কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৯ |
প্যারাডাইস রেস্তোরাঁ
পাড়ার প্যারাডাইস রেস্তোরাঁ সন্ধ্যে হলেই জমজমাট। অফিস ফেরত অনেকেই চা সিঙারা ধুমপানে কিছুটা সময় কাটিয়ে যায়। ছোটখাটো আড্ডাও বসে। তবে সন্ধ্যে গড়ালেই কিছুটা ফাঁকা হয়ে যায়। আসলে এই সময় জড়ো হয় পাশের বস্তির কিছু উঠতি মাস্তান। সারাদিন মাস্তানির পরে আসে সামান্য জিরোতে। তাদের সঙ্গিনীরা কখনও সখনও। এই সময় কিছুটা গোপনীয়তা বজায় রেখে চায়ের পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় দেশীমদ। বিরসা দেশী একেবারেই পছন্দ করে না। কয়েকবার চুমুক মেরেছিল, কিন্তু গিলতে পারেনি। দুর্গন্ধ সইতে না পেরে বমি করে ফেলেছিল। দোস্তরা বলেছিল, বিরসা এই লাইনে দেশী খেতে না পারলে তোর ভবিষ্যৎ বিলকুল অন্ধকার। চুরি ছিনতাই গুন্ডাগর্দী পেটে দেশী না পড়লে সাকসেসফুল হতে পারবি না! বিরসার বান্ধবী রীণাও একই কথা বলে। তোর দেশীমদে এলার্জি, এটা তো ঠিক নয়! তোর বাবা প্রায় রাতেই ভরপেট দেশী গিলে বাড়িতে ঢুকে গালাগালি করে, তোর মাকে প্যাঁদায়। তোর তো অভ্যেস হয়ে গেছে এসবে। তাহলে! ব্যাপারটা বোঝে বিরসা, কিন্তু রীণাকে বোঝাতে পারে না। দেশী তার সত্যিই সহ্য হয় না, অথচ বিদেশী গিলতে গেলে পকেটে রেস্ত থাকা দরকার। সারাদিন চুরি ছিনতাই আর গুন্ডামি করে তার যে উপার্জন হয়, তাতে বিদেশী হয় না। আসলে, সে এখনও মাস্তানিতে ততটা দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি, সোলো ব্যাপারটা আয়ত্বেই আসেনি, কোরাসে যতটকু যা জোটে!
সেদিন রাত সাড়ে-নটার পরে বিরসা এলো প্যারাডাইস রেস্তোরাঁয়। রীণা আসতে বলেছিল। তার নাকি কিছু প্রাইভেট কথা আছে। একটু পরে রীণাও পৌঁছল। আজ রেস্তোরাঁ খালি খালি ছিল। একটা কেবিনে কেউ না থাকায় সেখানেই বসল পর্দা টেনে। রীণা বলল, তুই তো আবার মাল খাবি না, তাহলে দু’কাপ চা দিতে বলি! বিরসা অবাক হলো। বলল, তুই আমাকে চা খাওয়াবি?
-কেন! খাওয়াতে পারি না?
-তা পারিস।
বিরসা এই রেস্তরাঁয় খুব কমই আসে। রীণা আরও কম। তবে এলে বিরসা না খেলেও রীণা দেশী খায়। তাতে বিরসার কিছু আপত্তি করার নেই, কেননা রীণা নিজের টাকায় খায়। কিন্তু আজ তাদের দুজনের জন্য দু’কাপ চায়ের অর্ডার দিল রীণা, আগে কখনও যা হয়নি, বিরসা অবাক হলো, ব্যাপারটা কী!
রীণা ইতঃস্তত করে বলল, একটা কথা
তোকে বলতে চাই, কথাটা আরও আগে বলার ছিল।
বিরসা তাকিয়ে থাকে রীণার মুখের
দিকে। কী বলতে চায় রীণা!
-দেখ বিরসা, যদিও আমরা থাকি এমন
একটা বস্তিতে, যেখানে প্রায় সব ছেলেরাই গুন্ডা বদমাশ। চুরি ছিনতাই ডাকাতি আর মার্ডার
করা পেশা। অন্যদিকে অনেক মেয়েই বেশ্যাগিরি করে। আমার মনে হয়, তোর এই বস্তিতে থাকা ঠিক
নয়।
-কেন ঠিক নয়? আমিও তো চুরি-ছিনতাই
করি!
-তোকে এখানে মানায় না। তুই কোনো
ভদ্রপাড়ায় চলে যা বিরসা।
-মানে? সেখানে আমাকে কে থাকতে দেবে?
খাব কি?
রীণা হাসল। করুণ হাসি।
-সে দায়িত্ব আমার। নিজের শরীর বেচে
যেটুকু উপার্জন করি, তাতে আমাদের দুজনের দিন চলে যাবে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন