কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

মৌ চক্রবর্তী

 

 

থিয়েটার এবং মিউজিক…

 


প্রতি,

থিয়েটারের দর্শক…

আজ পর্দা খোলার আগেই আমি উপস্থিত।

কে তুমি?

আমি শব্দ। আমি বাজছি… ওই দেখ…

দেখব? দেখব কী করে?

না, মানে আমি বলতে চাইছি যে, আমাকে তুমি অনুভব করো।

আমি তোমার সব মনসংযোগ পেতে চাইছি। তুমি কত কী যে পেরিয়ে এসেছ! কোথা থেকে কোথায় এসেছ? তুমি কি জন্যে এসেছ? থিয়েটারে? নাটক দেখতে তো?

হ্যাঁ, অবশ্যই…

আমি সেই নাটকের গান।

নাটকের গান? নাকি নাটকে গান? নাকি নাটুকে গান? নাকি থিয়েটারের গান? কোনটা?

যেটাই হোক, তুমি কি শুনছ?

আমি… আমি তো কিছু বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনছি। সেটাই বুঝি গান? আমি দর্শক হয়ে বসেছি। নাটকের কিবা বুঝি। আমি একজন তাত্ত্বিকের কাছে প্রশ্ন করলাম। তা থেকেই উত্তরের সন্ধান শুধু হয়, জানার জন্যে তো থিয়েটার, মানে নাটকের মধ্যে থাকতে হবে। তাই না?

একদম ঠিকই বলেছেন হে দর্শক।

আমরা যে একটু মঞ্চে পা রাখার সুযোগ পেয়েছি, সেখানে একটা বড় ‘কিউ’ ছিল।

কেমন?

আমাদের মনে রাখার জন্য ‘কিউ’ ব্যাপারটা বেশ কাজে আসে। যেমন, ‘কিউ দিচ্ছি যে…? এই এবারে ‘কিউ’ আসছে। ‘কিউ’ মিস করেছি ইত্যাদি। সব কথার মানে একটাই, সূত্র।

হে দর্শক, আমার বেশ মনে আছে, আমরা সবাই একসঙ্গে দাঁড়াই। মঞ্চে। ফাইনাল শো। আলো পড়ে। তখন আলোর মায়ায় মন টানে… ভাবি, ছুটে গিয়ে যদি দেখতে পারতাম, কেমন লাগছে আমার মেকআপ, পোশাক এই আলোয়!

না, হয় না। অনতিকাল পরেই, ‘কিউ’ আসে। নাটকে মিউজিক বা আবহ সংগীতের ব্যবহার, স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। এটা কি? আবহ নাকি নাটকের মিউজিক? আবহ কাকে বলে? নাটকের বাজনা শুরু হলে, আমাদের নাটকও শুরু হয়।

হে দর্শক, এই বাজনার রকম আছে। একটা বাজে নাটক শুরুর আগে। আরেকটা নাটক শুরুর পর থেকে, নাটকের প্রয়োজন মতো। আমি এই দ্বিতীয় ধারার মিউজিক নিয়ে কিছু জানাতে চাই।

মজার ঘটনা, আমি সংলাপের মধ্যে ঢুকতেই পারি না। আমি শূন্য-গুণের এক অভিনেতা। কিন্তু একটু একটু নাচ পারি। শেখালে পারি। না শেখালে আরও ভালো করেই পারি। আমার কাছে বাজনা মানে বন্ধু অভিনেতা। আমি খুব মন দিয়ে থাকি। সবকিছু ভুলে গেলেও, ওই যে বাজনা, সেটা আমাকে ঠিক সময়ে সবার সঙ্গে মিলিয়ে অঙ্গভঙ্গি করায় সাহায্য করে। আমি এই বাজনা নিয়েই কিছু লিখতে চাইছিলাম।

হে দর্শক, আমার বই পড়ে জানা, থিয়েটারের শুরু থেকেই এরকম বাজনাদারদের কদর খুব। যেদিন থেকে থিয়েটারের শুরু, সেদিন থেকেই থিয়েটারে সঙ্গীতের ব্যবহার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা সে অপেরা হোক, বা আমাদের দেশের নাটক। আমাদের দেশে তো কথাও সুরে বলা হত। যেমন, যাত্রাপালা গানে। নাটককে আকর্ষণীয় ও আবেগপূর্ণ করে তোলার জন্য গান, বাদ্যযন্ত্র এবং নৃত্যের ব্যবহার করা হতো। এই সময়ের থিয়েটারে সঙ্গীতের ব্যবহার কেবল বিনোদনের জন্য ছিল না, বরং এটি দর্শকদের আবেগ এবং নাটকের বিষয়বস্তুর সাথে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করত। নাট্য পরিবেশনায় সঙ্গীত পরিবেশ, গতি, উপপাদ্য, মেজাজ এবং পূর্বাভাস স্থাপন করতে পারে। এমনকি সেট পরিবর্তনের শব্দকেও ঢেকে রাখতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আবেগকে রূপ দিতে এবং পরিচালনা করতে পারে, দর্শকদের গভীরভাবে আকৃষ্ট করতে পারে।

হে দর্শক, এইসব আমি জানতাম। তবুও, পরীক্ষার সময় জিজ্ঞেস করেছিলেন যখন বিশিষ্ট এক নাট্য-তাত্ত্বিক, আমি তখন উত্তর দিতে গিয়ে ভাবলাম। ভাবলাম, এসব তো আমার ভাবনা। বইতে তো লেখা নেই। তাহলে বলব কিনা। শেষে, বলেই দিলাম। আর নিজের কথাকে আরেকটু যাচাই করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এসব শব্দও জুড়ে দিলাম। ক্ষুদ্র থেকে কথার ওজন বেশি হলে, সন্দেহ হবে বৈকি!বিশেষত যিনি থিয়েটারের জন্য ৫০ বছরের বেশি সঙ্গীত করছেন।



আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম, আমাকে আমার কাজ নিয়ে জিজ্ঞেস করায়। তাঁর ক্যারিয়ার থেকে কিছু ব্যবহারিক তথ্য সংগ্রহ করে, পরে যেন থিয়েটার এবং সঙ্গীত নিয়ে কাজ করি, সেই ভাবনার জোগান দেওয়ায়। তখন তো পাশ করলেই খুশি। তখন নাটকে সঙ্গীত করার  জন্যে আমরা রেকর্ডার ব্যবহার করতাম। আর লাইভ মিউজিকও করা হত। আমরা, সেক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত জানাদের সাহায্য নিতাম। সবশেষে, মিউজিক বসানো হয়ে গেলে বুঝতাম এটা এখানে বাজলে ভালোই লাগছে। আমাদের নাটকের চরিত্র থেকে আরেকটা চরিত্রে যেতে সুবিধে হচ্ছে। মঞ্চে স্থান পরিবর্তন করতে সুবিধে হচ্ছে। আমাদের নাট্যবন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ তারপর সংগীত ও নাটক নিয়ে রিসার্চ করেছেন, সেই তথ্য জানা নেই। তবে, নাটকে তাদের কাজ আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। এর কোনও আর্কাইভ নেই আজও।

কারণ, সংগীত নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় অত গভীরে না গিয়েও, সামান্য উপর উপর জানা দিয়েও কাজ চলে যায় নাটকের কিউ-তে।

তবুও, বইয়ে পড়েছি, থিয়েটারে সঙ্গীতের ব্যবহার কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আবেগ প্রকাশ, গল্প বা কাহিনি বলা, পরিবেশ তৈরি করা, দর্শক আকর্ষণ ইত্যাদি। যেমন, গান এবং বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে নাটকের চরিত্রগুলির আবেগ আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যেত। সঙ্গীতের মাধ্যমে নাটকের কাহিনি আরও আকর্ষণীয় ও সহজে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেত। সঙ্গীতের মাধ্যমে নাটকের দৃশ্য এবং পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হত। গান এবং নাচের ব্যবহার দর্শকদের আকর্ষণ করত এবং থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ বাড়াত।

এসব আমরা জেনেছি। তখন তো নাচ-গান জানা অভিনেত্রীদের কদর ছিল। তাই আমাদের দেশে, পেশাদার নাচ-গান জানা শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়েছিল থিয়েটারে। এই সময়ে জনপ্রিয় কিছু নাট্যরীতি ছিল। যেমন যাত্রা, শখের থিয়েটার, পেশাদার থিয়েটার। এই প্রত্যেকটিতেই সঙ্গীতের ব্যবহার ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তাহলে, সংগীত নাট্য পরিবেশনায় পরিবেশ, গতি, উপপাদ্য, মেজাজ এবং পূর্বাভাস স্থাপন করতে পারে, এমনকি সেট পরিবর্তনের শব্দকেও ঢেকে রাখতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আবেগকে রূপ দিতে এবং পরিচালনা করতে পারে। আর এই দর্শকদের গভীরভাবে আকৃষ্ট করতেই তো থিয়েটার।

তারপর?

হে দর্শক, ধরা যাক, একটা থিয়েটারের জন্য কেউ একজন একটা সুর বা, নাটকের গান সৃষ্টি করলেন। এই যে সৃষ্টি এর মালিকানা কারা? সুরকারেরা? নাকি থিয়েটারের?

অন্যদিকে, ভবিষ্যতে সঙ্গীত পুনরুজ্জীবন বা অন্য কিছুর জন্য ব্যবহার করতে গিয়ে ওই সুর বা সংগীতের ব্যবহার করতে হলে? তাহলে এর নতুন লাইসেন্সিং চুক্তি এবং ফি নিয়ে আলোচনা করা হবে? নাকি ওটা নাটকের গান শুধু? শোয়ের শেষে শেষ। এর মালিকানা থিয়েটারের শোয়ের? এর মালিকানা সংগীতকারের? এর মালিকানা হ্যাশট্যাগ কিউ শুধু?

ইতি__

একুশ শতকের ফ্ল্যাশব্যাক সত্তাধিকারী

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন