কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১৩২

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ডঃ মারী লুই ফন ফ্রানৎস-এর ম্রিলের কাহিনী

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

ডঃ মারী লুই ফন ফ্রানৎস-এর ম্রিলের কাহিনী

(A tale of Mrile: Africa)

(অনুবাদঃ মৌমিতা ঘোষ)

 


মূল গ্রন্থঃ রূপকথায় পুরাবিন্যাসের ধাঁচেরা

(Archetypal patterns in fairy tales)

লেখক পরিচিতিঃ মারী লুই ফন ফ্রানৎস ইয়ুঙের সবথেকে ঘনিষ্ঠতম বিশ্বস্ত সহযোগী ও শিষ্যা। ইয়ুঙিয়ান মনস্তত্বের বহু প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। রূপকথা নিয়ে ইয়ুঙের রচনাটি হল The Phenomenology of the Spirit in Fairytales. ইয়ঙ সর্বদাই মনে করতেন রূপকথা যৌথ নির্জ্ঞানকে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করার এক অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। রূপকথার মধ্যে বহুপ্রাচীনকাল থেকে প্রবাহিত চেতন ও অবচেতন অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। রূপকথার মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণটি বেশ অভিনব। এই গ্রন্থে সাতটি বিভিন্ন দেশের রূপকথা ও তার মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন ফন ফ্রানৎস। তার মধ্যে আফ্রিকান রূপকথাটি বেছে নিয়ে অনুবাদ করা গেল। এই গ্রন্থটি ছাড়াও ফ ফ্রানৎসের রূপকথার উপর উল্লেখযোগ্য বই, The psychological meaning of Redemption Motifs in Fairy tales, Mother Archetypes in Fairytales etc.)  

আবার আমরা ফিরে আসি ম্রিলের গল্পে। বাবার চেয়ারে বসে ম্রিলে স্বর্গে উঠে গেল আর চন্দ্র রাজার দেশে যাবার পথ খুঁজতে লাগল। এই পথে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের লোকের সাথে তার সাক্ষাৎ হতে লাগল  যারা তাকে একটু একটু করে পথ বলে দিতে লাগল, বিনিময়ে ম্রিলেকে তাদের কিছু কিছু কাজ করে দিতে হল। এটাই সম্পূর্ণভাবে রূপকথার আন্তর্জাতিক সর্বজনীন ধাঁচ। প্রায়ই দেখা যায় ইউরোপীয় রূপকথাগুলিতে নায়ককে সূর্য বা চন্দ্র বা তারা বা বাতাসের দেশে যেতে হয়। অথবা পথ জানবার জন্য তাকে কোন তিনমাথা বা ছয়মাথা বা নয়মাথা বিশিষ্ট দানবের কাছে আসতে হয়। আবার রাশিয়ান রূপকথায় নায়ককে তিনপেয়ে বাবা ইয়াগার কাছে আসতে হয়। আর তাদের জন্য কিছু কাজ করে দিতে হয়। কিংবা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাদের থেকে পথ জানবার জন্য। তাই এই সব বিষয়ের পুনরুক্তি  না করে আমি কেবল দেখাতে চাই যে ম্রিলেকে প্রতিবারই কোন না কোন নির্ধারিত কাজ করতে হয়।

এখানেই ম্রিলের পার্থক্য ঘটে যেইসব ছেলেদের থেকে যারা মনোস্নায়বিকভাবে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে রাখে। যেমন সেই শিশুটি যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল তার মা’র থেকে, পিচকারীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ পাওয়া সৃজনী সত্ত্বাকে নষ্ট করে দেওয়ার পর সে পূর্ণ মাত্রায় স্নায়বিক হয়ে যায়। আর এর জন্য ছাত্রজীবনে বিদ্যালয়ে তাকে কাঠিন্যের মুখোমুখি পড়তে হয়।

অনেকটা ওঝাদের মতোই মেডিসিনম্যান বা ভেষজবিদগণ প্রাথমিক জীবনে অত্যাচারিত হন এরপরও ওঝাদের মধ্যে আনন্দের অভাব হয় না  এই আনন্দ তাদের মনোজগতে রমানন্দের রূপ পরিগ্রহ করে যার সাহায্যে তারা ইহজগতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ভীষগগও ওঝাদের মত পরমানন্দ অবস্থা  লাভ করে তবে ওঝাদের সঙ্গে তাদের প্রধান পার্থক্য হলো যে ভীষগগণের যেন এই পরমানন্দ ভাবাবস্থা সহজাত যেখানে ওঝাদের এই অবস্থা প্রচেষ্টাজাত। এই পরমানন্দ অবস্থায় পৌঁছানোর পূর্বে, ওঝার ভর পড়ে বা প্রায় অচেতন হয়ে পড়ে কিছুক্ষণের জন্য বৈদ্যবিদ ভীগগণের ভর পড়ার কোন প্রয়োজনই পড়ে না। তারা উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অধিমানসিক স্তরের দেবপ্রদত্ত ক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিসকল, যারা সহজেই অতিজগকে অধিকার করতে পারে

অতিজগৎকে আলোকিত করে ম্রিলে মূলত অচেতনের স্তরে সে আলো ফেলে, অচেতনের জগৎই তো মানব মনের মানব চেতনার অগোচরে সম্পূর্ণ অন্য জগৎ। পারিপার্শ্বিক দৃশ্যগ্রাহ্য জগৎকে ছেড়ে দিয়ে এই সৃজনীময় স্বপ্নজগতে বিরাজ করে ম্রিলে। আবার চেতনস্তরিক জগতে ফিরে আসতেও তাকে বেগ পেতে হয় না কারণ সে মনোরোগী নয় পরিণামে যে অচেতন মনোজগতের রত্ন সম্ভার লাভ করে। এ সেই নিবিড় জ্ঞান যা অন্যের অলব্ধ

এভাবেই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় চন্দ্রলোকের বাসিন্দারা ম্রিলেকে কেন ইহজগতে ফিরতে দিল এই প্রশ্নের। কারণ সাধারণত পরলোকে অথবা মৃত্যুপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জগৎ -- পিতৃলোকে গেলে আর ফেরা যায় না। ম্রিলে পৌছেছিলো গোষ্ঠীগত যৌথচেতনের স্তরে তার নিজ প্রতিভার দ্বারা। এই জগতই – মনের অচেতনে নিহিত গূঢ় চন্দ্রলোক। নিজ প্রতিভা বলেই ম্রিলে এখান থেকে রত্ন উদ্ধার করেছিল। চন্দ্রলোক থেকে পুরস্কারস্বরূপ প্রাপ্ত গবাদি পশুর দল ও ষণ্ড তারই রূপক

এই অচেতনের জগতে ভ্রমণকালে ম্রিলে মোটেই উন্মাদ হয়ে যায়নি। এমনকি তার মা তার ওই অন্য জগতে যাবার চাবিকাঠি বীজশিশুটিকে নষ্ট করে ফেললেও না। বরঞ্চ সে তার গোষ্ঠীর অন্যতম ভীষগ হয়ে ওঠে। সে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করে। প্রেত যোনিকেও অনুধাবন করে। আজ স্বাধীনচারী পাখিরাও তার বাধ্য। এইভাবে সে দেবতার স্তরে উন্নীত হয়।

আবার শুভীনের গল্পটাতে দেখি যে শুভীন তার দৈব শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছে। এইসব গল্পের নায়করা যে ভাবে পরীক্ষিত হয় বা অন্য কথায় অত্যাচারিত হয়, শুভীনের ক্ষেত্রে অতটা বেশি কিছু  হয় না। তাই সে তার শিশুটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। তার বাবা-মা তাকে এটি ফেরৎ  দেয় শেষপর্যন্ত। কিন্তু তার গোষ্ঠীর লোকজন তাকে কালাজাদুকর ভাবতে থাকে। তারা তাকে মেরে ফেলতে চায়। তারা তার গোচারণ পথে গর্ত কেটে রাখে তারা তাকে বিষ অবধি দেয়। শুভীন কিন্তু ম্রিলের মত বোকা নয়। সে গর্ত পাশ কাটিয়ে দেয়। বিষ ফেলে দেয়। গোষ্ঠীর লোক যেমন তার উপর ক্ষুদ্ধ হয় তেমনই তারা তাকে ভয় পেতে থাকে। তারপর তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা বন্ধ করে। এবার শুভীন ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে গোষ্ঠীর কাছে সে বিরক্তি উদ্রেককারী হয়ে ওঠে। যদিও সে শেষপর্যন্ত শান্ত হয়ে যায়

এই গল্পের শেষে দেখি যে শুভীন খুব খ্যাতিলাভ করেছে। কেউ বলতে থাকে যে সে পাহাড় নদী অরণ্য সৃষ্টিকারী মহদেবতা। এই মহদেবতার নামও শুভী। কেউ বলতে থাকে যে বিশ্ব সৃষ্টিকারী দেবতা শুভীন নয়। সেই মহাদেবতা সৃষ্টির পরেই অন্তর্হিত হয়েছেন। তারপর আর প্রকট হননি। এই শুভীন আসলে তার পুত্র হুৎস্‌ভীন যে একদিন আবির্ভূত হয়ে সকলকে এনে দেবে সুখ এবং সম্পদ। এই শুভীন হয় সৃষ্টিকর্তা নয় তার পুত্র - গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ রক্ষাকর্তা।

এইসব গল্পের নায়করা প্রাথমিক অবস্থায় নিজেদের সাধারণ মানুষ বলেই জানে। কিন্তু পরবর্তী পর্বে তারা দেবতা হয়ে ওঠে অনায়াসে। এইসব উপজাতির কাছে ছিল মানুষ, হল দেবতা— এই বিষয়টি খুবই সহজবোধ্য। কোনও একজন ভীষগ বা নিবিড়ভাবে জ্ঞানীব্যক্তি ঈশ্বরে বা অবতারে রূপান্তরিত হতেই পারেন। কিন্তু আমাদের পক্ষে এসব ব্যাপার বোঝা দুরূহ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের ঈশ্বরের অবতার  হয়ে ওঠার বিষয়টি বোধগম্য করা খ্রিস্টানদের পক্ষে বড়ই পীড়াদায়ক। তারা প্রভু যীশু ছাড়া আর কাউকে অবতার কিংবা ঈশ্বরের পুত্র বলে মানতে পারে না। যীশু ভিন্ন আর কাউকে অবতার ভাবা খ্রিস্টধর্মে নিষিদ্ধ। খ্রিস্টধর্মে নবাগত বা কোনও সাধারণ স্বল্প জ্ঞানী জনসম্প্রদায় যদি কোন সন্তকে অবতারের মতো পূজা করতে আরম্ভ করে, ক্যাথলিক চার্চ তৎক্ষণাৎ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। চার্চ সেই সাধুকে সাধারণ মানুষ হিসেবেই প্রতিপন্ন করে। সম্প্রদায়গত ভুল সংশোধন করিয়ে যীশুকেই একমাত্র ত্রাণকর্তা বলে মানতে শেখায়

খ্রিস্টধর্মে মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে প্রচণ্ড ফারাক - মানুষ কখনোই ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারে না। আবার আফ্রিকান উপজাতীয় ধর্মগুলিতে এবং হিন্দুধর্মে এই বিষয়ক এই বিষয় খুবই স্বাভাবিক। একজন হিন্দু যোগী অনায়াসেই তার ভক্তদের কাছে শেষপর্যন্ত মহাদেব শিব কিংবা ভগবান কৃষ্ণের অবতার হয়ে ওঠেন। আফ্রিকান রূপকথায় কূটবুদ্ধিসম্পন্ন শুভীনকেও গোষ্ঠীর লোকজন সৃষ্টিকর্তা বা তার পুত্র হিসেবে ভাবতে থাকে। কারণ বহুক্ষেত্রে সে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখায়। ম্রিলেও ধীরে ধীরে দেবতা হয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু ষণ্ডকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনে দ্বিতীয়বার যবনিকা পতন হয়। একটি সম্ভাবনাময় জীবন এই ভাবে শেষ হয়ে যায়।

প্রাচীন আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশে এবং মিশরে ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্ব অবধি ষণ্ড ছিল রাজপ্রতীক। রাজা, ষণ্ড আর চন্দ্রদেব একই ব্যক্তি বলে গণ্য হত। ষণ্ড ছিল রাজার জীবন এবং বীর্যক্তির প্রতীক। চন্দ্রদেব মিনকে মনে করা হতো রাজার রক্ষকর্তা। পরবর্তীকালে প্রাচীন মিশরের সূর্যদেবতা–‘রা’–এর প্রতিভূ এবং অবতার। চন্দ্র–ষণ্ড–রাজশক্তি পরিণতি পায় সূর্য–ষণ্ড–রাজশক্তিতে।

ফারাও উত্তরাধিকারী উৎপাদনের জন্য মাতৃগমন করত। নিজেকে দ্বিতীয়বার প্রসবের উপায় হিসেবে ফারাও বংশের মাতৃগমন সিদ্ধ ছিল। কারণ ফারাও এই মুহূর্তে তার মায়ের আত্মজ নয়। যে এখন নিজেই দেবতা – ‘রা’ যিনি পরবর্তী ফারাওকে আনয়নের জন্য রাণীর শরীরে প্রবিষ্ট হচ্ছেন। রাণী ও উত্তরাধিকার লাভের কারণে পুত্রের গম্য হচ্ছেন কারণ তিনি এই মুহূর্তে পুত্র নয় মিলিত হচ্ছেন কামুতেফ-এর সঙ্গে। কামুতেফের অর্থ হল যে তার মায়ের ষণ্ড। এই মিলন তাই আর অত্যাচার বা ইনসেস্ট নয়। এটি হলো ফারাওএর নিরন্তররণ। মনে করা হতো এইভাবে একই রাজা এবং একই রাণী অপরিবর্তনীয় ভাবে থেকে যাচ্ছে যুগান্তরব্যাপী। রাজা বা রাণী এক এবং অদ্বিতীয় শাশ্বত। কামুতেফ সেই আদি পিতা এবং পুত্র - যে আসলে পিতারই রূপান্তর— উভয়ের সংযোগ রক্ষাকারী। মিশরীয় ধর্মতত্ত্বে তার ভূমিকার সঙ্গে খ্রিস্টীয় হোলি ঘোস্টের অনেকাংশে মিল পাওয়া যায়। কামুতেফ নতুন ঈশ্বরের সৃষ্টির জন্য নতুন ঈশ্বরের মায়ের সাথে – মূলত নিজের মায়ের সাথে মিলিত হয়। কামুতে জনন শক্তির প্রতীক

অ্যাবাইডসের সমাধিগুলিতে তাই প্রচুর পরিমাণে ষণ্ডমূর্তি খোদিত দেখা যায়। এমনকি রাজ-ষণ্ডগুলিকেও মমি করে সমাহিত করা করা হতো। ওই ষণ্ডগুলির কপালে শ্বেত বর্ণের তিলক থাকত - বিশ্বাস করা হতো রাজার প্রজনন শক্তি, সুস্বাস্থ্য, সৃজনশক্তির প্রতীক ওই ষণ্ড - তিলক তারই  নির্ধারক

মিশরে যা নিগূঢ়রূপে ধর্মসংস্কৃতির অঙ্গ ছিল তা অনেক সহজ সরল রূপে সারা আফ্রিকা ছড়িয়ে পড়েছিল। আফ্রিকান উপজাতিগুলির মধ্যে এইভাবে ষণ্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গোষ্ঠীপতি কিংবা মহাভীগণ কিংবা প্রজননের দেবতার প্রতীক হিসেবে বান্টু উপজাতিগুলি এমনকি দর্যশজ্ঞ উপজাতিতেও ষণ্ড ছিল প্রধান পশু বলিপ্রদানের জন্য। তাই ম্রিলের পক্ষে ষণ্ডমাংস ভোজন নিষিদ্ধ ছিল। তদুপরি সেই ষণ্ডটি যখন চন্দ্রলোক বা পিতৃলোক থেকে প্রাপ্ত। সেই ক্ষেত্রে এটি হলো দেবষণ্ড - ধর্মের ষণ্ড। এটিকে চন্দ্রলোকেই ফেরৎ পাঠাতে হবে

 

Minotaur, Greek mythology

 

বান্টু উপজাতিতে মানত-এর পশুকে অর্থাৎ দেবতা অথবা পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে নিবেদিত পশুকে কোনওভাবে বধ করা বা বিক্রয় করা যায় না। এমনকি এগুলির রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও নিষিদ্ধ ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যদি কোনও বান্টুর স্ত্রী পুত্রসন্তান প্রসব করে তবে সে একটি ষণ্ডকে পিতৃপুরুষগণ বা উমুর উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। যদি কখনো এই ষণ্ডকে সে বধ করতে বা বিক্রয় করতে বাধ্য হয় তখন সমজাতীয় আরেকটি ষণ্ডকে জোগাড় করে এনে আগেরটির সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে প্রথমটির কপাল, বুক, লেজ থেকে লোম নিয়ে দ্বিতীয়টির শরীরের স্থাপন করে একত্রে ছেড়ে দেওয়া হয় দুটোকে পিতৃপুরুষগণ বা মুদের মন্ত্র উচ্চারণ করে আহ্বান করে জানানো হয় যে নতুন  ষণ্ডটি উপযুক্ত এবং প্রথমটিরই প্রতিভূ। এই উদ্দেশ্যে নিবেদিত মদ্য ঢেলে দেওয়া হয় গ্রাম প্রধানের কুঁড়ে ঘরে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে মানতের পশুকে হত্যা করা কতখানি মহাপাপ,  সেখানে তা খেয়ে ফেলার কথা তো অকল্পনীয়। বিশেষ করে তা যদি হয় পিতৃজ্ঞের ষন্ড ম্রিলের ষণ্ড মাংস ভোজন তাই ধর্মধ্বংসকারী, আত্মধ্বংসকারী ধর্মচ্যুতি। এই ষণ্ডকে একমাত্র বধ করা যায় যদি তার কপালের লোম অন্য ষণ্ড এর কপালে স্থাপন করা যায়। বিশ্বাস করা হতো কপালের লোমেই লোমে প্রাণীটির আত্মা বাস করে। এইভাবে প্রথম ষণ্ড-এর আত্মা দ্বিতীয় ষণ্ডে প্রবেশ করে। দ্বিতীয়টি তখন ধর্মের ষণ্ড হয়ে যায়। প্রথমটি তখন আত্মা বিহীন হয়ে যায়। সেটি আর ধর্মের ষণ্ড থাকে না। বড়ই আশ্চর্যজনক এই প্রতিস্থাপন যজ্ঞটি। ম্রিলের বাবা এই সব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান না করেই ষণ্ডটিকে হত্যা করে কারণ এটি বৃদ্ধ হয়েছে – অচল হয়েছে। ফলে খাবার সময় ষণ্ডটি ম্রিলেকে স্মরণ করায় যে সে তার শরীর থেকে মাংস ভোজন করতে পারে না – সে পিতৃলোকের ষণ্ড।  এভাবেই ম্রিলের ধর্মচ্যুতি ঘটে।

চন্দ্রলোকের বাসিন্দারাই কেবল সেই লোকের ষণ্ড-এর মাংস ভোজন করতে পারে। পৃথিবীর মানুষেরা নয়। ম্রিলে চন্দ্রলোকে বসবাস করেছে। তাদের আগুন এনে দিয়ে তার ব্যবহার শিখিয়েছে। এতসব অতিমানবিক ক্রিয়া কান্ডের পরেও চন্দ্রলোকের ষাঁড়টি  তাকে বলেছিল যে যদি ম্রিলে তাকে খায় তবে ম্রিলেও খাদ্য হয়ে যাবে। এইভাবে ষাঁড়টি তাকে বুঝিয়ে দেয় যে সে মানবের সীমা আদৌ অতিক্রম করতে পারেনি। তাই এই ষণ্ড এর মাংসের ভোজনের সাথে সাথেই পৃথিবী ম্রিলেকে গ্রাস করে।

Bull seal, Harappa


 আর সব ট্রাজিক নায়কদের মতোই ম্রিলেরও এইভাবে বিয়োগান্তক পতন ঘটে। অতিমানবিক, অতিজাগতিক প্রচেষ্টার পরও এইসব নায়করা মানবই থেকে যায়। তাদের কোনও উত্তরণ ঘটে না।  যেভাবে গিলগামেশ পৃথিবীর শেষ সীমায় পৌছে যায়। পৃথিবী ছাড়িয়ে পৌঁছোয় জগৎ উৎনপিশতিম –এ। অমৃত গাছের চারা সে নিয়ে আসে মানুষের জন্য সেখান থেকে। সেই চারা রেখে দিয়ে পুষ্করিণীতে স্নানের কালে একটি সর্প তা চুরি করে নিয়ে পালায়। গিলগামেশের প্রচেষ্টা এইভাবে বিফল হয়। আর সব মহান কর্মকাণ্ডের পরেও ঈর্ষাপরায় স্ত্রী দিয়ানইরাকে বিশ্বাস তার দেওয়া রাজ পোশাক অঙ্গে ধারণ করতে না করতেই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায় হারকিউলিস স্ত্রীর ফাঁদে পা দিয়ে আর তার অমর হয়ে ওঠা হয় না। অত্যন্ত সাহসের সাথে ঈশ্বরের কাছ থেকে আগুন চুরি করার পর পলিনেশিয়ান নায়ক মাউই শেষপর্যন্ত পতিত হয় মহামাতৃকা হাইন–পুই–তে–পো-এর মুখগহবরে। সে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হাইন–পু–তে–পো-এর মুখে আটকে থাকে তার  পশ্চাৎদেশ এবং ঝুলতে থাকা পা-এর ছটফটানি দেখে ছোট্ট একটি পাখি খুব মজা পেয়ে হাসতে শুরু করে। এই শব্দে হাইন–পুই–তে–পো জেগে যায় এবং তার মুখ বন্ধ করে। মাউইকে গ্রাস করে। সারা জীবনের জন্য হারিয়ে যায় মাউই

বিয়োগান্তক নায়ক বা ট্রাজিক হিরোদের গল্পের একটি নির্দিষ্ট ধরন লক্ষ্য করা যায়। প্রত্যেক হিরোই মহান কর্মকান্ডের দ্বারা অতিমানব হয়ে ওঠেন। তাদের দুঃসাহসিক কাজকর্ম তাদের দেবস্তরে উন্নীত করে। কিন্তু ছোট একটি মানবিক ভুল একটি ক্ষণিকের পদস্খ তাদের পতন ঘটায়। ট্রাজিক হিরোর গল্প আসলে জনসাধারণকে শিক্ষা দেবার জন্য প্রচলিত ছিল। যেন একটি সতর্কবার্তা যে মানুষ হয়েছ, মানুষই থাকো, অতিমানব বা দেবতা হতে যেও না, পতন অনিবার্য। ট্রাজিক হিরো  মানুষের ধারণা অতিক্রম করে। কিন্তু তার শেষ হয় ভীষণ কুৎসিতভাবে, বীভৎসভাবে

ট্রাজিক হিরোর বীরোচিত কাজকর্ম দেখতে দেখতে সাধারণভাবে সাধারণ মানুষও ওই বীরের সাথে একাত্মবোধ করতে থাকে। এটাই মানুষের স্বভাব। সে নিজেকে ছাপিয়ে গিয়ে নায়ক হয়ে উঠতে চায়। সেই মুহূর্তেই তাকে স্মরণ করানো হয় ট্রাজিক হিরোর করুণ পরিণতি। যেহেতু সে মানুষ ভুল তার হবেই—পতন তার হবেই। দুঃসাহসের ফল যন্ত্রণাময় পরিসমাপ্তি। সাধারণ মানুষকে বারবার মনে করানো হয় সে বীর নয়। সে অতি সাধারণ, অতি সামান্য।


 

 তবুও মানুষের অহংধর্ম এমনই যে সামান্য একটু সাহসের কাজ করলেই সে নিজেকে বীর বা হিরো ভাবতে থাকে। অথবা নিজেকে বীর না ভাবলে সে কোন সাহসের কাজ করতেই পারে না।  উদাহরণস্বরূপ সেই যুবকের কথা বলা যায় যে তার মায়ের দ্বারা শৈশবে, এমনকি যৌবনেও অতি  নিয়ন্ত্রিত ছিল। যৌবনে সে স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তি চায়। যখন তার বয়স বাই সে শহরে অন্য একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। কিন্তু সে মাকে খুব ভয় পেত। সে মাকে একটি কথা কিভাবে বলবে সেটা ভেবেই উদ্বিগ্ন হয়ে থাকত। এমন অবস্থায় প্রায়শই সে স্বপ্ন দেখতো যে সে বীরের মোট একটি ড্রাগকে বধ করেছে। শেষ অব্দি আতঙ্কে প্রায় এক কাঁপতে কাপতেই খাবার সময় সে মাকে কথাটি বলেই ফেলে। আর এরপর এই সামান্য সাহসের কাজটুকু করবার পর, সে নিজেকে বীর ভাবতে থাকে। এই ঘটনাটিকে অনেকে মজার বিষয় বলে মনে হতেই পারে - যে অতি তুচ্ছ বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে পুরাকথা দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মনোবিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে তরুণটির অবচেতন তাকে সাহস যুগিয়েছে তার মায়ের পুরুষোচিত প্রভুত্ব বোধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। এবার সে সফল হয়েছে। অনুভব করেছে উপভোগ করেছে নিজের বীরসত্তাকে। সে শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পেরেছে, ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে যায়নি। এখন সে সন্ত জর্জ বা সিগফ্রিডের  মতো একজন বীর

ট্রাজিক হিরো বা বীর-নায়কের পুরাবিন্যাস আসলে আমাদের প্রত্যেকেরই অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা বীরসত্তার রূপক যা আমাদের নিজ ক্ষমতাকে ছাপিয়ে ঠে দুঃসাহসিক ক্রিয়াকাণ্ডকে প্রতিকায়িত করে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিগুলিতে এই বীরসত্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে এক আধবার জেগে ওঠে। সমস্যা মিটে গেলে আবার সেই সত্তা অবচেতনের অতলে তলিয়ে যায়। ম্রিলের মাটির গভীরে তলিয়ে যাওয়া এরই প্রতিরূপ এই সত্তা যদি আবার সুপ্ত না হয়ে যায়, যদি দৈনন্দিনতায় পর্যবসি হয় তবে ভারী মুশকিল। বীরত্বের এই খেয়াল থেকে যদি না কেউ বেরোতে পারে তবে তার শেষ হয় ভীষণ খারাপভাবে। আত্মমোহতা অহংকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তোলে। ফলত যেকোনো মুহূর্তে তার পদস্খলন ঘটে যায় ।

ট্রাজিক হিরোর কাহিনী তার বিয়োগান্তক পতন শ্রোতাকে বা দর্শককে বিষাদময় করে তোলে। যেন প্রবল একটা ধাক্কা দিয়ে তাকে স্মরণ করে যে সে বীর নয়। বীর হওয়াও তার উচিত নয়। বীরের সঙ্গে একাত্মকরণ তাকে মানায় না। বীরের যদি এইরূপ পতন হয় তবে তো সে নিজে অতি নগণ্য একটি মানুষ। পতনের কোন অতলে যে তলিয়ে যাবে সে কথা ভাবাও দুঃসাধ্য। তাকে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হবে। বীরের ভূমিকা পালন তার পক্ষে সুদূরপরাহত সাধারণ মানুষকে শিক্ষা দেবার জন্য রচিত এই সব বিয়োগন্তক কাহিনীগুলি তাই এত ঞর্থকভাবে শেষ হয়। আসলে ঞর্থক মনে হলেও ম্রিলের কাহিনীও একইভাবে শিক্ষামূলক। ধর্মীয় সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ কোনো কিছু করার ইচ্ছে যাতে মনেও না আসে মনকে সেইরূপ নির্মাণ করবার চেষ্টা অন্তত প্রাচীন উপজাতিগুলি এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল নিষিদ্ধতার বেড়াজালে জাতিকে, গণকে, গোষ্ঠীকে আটকে রাখতে। মানত-এর পশু হত্যা করা খাওয়া ছিল চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। ওই মানতের পশু ছিল পশু সংরক্ষণ করার একটি আদিম উপায়। নয়তো ঐ জাতীয় সব পশু বিশেষ করে ষণ্ড মহিষাদি গবাদি পশুগুলি (মূলত ধর্মঙ্গত বিধিতে গবাদি পশুই বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যগতভাবে সর্বজাতিতে মানত করা হতো) ভক্ষ্য হতে হতে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ম্রিলের ষাঁড়টিও সেইরূপ পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এটি প্রজননকারী জীব। এটিকে হত্যা করা নিয়মবিরুদ্ধ। নয়তো ঐ গোষ্ঠী ক্রমাগত ষণ্ডহীন হয়ে পড়বে - গবাদি পশু শূন্য হয়ে যাবে।

একবার এক আমেরিকা বংশোদ্ভূত ভারতীয় বাইসন সম্পর্কে খুব ভক্তি ভরে কথা বলছিলেন। বাইস যেন তার কাছে দেবতা তিনি বলছিলেন বাইসনের শরীরে তাদের খাদ্য যোগান দেয় ও বাঁচিয়ে রাখে, তার শিং তাদের অস্ত্র, সূঁচ প্রভৃতি কার্যকরী জিনিষ প্রস্তুতে কাজে লাগে, এর চর্ম দিয়ে বস্ত্র প্রস্তুত হয়, তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ মূল্যবান। (প্রাচীন জাতিগুলি বিশ্বাস করে খাদ্য হলো ঈশ্বর প্রদত্ত পুরস্কার। খাদ্যের মাধ্যমেই ঈশ্বর ও মানুষের সংযোগ রক্ষা হয়। খাদ্যই মানুষকে জীবিত রাখে। এমনকি এই বিশ্বাসও দেখা যায় খাদ্যই ঈশ্বর)।

তাই অযথা বাইসন হত্যা করা তাদের কাছে মহাপাপ, খেয়ে ফেলা তো একান্ত নিষিদ্ধ। আফ্রিকার প্রাচীন উপজাতিগুলির এরকম বিশ্বাসও আছে যে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নিবেদিত পশুগুলি মৃত্যুর পর পুনরাবির্ভাব করে যদি তাদের সমস্ত হাড় সংরক্ষণ করা যায়। কোন একটা হাড় না পাওয়া গেলে তা আর সম্ভব নয়। তাই ওই পশুকে হত্যা করা বা তার থেকেও বেশি খেয়ে ফেলার কথা তো ভাবাই যায় না। ওই পশু পুনরাবির্ভাব না করলে ওই জাতীয় সকল পশুর শেষ হয়ে যাবার ভয় থাকে। বাস্তবে, প্রাচীন জাতিগুলি দেশকাল ভেদে বিশেষ কোনও পশুকে বিশেষ মর্যাদা দেয় – যা সম্পূর্ণভাবে ওই জাতির আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ওই পশুর হ্রাসপ্রাপ্তি তাই জাতির পক্ষে ঘোর অমঙ্গলের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গবাদি পশুই প্রাচীন জাতিগুলির সম্পদ হিসেবে ধর্মীয-সামাজিক মর্যাদা পেত। পুনরাবির্ভাবের পুরো ব্যাপারটাই ছিল ওই জাতীয় পশুর হ্রাসপ্রাপ্তি রক্ষার জন্য এক বিশেষ প্রকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা।

Unicorn, Harappa seal

 

 ওই বিশেষ পশুগুলি ছিল আদতে জাতির খাদ্যের যোগানদার। ওই জাতীয় পশুগুলি হ্রাস পেলে জাতিটিকে একদিন অনাহারে মরতে হতে পারে। ম্রিলের ওই খণ্ডমাংস ভোজন এইভাবে হয়ে ওঠে ঈশ্বর বিরোধী,  জাতির পক্ষে ঘোর অমঙ্গলকর একটি গর্হিত অপরাধ।

ইয়ুং এর মতে ক্ষুধা হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা এমনকি যৌনযাতনাও এই সমস্যার ধারে কাছে যেতে পারে না। আমিও এই ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। একবার ওয়ালিসের  দুর্গম পার্বত্য পথে এক দীর্ঘ যাত্রার পর খাদ্যের অভাবে আমার মৃতপ্রায় অবস্থা হয়। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় আমাকে স্প্যাগেটি দেয়া হয়েছিল একথা আমার মনে আছে। আমার জ্ঞান ফিরে আসবার পর দেখি স্প্যাগেটি উধাও। ঘোরের মধ্যে স্প্যাগেটিটাকেই আমার ঈশ্বর বলে বোধ হচ্ছিল – ভক্তি ভরে তাকিয়ে ছিলাম ওই খাদ্যের দিকে। স্প্যাগেটি পাত্র কোথায় গেল জানতে চাইলে আমার ভ্রমণ সঙ্গী আমায় বললেন আমি ওটা খেয়ে ফেলেছি। হ্যাঁ আমিই খেয়েছিলাম। কিন্তু খাবার কথা আমার মনে নেই। না খেলে কিছুতেই আমার চেতনা ফিরে আসত না। চৈতন্য আসার পর আমি শরীরে রক্তের স্পন্দন শুনতে পাই আর উষ্ণতা অনুভব করতে পারি। আমিও তখন বুঝি খাদ্যই ঈশ্বর। কিন্তু আধুনিক ইউরোপীয় জাতিগুলি খাদ্যের মর্যাদা দিতে পারে না। ভোগের জন্য নির্বিচারে তাই তারা পশু হত্যা করে চলেছে। এই অবিচার, অবিবেচনা আধুনিক জাতিগুলিকে তাই যথাসম্ভব ধংসের অভিমুখে ঠেলে দিচ্ছে।

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন