কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / সপ্তম সংখ্যা / ১৩৪

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পোলিশ কবি উইশলাওয়া স্কিম্বোর্স্কার কবিতা

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

পোলিশ কবি উইশলাওয়া স্কিম্বোর্স্কার কবিতা

(ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন: Joanna Trzeciak, Stanishlow Baranczak, Clare Cavanagh)

(বঙ্গানুবাদ করেছেন: সুপর্ণা বসু)

 


কবি পরিচিতিঃ উইশলাওয়া সিমবোর্স্কা(১৯২৩ - ২০১২) নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত পোলিশ কবি। তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি, নিবন্ধকার ও অনুবাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কবিতার জন‍্যে সাহিত‍্যে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর কবিতা একাধারে সহজ ও গভীর। বুদ্ধিদীপ্ত ও দার্শনিক প্রজ্ঞায় উদ্ভাসিত। তাঁর লেখা ব‍্যক্তিগত অনুভবের মধ‍্য দিয়ে বৃহত্তর সত‍্যের দিকে যায়। সংলাপধর্মীতা হয়ে ওঠে পাঠকের সঙ্গে সংযোগের সাঁকো। তাঁর লিখন শৈলী স্পষ্ট অথচ বহুস্তরীয়। তীক্ষ্ণ শ্লেষ কবিতাকে করে তোলে তরবারির মতই ধারালো। ১৯৫৭ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ‍্যে লিখিত তাঁর সব থেকে উজ্বল কবিতাগুলি সংকলিত হয়েছে Widok z  ziarnkiem piasku (View with a grain of sand) কাব‍্যগ্রন্থে। তাঁর কবিতায় বাস্তব নির্মাণের অনন‍্য ক্ষমতা লক্ষ‍্য করা যায়।

 

কোনো কিছুই দুবার হয় না

কোনোকিছুই দ্বিতীয়বার হয় না

হবেও না

সেই জন‍্যেই আমরা অনুশীলন ছাড়াই জন্মাই

আর মরেও যাই

যদি আমি দুনিয়ার সবচেয়ে নির্বোধ নিরেটও হই

তবুও শীত গ্রীষ্মের পূর্বপাঠের পুনরাবৃত্তি করি না

 

কোনো একটা দিন তার বিগত দিনের মত নয়

কোনো একটা রাত আরেকটা রাতের মত নয়

প্রতিটি চুম্বন একে অপরের থেকে ভিন্ন

প্রতিটি চুম্বন অনন‍্য

 

হয়ত কোনোদিন কেউ অসতর্কতায়

ভুল করে তোমার নামের মত একটি গোলাপ

সহসা ছুঁড়ে দিয়েছিল

ঘরময় ছড়িয়ে পড়েছিল তার রঙিন সুঘ্রাণ

 

তবু মুখোমুখি দেখা হলে পরে

বারবার ঘড়ি দেখি আর ভাবি

একটা গোলাপ? একটা গোলাপ!

সে কি ফুল? না পাথর?

 

আমাদের অনিত‍্য দিনগুলি

কেন যে অকারণ ভয় ও বেদনায় ভরে তুলি?

থেমে থাকবে না জানি

যা কিছু আজকের তা অতীত হবে কাল

 

ঠোঁটে হাসি ও চুম্বন নিয়ে

পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে

তারায় তারায় সন্ধি করব

যদিও আমরা একই জলের

দুইটি ফোঁটার মতই আলাদা।

 

প্রথম প্রেম

লোকে বলে

প্রথম প্রেম সবচেয়ে জরুরী

অপূর্ব প্রেমময়

তবে কিনা আমার জীবনে তেমনটি ঘটেনি

আমাদের মধ‍্যে কিছু একটা ছিল! আবার ছিলও না

আমাদের মধ‍্যে কিছু একটা ঘটেছিল

আবার শেষও হয়ে গিয়েছিল

 

আমার হাত কাঁপে না

যখন আমি ছোটো ছোটো স্মৃতিচিহ্নগুলি হাতড়াতে থাকি

একটা সুতোয় মোড়ানো চিঠির বান্ডিল

যার একটা ফিতেও ছিল না জড়ানোর মত

 

এতো বছর পর আমাদের একমাত্র সাক্ষাৎকার হলো

সেও যেন এক ঠান্ডা টেবিল ঘিরে দুটি চেয়ারের কথোপকথন

অন‍্য কোনো ভালোবাসা

এখনো আমার গভীরে শ্বাস ফেলে

তাই এর জন‍্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলার মত শ্বাসবায়ুও আর অবশিষ্ট নেই

তবুও এটা তার মতো করেই রয়ে গেছে

তবে এটা যেভাবে নাড়া দেয় বাকিরা তা দেয় না

বিস্মৃত

এমন কি আর স্বপ্নেও আসে না

এটা আমাকে মৃত‍্যুর সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে শিখিয়েছে

 

মেঘমালা

অতি দ্রুত মেঘের বর্ণনা দিয়ে ফেলতে হবে আমায়

একটি খন্ড মুহূর্তই যথেষ্ট

নচেৎ অন‍্যকিছুতে বদলে যাবে

এই তার বৈশিষ্ট্য

ওরা পুনরাবৃত্তি করে না

রূপ রং ভঙ্গি বিন‍্যাসের

যে কোনো প্রকার স্মৃতির ভার থেকে মুক্ত

বাস্তবতার ওপর সহজেই ভেসে বেড়ায়

শেষপর্যন্ত কোন বিষয়েরই বা সাক্ষী হবে ওরা?

 

যখনই কিছু ঘটে তখনই তো সে ছড়িয়ে যায়

মেঘের তুলনায় ধরণীর ওপর জীবন অনেক বেশি পোক্ত

ব‍্যবহারিক রূপে স্থায়ী প্রায় শাশ্বত

মেঘের নিরিখে একটা পাথরকেও নিজের ভাই মনে হয়

যার ওপরে তুমি ভরসা করতে পারো

যদি সে দূর সম্পর্কের কোনো চঞ্চলমতি ভাইও হয়

 

মানুষ থাকতেও পারে

আবার একের পর এক মৃত‍্যুর দিকে চলেও যেতে পারে

আদপে মেঘেদের বিশেষ কিছু যায় আসে না

নিচে কিই ঘটছে

তারা গর্বিতভাবে ভেসে বেড়ায়

তোমার আমার তাবৎ জীবনের ওপর নির্বিঘ্নে বিচরণ করে

যদিও তা এ পর্যন্ত অসম্পূর্ণই

আমাদের চলে যাওয়ার সঙ্গে তাদের অন্তর্হিত হওয়ার কোনো বাধ‍্যবাধকতা নেই

এমনকি ভাসমান অবস্থায় তারা সর্বদা দৃশ‍্যমানও নয়।।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন