![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭ |
ব্যর্থতা
খবরটা আসার পর সারাদিন বাড়িতে আনন্দের ছোট ছোট তরঙ্গে সবাই মেতে উঠেছে।
বাড়ির সেজদা দিব্যজ্যোতি যাকে সবাই তার ব্যক্তিত্ব এবং পান্ডিত্যের জন্য সমীহ করে,
সে এ বছরে তার লেখা উপন্যাসের জন্য সরকারের দেওয়া শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত
হয়েছে।
বুকের মধ্যে মৃদু সুখ তরঙ্গের দোলা সে নিজেও অনুভব করছে। কিন্তু তার
ব্যবহারে তা প্রকাশ পাচ্ছে না। তবুও একবার ভাবল দেবপ্রিয়দাকে খবরটা দেওয়া উচিত। কেননা
তার সাহিত্যের হাতেখড়ি বাস্তববাদী, আগুনখোড় বৈপ্লবিক চেতনায় পুষ্ট এবং মানুষের
একাকীত্বের থেকে স্বাধীন হওয়ার,
মানুষ কারুর অধীনতাহীন হওয়ার এবং মানুষ একমাত্র নিজের অধীন হওয়ার স্বপ্ন
দেখার ফেরিওয়ালা দেবপ্রিয়দার কাছেই।
ফোন করতেই বিপরীত প্রান্তে দেবপ্রিয়দার কন্ঠস্বর ভেসে এলো কানে।
--হ্যাঁ
বল্
--কোন
ব্যাপারে?
দিব্যজ্যোতি বুঝতে পারে যে দেবপ্রিয়দা এখনো খবরটা পায়নি। তাই সে চেপে
রাখা আনন্দের হালকা সুরে বলল,
--এ
বছর আমার ‘না-মানুষের কথা’ উপন্যাসটা একাডেমি পুরস্কার পাচ্ছে।
অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে তার দেবপ্রিয়দা খুব শান্তভাবে ধীরে ধীরে বলল,
--কায়দা
করে উপন্যাসের নাম দিয়েছিস ‘না-মানুষের কথা’, কিন্তু ওদের কথা না বলে তুই ছদ্মবেশে
আধিপত্যবাদীদেরই গুণগান করেছিস নিশ্চয়ই। ‘না-মানুষের কথা’ সঠিকভাবে বলতে পারলে, তাদের প্রকৃত
অবস্থান তুলে ধরতে পারলে তোর বই ব্যান্ড হয়ে যেত। আর সেটাই হতো তোর বড়ো পুরস্কার।
যাইহোক তোকে রাষ্ট্র ঘুষ দিয়ে কিনে নিল। যদি কোনো সাহিত্যগোষ্ঠী এই পুরস্কার দিত,
তবে তার মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি ছিল।
তুই ক্ষমতা-বৃত্তের কেনা গোলাম হয়ে গেলি রে! তোর সাহিত্যসাধনা চরম ব্যর্থ।
--কেন?
ফোনটা ওপার থেকে কেটে গেল।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন