![]() |
কবিতার কালিমাটি ১৪৭ |
দৌড়
খর-রোদ্দুরে দৌড়োচ্ছে লোকটা আতঙ্কগ্রস্তের মতো;
দৌড়োতে দৌড়োতে এক একবার
পিছন ফিরে তাকাচ্ছে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে।
পিছন থেকে কারা তাড়া করে আসছে
উন্মত্ত, হিংস্র, অপ্রকৃতিস্থ ।
পিছনে দাউদাউ পুড়ছে বাড়িঘর;
জ্বালিয়ে দে, পুড়িয়ে দে-- ব'লে
কাদের উল্লাস
দুপুরকে চিরে দু'ফাল করছে।
এরা কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-পরায়ণ?
ভিন্ন দলের সমর্থকদের সর্বস্ব লুঠ
করতে চাইছে?
এদের অত্যাচার থেকে ছাড় পাচ্ছে
না শিশু, নারী, বৃদ্ধও।
ক্ষমতা দখলের জন্য এত হিংস্র হতে
পারে?
লোকটা দৌড়োচ্ছে, দৌড়েও কি রক্ষা
পাবে হিংস্র, উন্মত্তদের কবল থেকে?
এরাই দলের সম্পদ! হা ঈশ্বর,
এরাই বাহক গণতন্ত্রের, এরাই শান্তিরক্ষক।
দিনদুপুরেও লোকটার চোখে নেমে আসছে
অন্ধকার,
ক্লান্ত পা দুটো টেনে তুলতে পারছে
না।
ওই বুঝি ওরা এসে পড়লো!
মাথার উপর গনগনে আগুনে রোদ,
দৌড়োতে দৌড়োতে হঠাৎ প্রতিরোধের
ভঙ্গিতে লোকটা
ঘুরে দাঁড়ালো খোঁচা-খাওয়া বাঘের
মতো।
কাকের ডাক
সারাক্ষণ কাকের ডাক শুনছি, কাক ডাকছে
কাছে দূরে গাছের ডালে, কাক ডাকছে
ছাদের কার্নিশে্,
ঘরের ভেতরেও কি কাক ডাকছে?
সারাক্ষণ কাকের ডাকে একটা কিছুর
অশুভ
ইঙ্গিত পাচ্ছি।
এখন অঘটন ঘটার কালাকাল নেই, আজ
বেঁচে
আছি, কাল যে থাকবো তার নিশ্চয়তা
কোথায়?
উঠোনে যে বালিকাটি দাঁড়িয়ে থেকে
অকারণে বোমার আঘাতে মরে গেল,
তার তো এমন করে জীবন যাবার কথা
ছিল না!
এখন চাদ্দিকে অশুভ ওৎ পেতে আছে,
সারাক্ষণ কাকের ডাক শুনছি ঘরে বাইরে।
আগের দিনে কাছে-পিঠে সমস্বরে কাক
ডাকলে
ঠাকুমা বলতেন, সাক্ষাৎ অমঙ্গল,
উস্ উস্ করে
কাকেদের তাড়িয়ে দিতেন।
এখন চারপাশে কাকের জটলা, উঠতে বসতে
অবিরাম শুনি শুধু কাকের ডাক।
জামায় কাদার ছিটে
চাটুকার কবিদের চাটুকার বলতে দ্বিধা নেই;
চাটুকার কবিরা বসে আছে সরকারের
পাতা সতরঞ্জিতে;
আর আনুগত্য-লোভী সরকারের তোষামোদ
করে কবিতা পড়ছে একে একে।
বাকি চাটুকার কবিরা করতালিতে অভিনন্দিত
করছে একে অপরকে।
তারপর সরকার প্রত্যেকের গলায় ঝুলিয়ে
দিচ্ছে মেডেল;
যাতে তাদের প্রত্যেককে আলাদা করে
চেনা যায়।
কবি মেডেল গলায় ঝুলিয়ে ঘরে ফিরে
বউকে বলে, দ্যাখো, আমি কত বড় কবি!
সরকার আমাকে পুরস্কৃত করেছে।
বউ বিস্ময়-ভরা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে
থাকে কবিবাবুর দিকে,
তারপর দু'চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন
করে,
কোথায় গিয়েছিলে? তোমার জামায় এত
কাদার ছিটে কেন!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন