![]() |
কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৭ |
ডিম্ভাত
নামচি চা বাগানে আজ প্রায় একবছর পর খুশির হৈ হৈ। সবার নেমন্তন্ন। ডাবল ডিমের ঝোল, গরম ভাত, আলুর চোখা। যদিও আহামরি কিছু নয়, কিন্তু এই খাবারটাও ওরা পায় কোথায়? আগে চা বাগানে বছরে একশ দিনের কাজ বরাদ্দ ছিল, নতুন মালিক এসে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। সারাবছর বড়জোর তিরিশ দিন কাজ। কোন পার্টির র্যালি বা মিটিং থাকলে তবেই এইসব খাবার জোটে।
আজ যেমন। রুলিং পার্টির মিটিং। পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়া নিয়ে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। আজ শম্ভু পবন বিশে হরিনাথ সোনালী মোংলা চামেলী পুরো কলোনির সবাই একসাথে যাবে, সক্কাল সক্কাল গিয়ে প্যান্ডেলের নিচে বসে পড়বে। সারাদিন মাইক চলবে। দুপুরবেলা গরম ডিম্ভাত। বিকেলে ফিরে এসে হাঁড়িয়া।
কিন্তু যাবার আগে শম্ভুর বাড়িতে
ওর বৌয়ের সঙ্গে ঝামেলা বেঁধেছে। ঝুমা ওদের চোদ্দ বছরের মেয়েকে সাথে নিয়ে যেতে রাজি
নয়।
-- কেন, মনে নেই, আগের বছর র্যালিতে
গিয়ে পবনের মেয়েটা হারিয়ে গেল, আর এল না। তার আগের বছর লছমনের ষোলো বছরের মেয়েটা!
প্রতি বছর মিটিং হয়, একটা করে মেয়ে হারিয়ে যায়, কেউ খুঁজে পায় না। মালিক বলে চিতাবাঘে খেয়েছে, কিন্তু মেয়েগুলো
পুরো গায়েব হয়ে যায়। ওখানে আমি মেয়েকে নিয়ে যাব না। বাড়ির মধ্যে রেখে তালা দিয়ে
যাব।
শম্ভু মেয়ের পিঠে হাত রেখে ভাবতে
বসে। এক বছর মেয়েটাকে মাছ ডিম খাওয়াতে পারেনি!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন