার আলি সেখ



কবিতার কালিমাটি ১০১



মোহনার খোঁজে

এখন আকাশ মাথার উপরে মেলে দিয়েছে 
একরাশ মিষ্টি ঠোঁটের রঙl
টুপটুপ করে ফিসফিস ভাষায় 
রঙগুলো ঝরছে ভিক্টোরিয়ার 
ঝোপ-ঝাড়ে, বাহারি ছাতার আড়ালেl 
সবুজ ঘাস যৌবনের প্রতীক হয়ে ছবি আঁকেl 
সেই ছবিতে পথচলতি মানুষ মৃদু হাসে, 
কেউ বা সব কাজ ফেলে
দেবদারুর আড়ালে সেঁটে গিয়ে দেখে নেয় 
বিনা টিকিটের বিচিত্র সিনেমা... 
চায়ের জল ভিক্টোরিয়ার মাঠে রোজ গরম হয়l 
সন্ধ্যা থেকে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকেল
তারপর সন্ধ্যার মুখে দুটো পায়রা একমনে 
সান্ধ্যবাসরের আড়ালে আপন মনে চা খায়l 
কেউ বা চায়ের কাপে ঠোঁট লাগায়,
কেউ গরম চায়ে ঠোঁট পুড়িয়ে বাড়ি ফেরেl
কান্ড দেখে হাসেন শিক্ষাবিদ থর্নডাইক সাহেব :
কী মজা! এরাও  ভুল করতে করতে শিখছে!
প্রচেষ্টা ও ভুলের পদ্ধতি ভিক্টোরিয়ার মাঠে? 
মাথার চুল টেনে সাহেব বলেন: শ্রেণী শিক্ষণে 
ভিক্টোরিয়ার সবুজ মাঠ 
ঢুকে যাবে যৌবনাগমে ভাবতে পারিনি!  

এত যৌবনের মাঝে ভিক্টোরিয়ার পরী 
লজ্জা পায় না, সে তো নীলছবি দেখছে...       
কত রকমের পোজ
বসে-শুয়ে-হেলান দিয়ে নরম নরম স্পর্শ !  
দূরে দেখা যাচ্ছে একটা বয়স্ক গাছকে জড়িয়ে 
একেবারে দু'হাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে 
লেহন করছে এক নবীনা বুনোলতাl

পরীটা দু'টো ডানা বাতাসে বিলিয়ে দিয়ে 
হারিয়ে যায় সবুজ যৌবনা ঘাসেl 
গাঙচিলের ডানার মতো বিকেলের চোখে 
নেমে আসে সুখl 
সেই সুরে স্নান সারে জ্যোৎস্নার হাসি
যৌবনা সন্ধ্যায় রঙ ঝরছে তো  ঝরছে।
মাঠের সঙ্গে তাল মিলিয়ে 
কলকাতার রাস্তায় জ্বলে উঠছে নিয়ন বাতি।  
কচি কচি পাতারা যুদ্ধের বাজনা তুলেছে 
মিলনমেলায়, কুমারী মুখ রাঙা হয়ে 
উঠেছে অভিমানে।  
সব পাগলেরা কোরাস গেয়ে ওঠে সবুজ মাঠে l 


কোকো পাহাড়ে বারুদের গন্ধ    


কোকো পাহাড়ের একশো ত্রিশ কোটি মানুষ 
ছাই গাদার উপর বসে শুকছে বারুদের গন্ধ।
অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, 
অনেকে ভাইরাসের কাছে 
বাধ্য হয়েছে হার মানতে।
দেশটা ধুঁকছে। মানুষজন দেখেনি বহুদিন 
চিমনির ধোঁয়া, শোনেনি ট্রেনের হুইসেল।

পায়ের তলায় কাঁপছে মাটি
মাথার উপরে দুরন্ত বাজপাখির ছোঁ
একদল শকুন কোকো পাহাড়কে শ্মশান ভেবে 
চক্কর মারছে তো মারছে l

বিষাক্ত অর্কিডে দানবের পদচিহ্ন  
অমাবস্যার তিথি পাঁচটা বছর জুড়ে 
চুপি চুপি তাই মাথাচাড়া দেয় ধুলোর ঝড়
গুমোট বাতাসে চাপাকান্নার আদ্রতা 
শিয়রের পাশে ধূলিমলিন সভ্যতা ছিঁড়ে।  

কোকো পাহাড় ইতিহাসের পাতায় কেঁদে ওঠে
কান্নার আকুতিতে রক্তবীজ ছড়িয়ে পড়ে 
প্রাচীন ঐতিহ্যে - দেশের কোণায় কোণায়  
সারা দেশে তিরতির করে বয়ে যায় বিষের নদী!


সমুদ্র স্নান        

আকাশে মেঘ ডাকলে কেঁদে উঠত 
তার হরিণী হৃদয়
তবুও নাবালিকাটি মিষ্টি গন্ধের মতো 
বিলি হয়ে গেল জানোয়ারদের স্বয়ম্বর সভায়।  
বিলি হল কলাপাতায়, শালপাতায় 
পদ্মপাতায় প্রসাদের মতো।  
একদল পৃথিবীর মানুষ চেটেপুটে খায় 
সব কচি মাংসের ঘ্রাণ 
আর নতুন জোয়ারের একটা স্বপ্ন।  

আঁধার ছিঁড়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে মেদিনী 
মেয়েটি সমুদ্রে স্নান সারে।
প্রতিদিনই নোনাজলে অবগাহনের সব আনন্দে 
ফেলে রেখে আসা সব ব্যথা একাকার হয়ে যায়।
আদিম চাহিদা আর জঠরের জ্বালা 
কখনো কাঁদায় হাসায় কখনো।  

সমুদ্রে স্নান সেরেছে বাধ্য নাবালিকা  
শিশিরে পা ফেলতে তার ভয় নেই, ফলে শক্ত মাটি 
খুঁজে খুঁজে মাথা কুটে মরে সূর্যাস্তের আলো।
মৃতপ্রায় পাখিটি একদিন ঝর্ণা হয়ে 
ভেসে যায় কোনও এক অন্ধকার বন্দরের খুপরিতে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন