কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭


কমলাঙ্ক

দীবা কুমিল্লা গেছে গিয়ে কুমিল্লার আকাশের ছবি পাঠিয়ে সাথে বড় বড় করে লিখেছেআমার খুব ভাল লাগছে, এমন জায়গায় আগে কখনও আসিনি!’ পড়ে প্রথমেই খুব রাগ হয়ে গেল মনে হল এক্ষুনি ফোন করে দীবাকে আচ্ছা করে ধমক লাগাই - কী সাহস! একা একা অতদূর যে গেলি, সাথে আর কে গেছে? গেলিই যদি আমাকে একবার আগে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না? কুমিল্লা কী যে সে জায়গা? ইচ্ছে হল আর অমনি উড়ান দিলি যে? পথঘাট ভাল না, শুনেছি, তারপর এই একটানা বাদলা চলছে, বৃষ্টির বিরাম নেইকুমিল্লায় শুনেছি ট্রান্সপোর্টের সেরকম সুবিধে নেই!

দীবা তাছাড়া একদম ক্ষিদে সহ্য করে থাকতে পারে না, বাড়িতে আমার কাছে এসে থাকে যখন ওকে ঘন্টায় ঘন্টায় নিত্যনতুন খাবার দাবার রান্না করে খাওয়াইভাল মাছ ভাল সন্দেশ দৈ এসব তো থাকেই,  উপরন্তু চিকেন স্যলাড সি-উইড উইথ টোফু সেদ্ধ করা সবুজ আপেল হ্যানা ত্যানা আরও কত কী বলে শেষ করা যাবে না দুপুরে এবং রাত্রের সমস্ত ডিশ অলিভ অয়েলে রান্না হয়, সব বাসন থালা প্লেট চামচ বয়েলিং করে হ্যজেনিক করে রাখা হয় দীবার জন্য, আর সেই দীবা কিনাউফ আর ভাবতে পারি না! মেয়েটা আসুক এবার বাড়ি, দেখাচ্ছি মজা! কেন রে আমরা কি কলেজ লাইফ এনজয় করিনি? বন্ধু বান্ধব আমাদেরও ছিল। কত কত আড্ডা মেরেছি গল্প করেছি একসাথে, সিনেমা থিয়েটার রথের মেলা কত্ত ঘুরেছি আবার সঠিক সময়ে যে যার মত নিজের নিজের বাড়িতেও ফিরে গেছি আমাদের জন্য বাপ-মাকে কখনো দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি

মনের মধ্যে রাগ গজগজ করতে থাকে আর সেই গজগজানি নিয়েই আবার অফিসের কাজে ডুবে গেলাম, কী করব! একটা নীল আকাশ আর কিছু ইতস্তত ভেসে বেড়ান সাদামেঘ, এইই যদি দেখার ছিল তো অত্তদূর ছুটলি কেন? আমাদের দেশগাঁয়ে বাঁশবন ভাঙা চাঁদ মিহিন ধুলোপথ যেমন কে তেমন রইল পড় …! যাগ গে, যা খুশি করুক! নদীর চর হোগলা দোয়েল ঝিরঝিরে বাতাস মাছরাঙা ভাঁটফুল তারাবন আকন্দ গুবরে পোকা সাপমাসী বিদ্যেবুদ্ধির অতীত জলাভূশটিবন ভেঙে পড়া বাঁধানো পুকুর ঘাট নাগরিক দীবার স্থানিকতা কিংবা যাবতীয় একটেরেমিকে লহমায় ধুলিসাৎ করে দিলেকেমন দিন কাটছে দীবার ঐ অপ্রাকৃতিক দীর্ঘ শূন্যতার ভেতরআদিকবির কমলাঙ্ক তারপর যাত্রাভঙ্গ করে আজ কুমিল্লা, তবু ঐ এক টুকরো আকশের এতই জীবনীশক্তি ক্রমে ঠেলে দিচ্ছে আমাকে অপ্রগতিতে… পৃথিবী ও সন্ধ্যেবেলার মানুষ সেই পেছিয়ে পড়া সময়ে বাগানের ঢালু জমিতে বুঝি বসন্তের ভাঁটুই বাঁধাকপি মুলো গাজরের বীজ সব একসঙ্গে মাটি শুদ্ধ চটকে মন্ড মত করে গাছের ফাঁকে ছড়িয়ে দেয়! মেঘেরা প্রথম বারিবর্ষণ করলেই তাতে অঙ্কুরোদ্গম! কুমিল্লার মেঘ সেই… যেন কোনো আদি সন্ত অথবা আধোচক্ষু ফকিরসাহেব… আমিও যাব! এক্ষুনি দীবাকে কল করা দরকার…

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন