কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৯


জ্বর

-এই, কী হয়েছে ওর?

-ডাক্তারবাবু, জ্বর।

-কৈ জ্বর?

মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে দেখল নিশান্ত। জ্বর তেমন নেই। ছোট্ট মেয়েটি বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিচ্ছে।

-আর?

-আর শ্বাসকষ্ট। দেখছেন না, কেমন করছে!

নিশান্ত মেয়েটির বুকে পিঠে স্টেথো বসিয়ে তেমন কিছুই পেল না। মেয়েটি তখনও হাঁপিয়ে চলেছে।

-টেনশন করছিস? বিয়ে কবে হয়েছে?

রাত তিনটের সময় উদয়গঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে জরুরিবিভাগ খাঁ খাঁ করে। সেখানে নিশান্ত আর ওই মেয়েটি ছাড়া আর দুজন। একজন বছর চল্লিশের মহিলা, সম্ভবত মেয়েটির মা। আর একটি ছোকরা ছেলে। মেয়েটির হাতে শাখাপলা দেখে নিশান্ত বলল,"বিয়ে করেছিস। কবে?" মেয়েটির শ্বাসকষ্ট নেমে আসে। সে মুখ নিচু করে থাকে। মেয়ের মা বলে-

-ডাক্তারবাবু, দেড়মাস হয়েছে বিয়ে।

-বয়স কত ওর?

মা বলে,"আজ্ঞে সতেরো স্যার।"

-আর বর? কে তুই?

ছোকরাটা মুচকি মুচকি হাসে। নিশান্ত দেখে ছেলেটার গোঁফের রেখা ফোটেনি ভালো করে।

-তোর কত বয়স?

ছেলেটি মুচকি হেসে বলে,"পনেরো স্যার।"

-এই বয়সেই বিয়ে করে ফেললি! সেই জন্যই তো এতো জ্বর, সর্দিকাশি।

মা লজ্জিত হয়ে বললে, "কী বলব স্যার। আজকালকার ছেলেমেয়েরা কারো কথা শোনে! পালিয়ে বিয়ে করেছিল। বললাম আমার কাছেই থাক তবে। ছেলের বাড়ি মেনে নেবে না।

-দুদিন পরে বিয়ে করলে হতো না?

ডাক্তারবাবুর দিকে কটমট করে তাকালো মেয়েটি। তারপর সটান উঠে দাঁড়াল। তার শ্বাসকষ্ট কমে গেছে। বিরক্ত হয়ে বলল, "হাসপাতালে এতো কথা কিসের? চলো মা। আমি ঠিক হয়ে গেছি। বাড়ি চলো।"

একা নিশান্ত ভোম্বল হয়ে বসে রইল টেবিলচেয়ারে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন