কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়



কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫



চ্যাম্পিয়ন!

আজকাল হুমকি দেওয়াটাও কত সহজ হয়ে গেছে। ফেসবুকের কমেন্টবক্সে, সকলের সামনে – ওপেনলী, একেকটা হুমকি-পোষ্ট। একেকটা ছবি। একেকটা নোংরা ইঙ্গিত। খুব সহজ। আজকাল ভয় করে না ও’সবে। ভয় করতে নেই। সময় পাল্টাচ্ছে রোজ। অন্ধকারের চেয়েও গাঢ় অন্ধকার।

রাজনীতির কথা বলতে ইচ্ছে করে না। চাণক্যের রাজনীতি আজ চৌর্যবৃত্তিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব লিখতে লিখতেও সুশোভনের হাত কাঁপে। সাংবাদিকতার চাকরিতে আজকাল নিরাপত্তা কমেছে। কেবল মালিক নয়, সরকারকেও তোয়াজ করে চলতে হয়। লোকাল কাউন্সিলরের রাম-শ্যাম-যদু-মধু’র দল ঘুরঘুরিয়ে নজর রাখছে ঠিক।

সুশোভন ভালোবাসে সুদেষ্ণাকে। গল্প-উপন্যাসের প্রেম। সেই আদম-ইভের সময় থেকে চলে আসছে। নগ্ন, অবিচল একটা ভালোবাসা। এসব গল্প-উপন্যাসের পাতাতেই বরং সীমাবদ্ধ থাকুক। সুশোভন-সুদেষ্ণার প্রেমটা রাজনৈতিক। ওরা একই দলের সদস্য। কাগজে অবশ্য সুশোভনের লেখাতে বোঝা যায় না সে’সব। সুদেষ্ণা পার্টির ইনফর্ম্যারের কাজ করে। তবুও, সুশোভনকে সুদেষ্ণা ভালোবাসে বোধহয়।

একেকটা উত্তাল সময়। পেট্রল বোমাতে অন্ধকার আকাশ, দম আটকে আসছে। সুশোভন তবুও লিখলো, বোমা পড়েনি। কাগজেও খবরটা বেরুলো না। পার্টি বললো, চাকরিটা ছেড়ে দাও। সুশোভন চাকরি ছাড়তে পারবে না। ওদের বাড়িতে ওর সামান্য উপার্জনেই চারজনের সংসার।

গুলিয়ে যাচ্ছে সব। ফেসবুকের দেওয়ালে একটা সাধারণ দুর্ভিক্ষের ছবি পোষ্ট করেছিলো সুশোভন। নাকি নারী-দিবস সম্পর্কিত কোনও খবর। সম্পাদক ডেকে বললেন, কাজটা ভালো করোনি সুশোভন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে রাজনীতিটা না করলেই পারতে। সুশোভনের মাথায় ঢোকে না। সাধারণ একটা নারী-স্বাধীনতার বক্তব্য। অথবা কোনও সুদূর আফ্রিকার মরুভূমিতে পড়ে থাকা কতগুলো দুর্ভিক্ষপীড়িত শবদেহের রঙ-জ্বলে যাওয়া পুরনো ছাপ। দেশ ভালো আছে। পজিটিভ কিছু লেখো। সম্পাদক উপদেশ দিলেন।

বোমা পড়েনি। তাই লিখেছিলো সুশোভন। পার্টির মাথারা পছন্দ করলো না। সুদেষ্ণার আসা যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। লেকের অন্ধকারে সুশোভন এখন, একা একাই বসে থাকে। পাশের ফাঁকা জায়গাটার দিকে হাত চলে যায়। সুশোভন মারা গেছে।

পার্টির লোক সবটাই দেখেছিলো। কাগজের সম্পাদক, প্রুফরীডার, কম্পোজার – সবাই। সবাই জানতো যে, সুশোভন মরে গেছে। কাগজে নতুন লোক নেওয়া হলো। কর্মসংস্থান। সুশোভনের লাইফ ইন্সিওরেন্সের টাকায়, কিছুটা সুরাহা হলো। সুদেষ্ণা পার্টির কল্যাণে চাকরিতে ঢুকেছে। ও-ও এখন দোটানাতে ভুগছে খুব। পক্ষে লিখবে, নাকি বিপক্ষে? সত্যি-মিথ্যের খবরে কিছু এসে যায় না আর।

নাইন্টিন এইট্টি ফোর। বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ। সুশোভন সাইন আউট করে। আমি সুদেষ্ণাকে জড়িয়ে ধরে ভালোবেসে ছিলাম।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন