কবিতার কালিমাটি ১১৮ |
শেষ প্রেম
যুদ্ধে যাবো
কাল। আজ এই হিমহিম ভয়ার্ত সন্ধ্যায় আমি
গৌরবের জয়গাথা
পড়ে যাব শুধু? নাকি ইতিহাস ঘেঁটেঘুটে
মিশরীয় সভ্যতার
ফ্যারাও আমল থেকে অ্যাসিরীয়, ব্যবিলনীয়,
চৈনিক, মহেঞ্জোদারোর
স্পার্টান পদ্ধতি জেনে নেকড়ে ও রোমুলাস,
রোম... মহাব্যোম
থেকে ফিরে আসে, হ্রীং।
টেস্টের দরোজায়
দেখি পিয়া, অলিম্পিয়া, নিতম্বে উন্মুখ।
আমি তাই দুই
কাস্ক মদ্য নিয়ে ওর সামনে রেখে
বলে উঠি খা।
ও খেলো, খেয়ে নিঃশেষে ফতুর করে দিলো পিপে।
আমি ওর গা টিপে
গা টিপে চুমোয় ভরে দি যোনি,
রহস্যের ঘ্রাণ,
যা খাজুরাহোর মন্দিরে অক্ষত
আছে আজো, আর
বিংশশতাব্দীর এই কালচক্র
শিল্প শিল্প
বলে ঐতিহাসিকের ক্ষুধা, যদি দুষ্ট, আণবিক
কাল যুদ্ধে
যাবো, বর্শাবিদ্ধ মরে যাবো, পড়ে যাবো ঘুড়ির পায়ের ক্ষুরে
মৃত্যুর অধিক।
মদ্যপ
ঘরটায় তালা
দিয়ে অমিয় বেরিয়ে পড়লো
সিগ্রেট কিনতে।
একঠোঙা কাজুও কিনবে বোধহয়। শশা।
আমি বললাম,
কিরে, টিভিটা বন্ধ করবি না?
বললো, আরশোলা
ও ইদুঁর, বিছানাপত্তর,
ঘরের জানালা
দরোজা, সিলিঙের শুনতে ইচ্ছে করে না?
আমি আর কোনো
শব্দই জোগাড় করতে না পেরে
বললাম, মদ্যপ!
ভারতবর্ষ
মা-এর বয়স
বাহান্ন, বাষট্টি বা ওরকম, ওর বেশি হয়ে গেলে সত্যি
মা আর মা থাকেন
না হয়ে যান মাতা, মাতাজী, নতুবা বঙ্কিমী ভাষায়
মাতাঠাকুরানী।
পূর্ণগিরি যাচ্ছি।
চড়াই উতরিয়ে দেখি এক যুবা, সুঠাম সুন্দর।
চলেছেন হেঁটে।
মাথায় বিশাল এক ঝুড়ি, বেতের। ঝুড়িতে বসে আছেন এক বুড়ি
থুড়থুড়ি,
ক্রিপলড, ফুলে ফলে আঁকা মাতাঠাকুরানী।
প্রায়ই বলছিলেন,
চল বেটা চল সুন্দর; দিমাক সে পাঁও চালাকে চল।
দো ভাষীর কাজ
করি তো! মম’কে বুঝিয়ে বলছিলাম ব্যাপারটা, তাই।
পূর্ণগিরি কী?
কে? বাহান্ন পীঠের সারবস্তু কোথায়? যমুনা বা বেত্রবতীর
তীর থেকে এইসব
বুড়িরা কেন আসে কেন যায়!
পুত্রের অহংকার
তো বলিইনি, তবু
সেইদিন রাত্রেই
নেহরু লখনৌ এয়ারকপোর্ট থেকে দূরভাষ পেলেন;
না আগ্রা নয়
আর, বুলন্দদরওয়াজা নয় কিছু,
কনট সার্কাস
নয় ভালো, লালকিল্লা, মেরিন ড্রাইভ,
মীনাক্ষী টেম্পল,
তাজ। দেখা হলো, দেখা হলো আজ
হোয়াট ইন্ডিয়া
ইজ, হোয়াট ইণ্ডিয়া ওয়াজ। বাই...
উড়ান
পাখি, গান গায়।
পাখী, গান গায়
না।
এ কীরকম হলো?
একবার বললেন,
পাখি গান গায়।
আবার বললেন,
গান গায় নাকো।
প্রথমটায় হ্রস্ব
ই
দ্বিতীয়টায়
দীর্ঘ ঈ, লক্ষ্য করেছো?
দীর্ঘ ঈ গান
গায় না, মেয়ে পাখি কিনা, তাই।
তবে সে কী করে?
কী করে?
বাসা বাঁধে,
ডিম পাড়ে, বসে থাকে,
তা দেয়, পরে
বাচ্চা হলে,
মেয়ে পাখীই কি,
ছেলে পাখিই
কি,
উড়ান শেখায়।
চাকরি
আমি মরতে-না-মরতেই
আমার বউ, সুধন্যা
পাশেই ছিলো,
শিয়রের কাছে,
বলে উঠলো, মৃদু
নত এবং স্বাভাবিক সুরেই
বলে উঠলো, আঃ
বাঁচলাম।
আমি এখন সবে
বুক ছেড়ে বুকের ওপরে উঠেছি;
এখন, একটু বিশ্রাম
নিয়ে সিলিং ভেদ করে
উর্ধ্বে চলে
যাবো—
‘আঃ , বাঁচলেম!’
শুনে
এ এক আজীব বাৎ
এ এক অবিনশ্বর
সত্য, মনে হলো।
শ্বশ্রুঠাকুরানী
এলো, বললো;
বলেছিলেম না?
প্রেম কর, প্রেম কর, প্রেম কর
বলেছিলেম না?
এ বুড়োকে বিয়ে কর,
চাকরি পেয়ে
যাবি, অন হিউম্যানেটেরিয়ান, নাকি… কী বলে?
কমপ্যাশনেট
গ্রাউন্ডস?
পশ্চাদ্ভাবন
করে লাভ নেই।
বাইশ বছরের
সুধন্যা ছাপ্পান্ন বছরের বুড়োকে
প্রেম করে বিয়ে
করেছিলো শুধু কি এ কারণেই
আমি আগন্তুক
স্বর্ণরথকে ফিরিয়ে দিয়ে
বাড়িরই বেলগাছে
ব্রম্ভদত্যি হয়ে বসে
পা দোলালেম
পা দোলালেম, কান মললেম, কান মললেম
পরিশ্রুত সারসের
মতো শীর্ষাসনে অতি দীর্ঘকালে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন